অ্যালেক্স কেয়ারির দারুণ এক ইনিংস নড়বড়ে অবস্থান থেকে অস্ট্রেলিয়াকে এনে দিল লড়াইয়ের পুঁজি। বল হাতে নিজেদের মেলে ধরলেন মিচেল স্টার্ক, অ্যারন হার্ডিরা। তাদের সামনে লড়াই জমাতেই পারলেন না ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। আরেকটি অনায়াস জয়ে সিরিজে আরও এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার জয় ৬৮ রানে। লিডসে শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) ২৭০ রানের পুঁজি গড়ে স্বাগতিকদের ২০২ রানে গুটিয়ে দেয় সফরকারীরা। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে গেল ২-০ ব্যবধানে। এই নিয়ে টানা ১৪ ওয়ানডে জিতল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। গত বছরের অক্টোবরে বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে শুরু হয়েছিল তাদের এই যাত্রা। তার আগের আট ম্যাচের সাতটিই তারা হেরেছিল।
এই সংস্করণে এর চেয়ে বেশি টানা জয়ের রেকর্ডও অস্ট্রেলিয়ার। ২০০৩ সালের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত টানা ২১ ওয়ানডে জিতেছিল রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়া। ২০২৩ সালের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত টানা ১৩ ওয়ানডে জয়ের কীর্তি আছে শ্রীলঙ্কার। ট্রাভিস হেডের অপরাজিত ১৫৪ রানের বিধ্বংসী ইনিংসে প্রথম ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়া জিতেছিল ৭ উইকেটে। অসুস্থতার কারণে ওই ম্যাচে খেলতে না পারা গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, জশ হেইজেলউড ও স্টার্ক ফেরেন দ্বিতীয়টিতে।
তবে ব্যাটিংয়ে একটা পর্যায়ে ২২১ রানেই ৯ উইকেট হারিয়ে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। সেখান থেকে শেষ উইকেটে হেইজেলউডের সঙ্গে ৪৯ রানের জুটিতে দলকে আড়াইশ ছাড়ানো সংগ্রহ এনে দেন কেয়ারি। জুটিতে তিনি একাই করেন ৪১ রান। ৬৭ বলে ৮ চার ও ৩ ছক্কায় ৭৪ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরাও এই কিপার-ব্যাটসম্যান। তার আগে তিনে নেমে ৫৯ বলে ৬০ রান করেন অধিনায়ক মিচেল মার্শ।
বল হাতে অস্ট্রেলিয়ার সফলতম বোলার স্টার্ক। গত বিশ্বকাপ ফাইনালের পর প্রথমবার ওয়ানডে খেলতে নেমে ৫০ রানে ৩ উইকেট নেন গতিময় এই পেসার। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে দুটি করে শিকার ধরেন হার্ডি ও ম্যাক্সওয়েল। হেইজেলউড কিছুটা খরুচে হলেও, তিনিও নেন দুইটি উইকেট। মেঘলা আকাশের নিচে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৬ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন হেড ও ম্যাথু শর্ট। দারুণ কিছু শট খেললেও এবার ইনিংস টেনে নিতে পারেননি হেড (২৭ বলে ২৯)। ৩৬ বলে ২৯ রান করে ফেরেন শর্ট। চারে নেমে স্টিভেন স্মিথ দ্রুতই ফেরেন ম্যাথু পটসের দারুণ এক ইনসুইঙ্গারে বোল্ড হয়ে।
৮৯ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর চতুর্থ উইকেটে ৫৬ রানের জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন মার্শ ও মার্নাস লাবুশেন। ৪৭ বলে ফিফটির পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি মার্শ। প্রথম ম্যাচে অপরাজিত ৭৭ রানের ইনিংস খেলা লাবুশেন এবার করেন ১৯। ম্যাক্সওয়েল যেতে পারেননি দুই অঙ্কে। সপ্তম উইকেটে হার্ডির সঙ্গে ৫৫ রানের জুটি গড়েন কেয়ারি। ব্রাইডন কার্স পরপর দুই বলে ফিরিয়ে দেন হার্ডি (২৩) ও স্টার্ককে। জ্যাম্পাও দ্রুত বিদায় নিলে স্কোর হয়ে যায় ৯ উইকেটে ২২১। এরপর কেয়ারি ও হেইজেলউডের মহামূল্যবান ওই জুটিতে ২৭০ পর্যন্ত যায় অস্ট্রেলিয়া। কার্স ৩ উইকেট নিতে রান দেন ৭৫। ২ উইকেট নেওয়ার পথে প্রথম ইংলিশ স্পিনার হিসেবে ওয়ানডেতে দুইশ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন আদিল রাশিদ।
লক্ষ্য তাড়ায় শুরু থেকেই নিয়মিত উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। ফিল সল্টকে ফিরিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম সাফল্য এনে দেন হেইজেলউড। স্টার্ক পরপর দুই ওভারে বিদায় করেন উইল জ্যাকস ও হ্যারি ব্রুককে। দশম ওভারে পরপর দুই বলে বেন ডাকেট ও লিয়াম লিভিংস্টোনের উইকেট নেন হার্ডি। পাওয়ার প্লেতে ৬৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে একরকম ছিটকে যায় ইংলিশরা। যা একটু লড়াই করতে পারেন কেবল জেমি স্মিথ। পাঁচে নেমে ৬১ বলে ৪৯ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। পরে লোয়ার-অর্ডারের নৈপুণ্যে কোনোমতে দুইশ ছাড়াতে পারে স্বাগতিকরা। চেস্টার-লি-স্ট্রিটে আগামী মঙ্গলবার তৃতীয় ওয়ানডেতে সিরিজ বাঁচানোর লড়াইয়ে নামবে ইংল্যান্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া: ৪৪.৪ ওভারে ২৭০ (শর্ট ২৯, হেড ২৯, মার্শ ৬০, স্মিথ ৪, লাবুশেন ১৯, কেয়ারি ৭৪, ম্যাক্সওয়েল ৭, হার্ডি ২৩, স্টার্ক ০, জ্যাম্পা ৩, হেইজেলউড ৪*; পটস ৭-১-৩০-২, স্টোন ৮.৪-০-৪৬-১, কার্স ১০-০-৭৫-৩, রাশিদ ১০-০-৪২-২, বেথাল ৫-০-৩৩-২, লিভিংস্টোন ২-০-২৩-০, জ্যাকস ২-০-১৯-০)
ইংল্যান্ড: ৪০.২ ওভারে ২০২ (সল্ট ১২, ডাকেট ৩৫, জ্যাকস ০, ব্রুক ৪, স্মিথ ৪৯, লিভিংস্টোন ০, বেথেল ২৫, কার্স ২৬, রাশিদ ২৭, পটস ৭*, স্টোন ১; স্টার্ক ৯.২-০-৫০-৩, হেইজেলউড ৮-০-৫৪-২, হার্ডি ৮-২-২৬-২, জ্যাম্পা ৮-০-৪২-১, ম্যাক্সওয়েল ৬-১-১৫-২, শর্ট ১-০-৮-০)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৬৮ রানে জয়ী
সিরিজ: ৫ ম্যাচের সিরিজে ২-০তে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া
ম্যান অব দা ম্যাচ: অ্যালেক্স কেয়ারি
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ