বুধবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

দৃশ্যমান হচ্ছে মেট্রোরেল

নিজামুল হক বিপুল

দৃশ্যমান হচ্ছে মেট্রোরেল

রাজধানী ঢাকাকে যানজটমুক্ত করতে এবং নগরবাসীর সময় বাঁচাতে স্বপ্নের মেট্রোরেল চালুর কাজ চলছে। সরকার ২০১৯ সালের মধ্যেই এমআরটি লাইন-৬ এর একাংশের কাজ শেষ করতে চায়। উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্যে এখন জোরেশোরে কাজ চলছে। সরকারের ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের আওতাভুক্ত এ মেট্রোরেল আগামী মার্চের মধ্যেই দৃশ্যমান হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আগারগাঁও থেকে মিরপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্পের দৃশ্যমান কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। রোকেয়া সরণির পরিকল্পনা কমিশনের কাছ থেকে মিরপুর পর্যন্ত সড়কের মাঝ বরাবর ব্যারিকেড দিয়ে এমআরটি প্রকল্পের কাজ চলছে দিনে-রাতে। সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর থেকে ইতিমধ্যে এ প্রকল্পের কাজে সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ২৫ শতাংশ।  প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৬ জুন মেট্রোরেল প্রকল্পের লাইন-৬ এর নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। তারপর থেকে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে ধীরে ধীরে সামনের দিকে অগ্রসর হয় এমআরটি প্রকল্পের কাজ। প্রথম ধাপে উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প থেকে মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত এ প্রকল্পের মাটি পরীক্ষার কাজ হয়। এরপর মোট ছয়টি প্যাকেজে আটটি দরপত্রের মাধ্যমে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কাজে হাত দেয় সরকার। উত্তরা তৃতীয় প্রকল্পের মেট্রোরেল ডিপো নির্মাণের জন্য দুটি প্যাকেজ (১ ও ২), উত্তরা নর্থ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভায়াডাক্ট ও ৯টি স্টেশন নির্মাণের জন্য দুটি প্যাকেজ (৩ ও ৪) এবং রোলিং স্টক (রেল কোচ) ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহে একটি প্যাকেজ (৮) এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। বাকি তিনটি প্যাকেজের মধ্যে প্যাকেজ-৫, ৬ ও ৭ এর বিপরীতে ঠিকাদার নিয়োগের মূল্যায়ন কাজ চলছে। আগামী বছরের মার্চের মধ্যে এ প্যাকেজগুলোর বিপরীতে ঠিকাদার নিয়োগ সম্পন্ন হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) দেবে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা। আর সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন হচ্ছে পাঁচ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। প্রায় ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল প্রকল্পে থাকবে ১৬টি স্টেশন। ইতিমধ্যে এগুলোর নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে। উত্তরা তৃতীয় ফেইজ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত এ প্রকল্পের সম্পূর্ণ কাজ ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত নকশা অনুযায়ী প্রায় ১৮০ মিটার লম্বা হবে প্রতিটি স্টেশন। এসব স্টেশন নির্মাণ করা হবে প্রায় দোতলা সমান উচ্চতায়। নিচতলায় হবে টিকিট ক্রয় ও স্বয়ংক্রিয় প্রবেশ পথ। স্টেশনের দুই পাশ থেকে যাত্রীরা আসা-যাওয়া করতে পারবে। মেট্রোরেলের ১৬টি স্টেশন হবে যথাক্রমে— উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় ও মতিঝিল। সূত্র জানায়, মেট্রোরেলে মোট ২৮ জোড়া ট্রেন থাকবে। প্রতি ট্রেনে থাকবে ছয়টি করে কোচ বা বগি। এগুলো চলাচল করবে রাজধানীর উত্তরা তৃতীয় ফেইজ থেকে মিরপুর হয়ে ফার্মগেট, শাহবাগ, দোয়েল চত্বর হয়ে মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলে পৌঁছতে সময় লাগবে প্রায় ৪০ মিনিট। আর প্রতি চার মিনিট পরপর ১৮০০ যাত্রী নিয়ে চলবে মেট্রোরেল। ঘণ্টায় প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী চলাচল করবে এ পরিবহনে। এদিকে সরেজমিন দেখা গেছে, এমআরটি লাইন-৬ এর প্যাকেজ নম্বর সিপি-৫ এবং সিপি-৬ এর আওতাধীন আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৭টি মেট্রোরেল স্টেশন (যথা-বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় ও মতিঝিল) এলাকা এবং ভায়াডাক্ট এলাকা হতে ইউটিলিটি স্থানান্তরের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ কার্যক্রমের আওতায় চলতি শুষ্ক মৌসুমের মধ্যেই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি), ঢাকা ওয়াসা, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড, গ্রামীণফোন, সামিট টেলিকমিউনিকেশনস লিমিটেড এবং ফাইবার হোম তাদের ইউটিলিটি স্থানান্তর করবে। ইতিমধ্যে এসব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ইউটিলিটি স্থানান্তর ও পুনর্বাসন ব্যয় অগ্রিম প্রদান করা হয়েছে, যাতে নির্ধারিত সময়ে স্থানান্তর ও পুনর্বাসন কাজ সমাপ্ত করা সম্ভব হয়। উল্লেখ্য, ২০১২ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) মেট্রোরেল প্রকল্পের  অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর ভূমি অধিগ্রহণের বিশেষ বিধান রেখে গত ২৮ এপ্রিল মেট্রোরেল সংক্রান্ত আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।

সর্বশেষ খবর