রাজধানীতে ২০ বছরে বাস্তবায়নযোগ্য কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি) অনুযায়ী নগরীর চারপাশে ৮৫ কিলোমিটার বৃত্তাকার সড়কপথ নির্মাণের পরিকল্পনা নেয় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। গত সরকারের আমলে বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবও পাঠায়। কিন্তু মন্ত্রণালয় নানা জটিলতায় অনুমোদন দেয়নি সেটি। এর মধ্যে সেই প্রকল্পের অংশ হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) পাঁচ কিলোমিটার সড়ক বাস্তবায়নে অনুমোদন দেয় একনেক। ইতোমধ্যে সড়কটি নির্মাণের কাজ চলছে। বাকি ৮০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ এখনো পরিকল্পনায় রয়েছে। ফলে বৃত্তাকার সড়ক নির্মাণে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৮৫ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে মাত্র ৫ কিলোমিটার সড়ক বাস্তবায়ন হচ্ছে। কিন্তু বাকি সড়ক নির্মাণ না হওয়ায় দক্ষিণ সিটির এ প্রকল্পের সুবিধা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, ৮০ কিমি সড়ক নির্মাণ এখনো পরিকল্পনায় রয়েছে। সুতরাং এই ৫ কিমি সড়ক বাস্তবায়ন হলেও কোনো সুবিধা পাবে না নগরবাসী। সূত্র জানায়, বৃত্তাকার ৮৫ কিমি সড়কটি আবদুল্লাহপুর থেকে বিরুলিয়া হয়ে গাবতলী-তেঘুরিয়া হয়ে চাষাঢ়া-ডেমরা হয়ে বেরাইদ-পূর্বাচল হয়ে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত হওয়ার কথা ছিল। প্রকল্পটি মূলত দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথম অংশের অন্তর্ভুক্ত শহরের ২৫ কিলোমিটার রাস্তা বাস্তবায়ন করার কথা ছিল পানি উন্নয়ন বোর্ডের। বাকি ৬০ কিলোমিটার পথ দ্বিতীয় অংশের অন্তর্ভুক্ত। সবশেষ চলতি বছরে মে মাসে পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্পের সারসংক্ষেপ পাঠায় সওজ। পরে পরিকল্পনা কমিশনে পাস হলেও একনেক থেকে ফিরে যায় প্রকল্পটি।
এ বিষয়ে সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সায়েদ আসলাম আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইনার রিং রোড অনেক বড় একটি প্রকল্প। বড় প্রকল্প হওয়ায় এখন সাময়িক স্থগিত রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, বিগত সময়ে এই প্রকল্পটি পিপিপি মাধ্যমে নাকি জিওবি অর্থায়নে করবে এটা নিয়ে দ্বিধা ছিল। যার কারণে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বিগত সরকার। তবে এখনো এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
ডিএসসিসি সূত্র জানায়, ইনার রিং রোড প্রকল্পের আওতায় রায়েরবাজার স্লুইসগেট থেকে লোহার ব্রিজ পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার অংশে ৮ লেন সড়ক নির্মাণ হবে। প্রকল্পটি নাম করা হয়েছে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক সরণি।’ সড়কটির চার লেন এক্সপ্রেসওয়ে এবং বাকি চার লেন সার্ভিস রোড হিসেবে নির্মাণ করা হবে। এই ৫ কিমি সড়কটি বাস্তবায়নে দক্ষিণ সিটি ৯৭ কোটি টাকা অর্থায়ন করবে। বাকি অর্থ সরকার জোগান দেবে। মোট ৯৭৪ কোটি টাকার এই প্রকল্প ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে। এ বিষয়ে ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক বোরহান উদ্দিন বলেন, ইনার সার্কুলার রিং রোডটি পরবর্তী সময়ে রায়েরবাজার স্লুইসগেট থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার করা হবে। সড়কটি দুই ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রথম ধাপটি রায়েরবাজার স্লুইসগেট থেকে লোহার ব্রিজ পর্যন্ত, যা এখন কাজ চলছে। দ্বিতীয় ধাপে লোহার ব্রিজ থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার রাস্তার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হবে। তিনি আরও বলেন, ইনার রিং রোডের বাকি সড়কটি সওজ বাস্তবায়ন করবে। তারা বাস্তবায়ন করলে রিং রোডের সুবিধা পাবে নগরবাসী। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানারসের সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, আরএসটিপি অনুযায়ী ইনার রিং রোডের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ সড়কটির উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন জেলার পরিবহনগুলো মূল ঢাকায় প্রবেশ না করে রিং রোড ব্যবহার করে বেরিয়ে যাওয়া। এতে ঢাকার ওপর পরিবহনের চাপ কমে যাবে। কিন্তু এটা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। তবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এই রিং রোডের মাত্র ৫ কিমি সড়ক বাস্তবায়ন করছে। যা পুরো সড়কের ১৭ ভাগের এক ভাগ। এ সড়ক কোনো সুবিধা দিতে পারবে না। যদি পুরো বৃত্তাকার সড়কটি স্টেপ বাই স্টেপ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা থাকত তাহলেও হতো। কিন্তু সংস্থাটির কোনো পরিকল্পনা নেই। তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ সিটির টার্গেট হচ্ছে প্রকল্প নিয়ে কাজ করা। কিন্তু এটা মানুষের উপকারে আসবে কি না এটা তারা যাচাই করেনি। মূলত প্রকল্প নিয়ে টাকা নষ্ট করাই তাদের লক্ষ্য।