এবার প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) খরায় ভুগছে শেয়ারবাজার। ২০২৩ সালের পর কোনো কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য অনুমোদন পায়নি। সর্বশেষ ২০২৩ সালের নভেম্বরে এনআরবি ব্যাংক তালিকাভুক্তির অনুমোদন পায়। এর পরে তালিকাভুক্তির জন্য কোনো কোম্পানির আইপিও আবেদনই করেনি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে। এতে বাজারের চাহিদা সরবরাহে বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারে নতুন করে বিনিয়োগে কেউ আস্থা পাচ্ছেন না। দীর্ঘদিন ধরে বাজারে আইপিও নিয়ে যে অনিয়ম হয়েছে তার কারণে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। আস্থাহীনতা কাটাতে বর্তমান কমিশন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের আগস্টের পর নতুন কমিশন গঠন করা হয়। অতীতের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের ঘোষণা দেয় বিএসইসি। একই সঙ্গে বিএসইসির কার্যক্রম, আইপিও অনুমোদনের প্রক্রিয়াগুলো ঢেলে সাজানো ও শেয়ারবাজার সংস্কারে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে নানা সংস্কারের কথা বলা হলেও শেয়ারবাজারে কোনো উন্নতি দেখা যায়নি। বর্তমান কমিশন গঠনের পর বিভিন্ন বৃহৎ কোম্পানি ও বহুজাতিক কিছু কোম্পানির সঙ্গে আইপিও এবং বিনিয়োগ বিষয়ে একাধিক বৈঠক করে কমিশন। তবে ওই বৈঠকের বাইরে কিছুই হয়নি। এমনকি সরকারি লাভজনক কয়েকটি কোম্পানির আইপিও বাজারে তালিকাভুক্তির কথাও জানানো হয়। তবে তার বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। গত বছরের আগস্টের পরে শেয়ারবাজারে কোনো আইপিও আসেনি। ২০২৩ সালেও চারটি কোম্পানি আইপিওতে আসে। ২০২০ ও ২০২১ সাল পরপর দুই বছর শেয়ারবাজার থেকে আইপিওর মাধ্যমে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ উত্তোলন হয়। ২০২৪ সালে আইপিওতে শেয়ার বিক্রি করা চার কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- এনআরবি ব্যাংক, বেস্ট হোল্ডিং, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ ও টেকনো ড্রাগস। এই কোম্পানিগুলো ২০২৩ সালে বিএসইসির অনুমোদন পায়। এর মধ্যে এনআরবি ব্যাংক আইপিওতে শেয়ার ছেড়ে ১০০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। বাকি তিন কোম্পানির মধ্যে বেস্ট হোল্ডিং ৩৫০ কোটি, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ ৯৫ কোটি ও টেকনো ড্রাগস ১০০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। অর্থাৎ চারটি কোম্পানি আইপিওতে শেয়ার ছেড়ে মোট ৬৪৫ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। ২০২৩ সালে তিনটি কোম্পানি এবং একটি মিউচুয়াল ফান্ড আইপিওতে আসে। এর মধ্যে মিডল্যান্ড ব্যাংক ৭০ কোটি, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১৬ কোটি, শিকদার ইন্স্যুরেন্স ১৬ কোটি এবং ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ড ১০০ কোটি টাকা উত্তোলন করে। চারটি প্রতিষ্ঠানের উত্তোলন করা অর্থের পরিমাণ ছিল ২০২ কোটি টাকা। জানতে চাইলে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান ও শেয়ারবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অতীতে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে ওপর মহল থেকে যথেষ্ট চেষ্টা করা হয়নি। একটা বিষয়ে এখানে কোনো প্রণোদনা নেই। তাহলে ভালো কোম্পানি আসবে কেন? এটা নিয়ে এখন কাজ হচ্ছে। টাস্কফোর্স গঠন হয়েছে, ওরা এটা দেখবে। প্রতি মাসে না হলেও বছরে ৪ থেকে ৫টি ভালো কোম্পানির আইপিও থাকতে হবে। নইলে শেয়ারবাজারে কেউ আসবে না।
জানতে চাইলে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। আমরা এখন ভীত হয়ে পড়েছি। যারা বাজার থেকে মূলধন উত্তোলন করবে তারাও কোনো আশা দেখছে না। ফলে আমাদের আইপিও ছাড়া শেয়ারবাজার হয়ে গেছে। আইপিও ছাড়া শেয়ারবাজার কোনো শেয়ারবাজার নয়। আইপিও আনতেই হবে, এর বিকল্প কোনো চিন্তা করা যায় না। আমরা মনে করি আইপিওর যে প্রক্রিয়া, সেটি যারা আইপিওতে আসতে চায় তাদের জন্য সহনীয় নয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত সমস্যা কোথায় সেটা বের করে দ্রুত তার সমাধান করা।