দৈর্ঘ্য ৬০ ফুট, প্রস্থ ২২ ফুট। কাচ দিয়ে ঘেরা ছোট্ট পরিসরের একটি জায়গা। সেখানে আছে অজগর সাপ। কোনোটি খেলা করছে, আবার কোনোটি লেজ গুটিয়ে ঘুমিয়ে আছে। অজগরের বাইরে অন্য প্রজাতির সাপও আছে এই কাচের ঘরে। প্রজাতিভেদে পৃথক খোপ খোপ করে রাখা হয়েছে সাপগুলোকে। আগে অজগর খাঁচায় রাখা হতো, এখন রাখা হচ্ছে কাচের তৈরি বক্সে। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উপায়ে সাপ উৎপাদনের জন্য তৈরি করা হয় এই স্নেক কর্নার। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ রাখা হচ্ছে। বর্তমানে চিড়িয়াখানার এই স্নেক কর্নারে অজগরের বাচ্চা আছে ৩৮টি। তাছাড়া, ইন্দো-চীনা দাঁড়াশ, ইন্ডিয়ান দাঁড়াশ, তামাটে দুধরাজ প্রজাতির সাপও আছে। একই সঙ্গে কয়েক প্রজাতির আট জোড়া সাপ আছে। তাদের জন্য প্রজনন করার মতো পৃথক রুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাপগুলোর জন্য করা হচ্ছে প্রজাতি ভেদে পরিবেশ। কোনটি শুকনো জায়গায়, কোনটি পানিতে থাকতে অভ্যস্ত। তাই সেগুলোর জন্য পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেওয়া হয় খাবার। সংগ্রহ করা হচ্ছে আরও নানা প্রজাতির সাপ।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, সাপ নিয়ে আমাদের দেশের মানুষের একটা ভীতি সেই পুরনো দিন থেকে। অনেকের কাছে সাপ মানেই ভীতিকর একটা প্রাণী। এটা ভুল ধারণা। অথচ এই সাপ পরিবেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী। পরিবেশের সামগ্রিক ভারসাম্য রক্ষায় সাপেরও ভূমিকা আছে। এ বিষয়টি সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে এবং বিভিন্ন প্রজাতির সাপের সঙ্গে মানুষের পরিচয় করতে স্নেক কর্নার করা হয়েছে। চিড়িয়াখানার দর্শনার্থীরা এটি দেখতে পারবেন।
তিনি বলেন, ২০১৯ সাল থেকে গত প্রায় পাঁচ বছরে চিড়িয়াখানায় অজগরের ডিম সংগ্রহ করে কৃত্রিম উপায়ে ইনকিউভেটরের মাধ্যমে ৮০টি অজগরের বাচ্চা ফুটিয়েছি। পরে সেগুলো সীতাকুন্ড ইকোপার্ক এবং লোহাগাড়া চুনতী অভয়ারণ্যে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অন্যান্য সাপের ডিম থেকেও প্রাকৃতিক উপায়ে বাচ্চা না ফুটলে কৃত্রিম উপায়ে ফোটানোর প্রক্রিয়া চলছে। সেগুলোও অজগরের মতো প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা হবে। চিড়িয়াখানার স্নেক কর্নারে সাপ সংগ্রহের কাজ অব্যাহত থাকবে।
চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এটি প্রতিষ্ঠা হয়। তবে ২০১৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ে চিড়িয়াখানার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সদস্য সচিব মোহাম্মদ রুহুল আমিনের উদ্যোগে টিকিট বিক্রির টাকা দিয়ে আমূল পরিবর্তন হয় চিড়িয়াখানার। বর্তমানে এখানে ৭০ প্রজাতির ৬২০টি পশু-পাখি আছে। এর মধ্যে বাঘ, সিংহ, কুমির, জেব্রা, ময়ূর, ভালুক, উটপাখি, ইমু, হরিণ, বানর, গয়াল, অজগর, শিয়াল, সজারু, বিভিন্ন জাতের পাখি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। আছে ৫টি বিরল সাদা বাঘসহ ১৬টি বাঘ ও ৬টি জেব্রা। নির্মাণ করা হয় নান্দনিক সিঁড়ি, পুরাতন খাঁচাগুলো ফেলে দিয়ে বানানো হয়েছে নতুন খাঁচা। কুমিরের খাঁচা সম্প্রসারণ করে করা হয় দ্বিগুণ। ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে প্রধান ফটক। বাড়ানো হয়েছে পশু পাখির সংখ্যা। চিড়িয়াখানার অভ্যন্তরে নির্মিত হয়েছে ৩২ হাজার ১৬৪ বর্গফুট আরসিসি ঢালাইয়ের রাস্তা। পুরো চিড়িয়াখানা সিসি ক্যামেরার আওতায়। রয়েছে বিস্তৃত পরিসরের কিডস জোন। আছে দর্শনার্থীদের জন্য নান্দনিক রূপের বসার স্থান ও পরিচ্ছন্ন শৌচাগার। দর্শনার্থী ফি দিয়ে চিড়িয়াখানার পশু-পাখির খাদ্য জোগান ও নতুন প্রাণী সংগ্রহ করা হয়।