এ এমন এক সময় যখন রাজনৈতিক দিক দিয়ে মানুষের মনে কিছুটা অনিশ্চয়তা থাকলেও অর্থনীতির বেশির ভাগ সূচকে ইতিবাচক লক্ষণ প্রতিফলিত হচ্ছে। রাজনীতি ও অর্থনীতির এ বৈপরীত্যের মধ্যে বর্ষীয়ান রাজনীতিক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটে একরাশ স্বপ্ন ছড়িয়ে দিলেন। যে স্বপ্ন সুন্দর, সচ্ছল ও গতিময় জীবনের ব্যাপারে আশাবাদী হওয়ার প্রণোদনা দেয়।
যেখানে রয়েছে দারিদ্র্য দূর করে দেশকে মধ্যম আয়ে পৌঁছানোর স্বপ্ন; বিনিয়োগ স্থবিরতা কাটিয়ে কর্মসংস্থান তৈরির স্বপ্ন; মাথাপিছু আয় বাড়িয়ে জনগণের জীবনমান উন্নয়নের স্বপ্ন এবং ৬ শতাংশের ফাঁদ থেকে বেরিয়ে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের স্বপ্ন; সেখানে আশাবাদী না হয়ে উপায়ও নেই। আশাবাদী হতে বাধা নেই, বাধা নেই স্বপ্ন দেখতেও, তবে এসব স্বপ্ন ও প্রত্যাশার বাস্তবায়নে বড় ধরনের বাধা কিন্তু রয়েই গেছে। প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কাটিয়ে একটি বিনিয়োগমুখী পরিবেশ তৈরি করা। এ ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টায় জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের জন্য প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ শতাংশ। আর মূল্যস্ফীতি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। আগের বাজেটে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হলেও বছর শেষে তা ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ হবে বলে মনে করছে সরকার। সরকারের ধারণা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ না হওয়াতেই এবার প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাচ্ছে না। রাজনীতি ও বিনিয়োগ- এ দুই ইস্যুতে অনিশ্চয়তা এখনো রয়ে গেছে। বিষয়টি অর্থমন্ত্রী নিজেও বুঝতে পেরেছেন। বিনিয়োগমন্দা কাটানোর ব্যাপারে বাজেট বক্তৃতায় তিনি বেশকিছু কৌশলও তুলে ধরেছেন। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অনুকূল সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বর্ধিত সরকারি বিনিয়োগ সত্ত্বেও মূলত বেসরকারি বিনিয়োগের ধীরগতি উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে বাধা হিসেবে কাজ করছে। এ বাধা উত্তরণে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, যোগাযোগ অবকাঠামো, বন্দর উন্নয়ন, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার যেসব কার্যক্রম আমরা বাস্তবায়ন করতে শুরু করেছি তাতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড তথা অভ্যন্তরীণ চাহিদা সচল থাকবে।’ চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণে অর্থমন্ত্রী কৃষি ও শিল্প খাতে প্রণোদনার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ঋণ সরবরাহ, সুদের হার কমানো এবং মুদ্রানীতির মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অনুকূল অর্থাৎ বিনিয়োগমুখী পরিবেশ তৈরিরও ঘোষণা দিয়েছেন। মধ্যমেয়াদে বিনিয়োগের একটি লক্ষ্যমাত্রাও ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, সরকারি বিনিয়োগ ৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৬ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হলেও ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ ২১ থেকে ২২ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। ২০১৬-১৮ সালের মধ্যে ব্যক্তি বিনিয়োগ ২৪ শতাংশে উন্নীত করার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। আর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ব্যাপারে প্রবল আশাবাদের প্রকাশ ঘটিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আশা করা যায়, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশের বৃহত্তর স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর শুভবুদ্ধির উন্মেষ ঘটবে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে, এতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন।’ মোটা দাগে বলতে গেলে নতুন বাজেট নিয়ে এই হচ্ছে অর্থমন্ত্রীর স্বপ্ন আর এমনটিই তার আশাবাদ। কিন্তু স্বপ্ন ও আশার রং তো ‘সাদা’ হতে পারে না, স্বপ্ন হয় রঙিন। সে কারণে অর্থমন্ত্রীর বাজেট ঘোষণার বইয়ের মোড়কও বদলে গেছে। সাদার বদলে সবুজ মোড়কে সাজানো অর্থমন্ত্রীর এবারের বাজেট বক্তৃতার বই যার শিরোনাম ‘সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ : উচ্চ প্রবৃদ্ধির পথ রচনা’। গতকাল বিকাল ৩ টা ৩৫ মিনিটে জাতীয় সংসদে সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত টানা সপ্তমবারের মতো এবং নিজের নবম বাজেট বক্তৃতা শুরু করেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীসহ সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দলের সদস্য এবার দ্বিতীয়বারের মতো উপস্থিত ছিলেন। বিকাল সাড়ে ৩টার কিছু পর সাদা রঙের সুতির পাঞ্জাবির ওপর মুজিবকোট ও কালো বেল্টের স্যান্ডেল-শু পরিহিত হাস্যোজ্জ্বল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কালো ব্রিফকেস হাতে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংসদের অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন। এ সময় সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়িয়ে তাদের স্বাগত জানান। বাজেট পেশ করার আগে বিধি অনুযায়ী অর্থমন্ত্রী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে অনুস্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এর আগে জাতীয় সংসদের কেবিনেট কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে বাজেট অনুমোদন করা হয়।
রাত ৮টা ২৫ মিনিটে বাজেট বক্তৃতা শেষে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে ধন্যবাদ জানান। এরপর অর্থমন্ত্রী সংসদে অর্থবিল, ২০১৫ উত্থাপন করেন। সরকারের আর্থিক প্রস্তাবাবলি কার্যকরণ এবং কিছু আইন সংশোধনের লক্ষ্যে বিলটি উত্থাপন করা হয়। বিলটি ৩০ জুনের মধ্যে পাস হবে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য অনুমোদিত বাজেটের আকার ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৭ দশমিক ২ শতাংশ। এর মধ্যে অনুন্নয়নসহ অন্যান্য খাতে মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ৯৮ হাজার ১০০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১১ দশমিক ৫ শতাংশ। আর উন্নয়ন ব্যয় বা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ৯৭ হাজার কোটি টাকা। অবশ্য স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার উন্নয়ন ব্যয় ৩ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা বিবেচনায় নিলে সামগ্রিকভাবে এডিপির আকার দাঁড়ায় ১ লাখ ৯৯৭ কোটি টাকা। সে ক্ষেত্রে মোট বাজেটের আকার দাঁড়াবে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ঘোষিত বাজেটের আকার ছিল ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। বছর শেষে চলতি অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটের আকার দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে আগামী অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটের পরিমাণ ৫৭ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা বেশি।
ঘোষিত বাজেটে মোট রাজস্ব প্রাক্কলন করা হয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে, যা জিডিপির ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। এনবিআর-বহির্ভূত কর ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া করবহির্ভূত খাত থেকে আয় ধরা হয়েছে ২৬ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। রাজস্ব বাদে নতুন বাজেটে ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে ৮৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ শতাংশ। বিশাল এ ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক সহায়তা বাবদ পাওয়া যাবে ৩০ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে অর্থায়ন ধরা হয়েছে ৫৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৩৮ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা, যা জিডিপির ২ দশমিক ২ শতাংশ। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক-বহির্ভূত খাত থেকে নেওয়া হবে ১৮ হাজার কোটি টাকা। নতুন বাজেটে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলিয়ে সর্বোচ্চ বরাদ্দ গেছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে। এ খাতের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে মোট বরাদ্দের পরিমাণ ৩৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। এরপর স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে মোট বরাদ্দ ২০ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা। তৃতীয় স্থানে রয়েছে সামগ্রিক কৃষি। কৃষি, মৎস্য, পরিবেশ ও বন, ভূমি এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় মিলিয়ে এ খাতে বরাদ্দ ১৯ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া খাতভিত্তিক বরাদ্দের দিক থেকে সর্বোচ্চ বরাদ্দ গেছে জনপ্রশাসনে। এ খাতে মোট বাজেটের ১৯ দশমিক ২ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ গেছে ঋণের সুদ বাবদ যা মোট বাজেটের প্রায় ১১ দশমিক ৯ শতাংশ। এরপর যথাক্রমে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে ১১ দশমিক ৬ শতাংশ, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ৭ দশমিক ১ শতাংশ, কৃষিতে ৬ দমমিক ৮ শতাংশ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ৬ দমমিক ৩ শতাংশ এবং প্রতিরক্ষায় বাজেটের ৬ দমমিক ২ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবারের বাজেটে বেশকিছু নতুন উদ্যোগ রয়েছে। এবারই প্রথম জেন্ডার বাজেট থেকে পৃথক করে শিশু বাজেট ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। শিশুদের জন্য প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। দেশে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান তৈরি করতে দেশে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিতে কর্মরত বিদেশিদের ওপর করারোপ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এ ধরনের কর না দিলে কোম্পানিগুলোকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।
ঘোষিত বাজেটে পদ্মা সেতুতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭ হাজার কোটি টাকা। বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের মধ্যে দেশের বৃহত্তম এ প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দরসহ সরকারের আট অগ্রাধিকার প্রকল্প দ্রুত সময়ে বাস্তবায়নের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বাজেটে। নতুন বাজেটে পাবলিক পার্টনারশিপ (পিপিপি) তহবিল ও রপ্তানি সহায়তা বাবদ ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জ্বালানির দাম কমে যাওয়ায় বাজেটে এ খাতে ভর্তুকি স্পষ্ট করা হয়নি। তবে কৃষি খাতে আগের বাজেটের সমান ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি রাখা হয়েছে।
রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রস্তাবিত বাজেটে কর ও ভ্যাটের আওতা বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে কিছু নতুন পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মধ্যবিত্ত ও নিুবিত্তের ওপর করের বোঝা বাড়বে। অন্যদিকে নতুন বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে উদ্যোক্তাদের বেশকিছু সুবিধা ও ছাড় দেওয়া হলেও বাণিজ্য উদারীকরণের লক্ষ্যে আমদানি শুল্ক ও সম্পূরক শুল্কের হার কমানো হয়েছে। ২০১৯ সালের মধ্যে ৩০ লাখ ব্যক্তিকে করের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্যক্তি খাতের করমুক্ত আয়সীমা ২ লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। ন্যূনতম কর ৩ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার টাকা করা হয়েছে। মোবাইল ফোন ব্যবহারের ওপর ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে তবে সিমের ওপর কর কমানো হয়েছে। ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। পুঁজিবাজারে প্রণোদনায় বেশকিছু পদক্ষেপ রয়েছে বাজেটে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট হার কমানো হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ আয়ের করমুক্ত সীমা বাড়ানোসহ বিনিয়োগের ওপর উৎসে কর প্রত্যাহার করা হয়েছে। দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকের ওপর কর বাড়ানো হয়েছে। বর্তমান দশমিক ৩০ শতাংশ থেকে উৎসে কর বাড়িয়ে ১ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। ইংরেজি মাধ্যমের পাশাপাশি এবার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে করের আওতায় আনা হয়েছে। ফলে শিক্ষায় ব্যয় বাড়বে। ব্যয় বাড়বে অনলাইন ও সুপার শপে কেনাকাটায়ও। অনলাইনে বিক্রিতে ৪ শতাংশ মূসক প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বর্ধিত বেতন-ভাতা দিতে নতুন বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উৎসব বোনাস ও ভাতার ওপর করারোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। সরকারি চাকুরেদের কল্যাণে ‘সমৃদ্ধির সোপান’ নামে একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ঘোষণা রয়েছে বাজেটে।
সারা দেশে আরও ৩৮ হাজার প্লট ও ৭০ হাজার ফ্ল্যাট : সবার জন্য বাসস্থান নিশ্চিতকরণ এবং পরিকল্পিত নগরায়ণ প্রাধান্য পেয়েছে প্রস্তাবিত নতুন বাজেটে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, দেশে আবাসন সুবিধা সম্প্রসারণ করে রাজধানীসহ সারা দেশে ৩৮ হাজার ২৪৪টি প্লট ও ৭০ হাজার ৩৭৭টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, গ্রামীণ দরিদ্র জনগণকে গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদানের জন্য গৃহায়ণ তহবিল পরিচালনা, কর্মরত শ্রমিকদের আবাসনের জন্য হোস্টেল/ডরমিটরি নির্মাণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। মহিলা শ্রমিকদের আবাসন সুবিধা প্রদানের জন্য আশুলিয়ায় ৭৪৪ জনের বসবাস উপযোগী মহিলা হোস্টেল নির্মাণ করা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী আরও জানান, ঢাকা ও খুলনা মহানগরীর ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান, সিলেট ও বরিশাল বিভাগীয় শহরের স্ট্রাকচার প্ল্যান, খুলনা মহানগরীকে মংলা পর্যন্ত সম্প্রসারিত স্ট্রাকচার প্ল্যান, চট্টগ্রাম মহানগরীর স্ট্রাকচার প্ল্যান এবং কক্সবাজার, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন ও মহেশখালী এলাকার পর্যটন শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও ঢাকার বিদ্যমান ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানকে (ড্যাপ) রিভিউ করে আরও বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী করার লক্ষ্যে ড্যাপ (২০১৬-২০৩৫) প্রণয়নের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আরও জানান, রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহর, বিভিন্ন জেলা, উপজেলা পর্যায়ে প্রায় ৪৩ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। সংসদ কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য শেরেবাংলা নগরে বহুতলবিশিষ্ট ৪৪৮টি ফ্ল্যাট এবং সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের জন্য ২০তলা সরকারি বাসভবন নির্মাণের কাজও চলমান রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার আজিমপুর ও মতিঝিল সরকারি কলোনিতে সরকারি কর্মকর্তা/বিচারকদের জন্য এবং বেইলি রোডে মন্ত্রীদের জন্য ২৮টি অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের পরিকল্পনা আছে।