শনিবার, ১২ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

রুপালি বিপ্লব দেশি মাছে

ঝর্ণা মনি

রুপালি বিপ্লব দেশি মাছে

‘মাছে-ভাতে বাঙালি।’ জন্মদিনের আয়োজন থেকে শুরু করে বিয়ে— বাঙালির প্রতিটি অনুষ্ঠানেই মাছের একাধিক পদের উপস্থিতিই প্রবাদটির যথার্থতা প্রমাণ করে। এমন মত্স্যপ্রিয় বাঙালির সুদিন ফিরে আসছে আবার। মৎস্য অধিদফতরের উদ্যোগে মুক্ত জলাশয় আর ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা লাখ লাখ পুকুরে মাছের ব্যাপক চাষের কারণে দেশে ঘটেছে রুপালি বিপ্লব। চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চাষ হচ্ছে দেশীয় মাছের। কৃত্রিম প্রজনন ও চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে বিপন্ন ও বিলুপ্তপ্রায় ১৭টি দেশি প্রজাতির মাছকে বাজারে ফিরিয়ে এনেছে বাংলাদেশ মত্স্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)। এ ছাড়া মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণে ৫৭টি প্রযুক্তিরও উদ্ভাবন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। মৎস্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, মাছ চাষে দেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। তার পরও উদ্বৃত্ত বাড়াতে মত্স্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ও অধিদফতর যৌথভাবে কাজ করছে। বিবিএসের সর্বশেষ অর্থনৈতিক শুমারি (২০১৩) অনুযায়ী, দেশে বছরে গড়ে মাছের বার্ষিক উৎপাদন সাড়ে ৩৫ লাখ টন। যার বাজারমূল্য প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে চাষ করা মাছের পরিমাণ প্রায় ২০ লাখ টন। তথ্যমতে, বিএফআরআই ১৬ শতাংশ অধিক উৎপাদনশীল রুই জাতীয় মাছের নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে। এ ছাড়া দেশীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে চাষ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক ৫৭টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। জানতে চাইলে মত্স্য অধিদফতরের

উপপরিচালক (মৎস্য চাষ) ড. মো. জিল্লুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মাত্স্যবিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত উন্নত মাছের জাত এবং তা দ্রুত সম্প্রসারণের ফলে মাছের উৎপাদন বেড়েছে। অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে মত্স্য চাষ ও ব্যবস্থাপনা একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যমতে, মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চতুর্থ। ২০২২ সালে বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকার করবে বাংলাদেশ। গত ১০ বছরে মাছের উৎপাদন প্রায় ৫৫ শতাংশ বেড়েছে। আর রপ্তানি বেড়েছে ১৫০ গুণ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মধ্যেই বাংলাদেশ নিজস্ব চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত করতে পারবে বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন মৎস্য অধিদফতরের প্রধান মত্স্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষ্ণেন্দু সাহা।

চাষের আওতায় বিলুপ্তপ্রায় ১৭ দেশি প্রজাতির মাছ : আশির দশকে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত উন্নত জাতের পাঙ্গাশ, রুই, কাতল, তেলাপিয়া চাষ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। কিন্তু চাষের মাছ বাড়লেও প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে বিলুপ্ত হতে চলেছে শখানেক প্রজাতির দেশি মাছ। হুমকিতে পড়েছে ৫৪ প্রজাতির দেশি মাছ। এর মধ্যে ২৮ প্রজাতির মাছ বিপন্ন বলে চিহ্নিত করেছে মৎস্য অধিদফতর। মহাবিপন্নের তালিকায় রয়েছে ১২ প্রজাতির মাছ। জানা গেছে, দেশি প্রজাতির ছোট মাছের প্রজাতি সংরক্ষণ, প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির জন্য ৩৮টি জেলার ৭৫টি উপজেলার ১৩৬টি প্রাকৃতিক জলাশয় পুনঃখনন করা হয়েছে। এসব জলাশয়ে পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে ১৫৪ টন। ৫৭টি সরকারি মত্স্যবীজ উৎপাদন খামারে দেশি প্রজাতির ছোট মাছের কৃত্রিম প্রজননের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশি প্রজাতির মাছ চাষ ও ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ৬ হাজার ৪৬৬ জন চাষিকে। এ ব্যাপারে কৃষ্ণেন্দু সাহা বলেন, মৎস্য অধিদফতর গত পাঁচ বছরে সারা দেশে বিভিন্ন নদী ও মুক্ত জলাশয়ে ৫৫৪টি মৎস্য অভয়াশ্রম তৈরি করেছে। এর ফলে বিলুপ্তপ্রায়, বিপন্ন এবং দুর্লভ প্রজাতির মাছ যেমন— একঠোঁঠ, টেরিপুঁটি, মেনি, রানী, গোড়া গুতুম, চিতল, ফলি, মধু পাবদা, বামোস, কালিবাউস, আইড়, টেংরা, সুরপুঁটি, রিটা, কাজলী, চাকা, গজার, বাইনের উৎপাদন বেড়েছে। এ ছাড়া শোল, মাগুর, শিং, কই, পুঁটি, বাইন, টাকি, মলা, গোলসা, বোয়াল মাছের পোনা ছাড়ার ফলে এদের উৎপাদনও বেড়েছে।

২০২২ সালে মাছ উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম হবে বাংলাদেশ : বাংলাদেশের পরিবেশ মিঠাপানির মাছ চাষের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) প্রতিবেদন অনুযায়ী, উন্মুক্ত জলাশয়ে মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ রয়েছে চতুর্থ স্থানে। আর অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে এই অবস্থান পঞ্চম স্থানে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সাল নাগাদ বিশ্বে যে চারটি দেশ মাছ চাষে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করবে, তার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। এরপর থাকবে থাইল্যান্ড, ভারত, চীন ও মিয়ানমার। এ ব্যাপারে ড. মো. জিল্লুর রহমান বলেন, সরকারের রূপকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছি আমরা। আর এর মাধ্যমেই দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে মর্যাদার আসনে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর