২০০৯ সালের মাঝামাঝি চালু হয় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। যাত্রীর আগ্রহ ও চালকের সুবিধায় উঠে যায় প্যাডেল রিকশা। বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ গড়ে না ওঠায় অনেকে এ অটোরিকশা চালানো পেশা হিসেবে বেছে নেন। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে সংখ্যা। এখন এ ব্যাটারি রিকশা যানজটের অন্যতম কারণ। শহরের অলিগলিতে তীব্র যানজটের পাশাপাশি বেড়েছে বিদ্যুতের ব্যবহার। রাজশাহী জেলায় ঠিক কতসংখ্যক ইজিবাইক ও অটোরিকশা চলাচল করে তার সঠিক পরিসংখান নেই। তবে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নগরীতে ১০ হাজার ইজিবাইক ও ৬ হাজার অটোরিকশা চলাচলের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু রাসিকের দেওয়া পরিসংখানে একমত নন খোদ চালকরাই। জেলার নয়টি উপজেলায় আরও ৫০ হাজার ইজিবাইক ও অটোরিকশা চলাচল করে। তবে বিপুলসংখ্যক এ গাড়ির অনুমোদন না থাকায় সঠিক সংখ্যা জানা সম্ভব হয়নি। গড়ে প্রতি উপজেলায় ৭ হাজার ৫০০ ইজিবাইক ও অটোরিকশা চলাচল করে। উপজেলা পর্যায়ের এ গাড়ির চালকরা জীবিকার তাগিদে শহরে চলে আসেন। তাই উপজেলার সড়কগুলোয় এ গাড়ি তুলনামূলক কম। ৯৬ বর্গকিলোমিটারের রাজশাহী মহানগরীতে প্রায় ৬০ হাজার ইজিবাইক ও অটোরিকশা চলাচল করে। যদিও সিটি করপোরেশনের রেজিস্ট্রেশন আছে মাত্র ১৬ হাজার। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘রাজশাহী মহানগরীতে ইজিবাইক (অটো) আছে ১০ হাজার আর অটোরিকশা ৬ হাজার। এ-সংখ্যক অটো ও অটোরিকশা চালানোর লাইসেন্স (অনুমোদন) দিয়েছে সিটি করপোরেশন। এ ছাড়া সিটি করপোরেশন এলাকায় তিন শর মতো গ্যারেজ আছে।’ নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই পিএলসির (নেসকো) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুর রশিদ বলেন, ‘একটা অটো চার্জ দিতে ১ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ লাগে। এটা ব্যাটারি নতুন অবস্থায়। তবে পুরোনো ব্যাটারিতে বেশি বিদ্যুৎ লাগে। সে হিসেবে রাজশাহীর চাহিদার বড় অংশ এসব অটোরিকশা চার্জে ব্যবহার হচ্ছে।’ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় কতটি নিবন্ধিত অটোরিকশা চলাচল করে তার তালিকা নেই পাঁচ উপজেলা প্রশাসনের কাছে। জেলার তিন পৌরসভায় এখনো শুরু হয়নি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার নিবন্ধন কার্যক্রম। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার তথ্যমতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধিত অটোরিকশা ৯১ এবং রিকশা বা ভ্যান ৭৩টি। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে সাড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার অটোরিকশা চলাচল করে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার হাওলাদার ফজলুর রহমান বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বৃদ্ধির কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে।’ সিরাজগঞ্জ পৌরসভার লাইসেন্স শাখার পরিদর্শক মো. মারুফ জানান, বর্তমানে সিরাজগঞ্জে ৪ হাজার ৭০৩টি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। নাটোর পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর চলতি অর্থবছরে অটোরিকশার নিবন্ধন কার্যক্রম চালু হয়েছে। গত তিন মাসে ৩৫৬টি রিকশা নিবন্ধিত হয়েছে। পৌরসভার লক্ষ্য চলতি অর্থবছরে ৩ হাজার অটোরিকশা নিবন্ধনের আওতায় আনা। নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর জেনারেল ম্যানেজার ফখরুল আলম জানান, সমিতির আওতায় দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা ১২০ থেকে ১৩০ মেগাওয়াট। এর একটি বড় অংশ ব্যয় হচ্ছে অটোরিকশা চার্জে। নওগাঁ পৌরসভার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের যানবাহন শাখার তথ্যানুযায়ী, পৌরসভায় রেজিস্ট্রেশনকৃত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা ১ হাজার ৫০০ এবং ব্যাটারিচালিত তিন চাকার ইজিবাইকের সংখ্যা ৬৮৫টি। শহরে প্রতিদিন ৬ হাজারের বেশি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচল করে। যার মধ্যে ২ হাজারের বেশি অটোরিকশা এবং দেড় হাজারের বেশি ইজিবাইকের নিবন্ধন নেই। জয়পুরহাট জেলা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের তথ্যানুসারে, শুধু জেলা শহরেই টাউন সার্ভিসের অটোরিকশার সংখ্যা প্রায় ৮০০ এবং শহরের বাইরে চলাচলকারী বড় অটোরিকশার সংখ্যা প্রায় ৫০০। এর বেশির ভাগেরই কোনো নিবন্ধন নেই। জয়পুরহাট রিকশা ও ভ্যানচালক ইউনিয়নের তথ্য আরও উদ্বেগজনক। তাদের মতে জেলার পাঁচ উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৬ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যান চলাচল করছে। এর মধ্যে জেলা শহরেই আছে প্রায় ২ হাজার রিকশা এবং জেলাজুড়ে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ব্যাটারিচালিত ভ্যান। জয়পুরহাট জেলা ট্রাফিকের ইন্সপেক্টর জামিরুল ইসলাম বলেন, ‘শহরে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটো বেড়েছে। দিনদিন যানজট বাড়ছে। আবার শহরের প্রধান সড়কের মাঝে ঘন ঘন ইউটার্ন দেওয়া হয়েছে। এতে গাড়িগুলো পারাপার হচ্ছে। এসব রিকশা ও অটো যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ে। আমাদের জনবলও কম, গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছাড়া সব জায়গায় ট্রাফিক পুলিশ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’
পাবনায় অটোরিকশার দাপটে যানজটে নাজেহাল জেলাবাসী। পাবনা পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাবনা শহরাঞ্চলে বৈধ অটোরিকশা প্রায় ৩ হাজার ৫০০। আর অবৈধ অটোরিকশা ৮ হাজারের মতো। অন্যদিকে পাবনা জেলা রিকশা, অটোবাইক মালিক সমিতির কার্যালয় সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, জেলার নয়টি উপজেলায় বৈধ-অবৈধ মিলে ৫০ হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আছে। আর সিএনজিচালিত অটোরিকশা আছে ৮ হাজার ১০টির মতো। বেশির ভাগই অবৈধ। পাবনা জেলা রিকশা, অটোবাইক মালিক সমিতির আহ্বায়ক পাভেল হাসান জাহাঙ্গীর বলেন, ‘পাবনার সব উপজেলা মিলে ৫০ হাজারের বেশি অটোরিকশা আছে।’ পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর জেনারেল ম্যানেজার আহমাদ আল জাবির বলেন, ‘প্রতিদিন এসব এলাকায় অটোরিকশার জন্য আধা মেগাওয়াট বাড়তি বিদ্যুৎ খরচ হয়।’