শুক্রবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ইতিহাস বিখ্যাত মুসলিম সাহিত্যিক

তানভীর আহমেদ

ইতিহাস বিখ্যাত মুসলিম সাহিত্যিক

সাহিত্য সময়কে ধরে রাখে। সাহিত্য মানুষের মনের খোরাক জোগায়। মুসলিম সাহিত্যিকরা তাদের সাহিত্যজ্ঞান দিয়ে শতাব্দীকাল ধরে পাঠকের মনের পুষ্টির জোগান দিয়েছেন। জ্ঞানের আলো ও পাঠের আনন্দ তাদের সাহিত্য সৃষ্টিকে করেছে কালজয়ী। মুসলিম সাহিত্যের বড় অংশই আলোচনা করেছে স্রষ্টা প্রেমের অনবদ্য আকুল আবেদন।

স্রষ্টা প্রেমের পাশাপাশি মানবপ্রেমের নানাদিক উঠে এসেছে এই সাহিত্যকর্মগুলোতে।  কবিতা ছাড়াও দর্শন, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও ভ্রমণও ছিল তাদের সাহিত্যের বিষয়বস্তু। ইতিহাস বিখ্যাত মুসলিম সাহিত্যিকদের নিয়ে আজকের রকমারি-

 

শেখ সাদি

শেখ সাদিকে বলা হয় ইরানের প্রধানতম কবি। তাঁর পুরো নাম আবু মুহাম্মাদ মুসলিহ আল-দিন বিন আবদেল্লা শিরাজি। প্রকৃত নাম শরফুদ্দিন। ডাক নাম মুসলিহ উদ্দিন। আর উপাধি বা খেতাব হচ্ছে সাদি। আসল নাম নয়, তিনি বিশ্বের মানুষের কাছে পরিচিত হয়ে আছেন উপাধি ‘সাদি’ নিয়ে। তাঁর সাহিত্যের ভক্ত, পাঠক ছড়িয়ে আছে বিশ্বজুড়ে। তিনি শুধু একজন কবি নন, মানবতাবাদী সমাজ চিন্তাবিদও। ইরানের শিরাজ শহরে শেখ সাদি জন্মগ্রহণ করেন। শিরাজ ছিল এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভূমি। এখানেই মনোরম সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে দেন শেখ সাদি তাঁর কাব্যপ্রতিভার গুণে। তাঁর জীবন শুরু হয় বেদনাসিক্ত অনুভবে। যখন শেখ সাদির বাবার মৃত্যু ঘটে তখন তিনি নিতান্তই শিশু। এ ছাড়া পরিবারে ছিল নিদারুণ অভাব। এই অভাব তাঁকে গ্রাস করতে পারেনি। কৈশোরেই তাঁর স্বভাবজাত জ্ঞানের দ্যুতির দেখা মেলে। শিক্ষাগ্রহণের আকুলতাকে তিনি এড়িয়ে যাননি। তরুণ বয়সে কবি চলে আসেন বাগদাদ শহরে। বাগদাদ তখন সাহিত্য আর সাহিত্যিকদের চারণভূমি। এ যেন জ্ঞানের তীর্থস্থান। বাগদাদের সুবিখ্যাত ‘আল নিজামিয়া’ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যান। সময়টা ১১৯৫ থেকে ১২২৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। এ সময় তিনি উচ্চশিক্ষা নেন শারিয়া, আলকেমি, গভর্নমেন্ট, হিস্টোরি, অ্যারাবিক লিটারেচার অ্যান্ড থিওলজি বিষয়ে। তাঁর জ্ঞানের পরিধি কতদূর বিস্তৃত- বিষয়গুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায়। এরই মধ্যে এলো যুদ্ধ। দুর্ধর্ষ মঙ্গোলরা মধ্য এশিয়ার খোওয়াইজম নগর ও পারস্য আক্রমণ করেছে। জন্মভূমিতে আর ফিরতে পারেননি শেখ সাদি। বাগদাদ ছেড়ে বেরিয়ে পড়লেন। প্রায় ৩০ বছর ধরে দেশে দেশে ঘুরে বেড়ালেন। এ সময় তিনি রচনা করলেন তাঁর সেরা কাজ বোস্তান। এটি শেষ করেন ১২৫৭ সালে। তাঁর আরেকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ গুলিস্তান শেষ করেন এর পরের বছর। গুলিস্তানের ‘বনি আদম’ সারসংক্ষেপ কাব্যিক বৈশিষ্ট্যে এখনো মুগ্ধ করে পাঠকদের।

 

জালালউদ্দিন রুমি

মাওলানা জালালউদ্দিন রুমি বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে মুসলিম কবি-সাহিত্যিকের অন্যতম। এখনো তাঁর সাহিত্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। ইরানি সাহিত্যকে তিনি দিয়েছেন বিশ্বজুড়ে সম্মান। কবি মাওলানা জালালউদ্দিন রুমির জন্ম ১২০৫ সালের (মতান্তরে ১২০৭) ২৯ সেপ্টেম্বর, ৬০৪ হিজরি ৬ রবিউল আউয়াল আফগানিস্তানের বালখে। তাঁর প্রকৃত নাম মুহাম্মদ। জালালউদ্দিন ছিল তাঁর উপাধি। সুলতান মুহাম্মদ বাহাউদ্দিন ওয়ালাদ ছিলেন মাওলানা রুমির পিতা। ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর (রা.) ছিলেন মাওলানা রুমির পিতৃকুল থেকে নবম বংশধর এবং মাতৃকুল থেকে ছিলেন ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলির (রা.) বংশধর।

তিনি শুধু কবি ছিলেন না, ছিলেন একজন আধুনিক আধ্যাত্মিক চিন্তাচর্চার সাধক। অন্য মরমি কবি-দার্শনিকের থেকে তিনি ভিন্ন। মরমিয়াবাদী হিসেবে তিনি ছিলেন নীতি-শিক্ষক এবং সংস্কারক। দর্শন ও বিশ্বসাহিত্যের একজন অগাধ পান্ডিত্যপূর্ণ মনীষী।

মাওলানা রুমি সাহিত্যচর্চা করেছেন ফারসিতে। তাঁর স্বাভাবিক প্রবণতা আল্লাহর সঙ্গে একাকার হয়ে যাওয়ার ব্যাকুলতার স্তর পেরিয়ে তাঁকে ঘিরে বিরাজ করে তীব্র আকাক্সক্ষা। রুমির সব কাব্য ও সংগীত নানারূপে কেবল এ কথাটিই বলে। তিনি ফারসি ভাষায় অনেক জ্ঞানগর্ভ শিক্ষামূলক গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর আধ্যাত্মিক ও উপদেশমূলক একাধিক প্রবন্ধও আছে। তার মধ্যে ‘ফিহি মা ফিহি’ অন্যতম। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ উল্লেখযোগ্য কীর্তিমান অমরত্ব পাওয়া গ্রন্থ ‘মসনবি’। মসনবি শুধু ফারসি সাহিত্য ভান্ডারে নয়, এটি বিশ্বসাহিত্য ভান্ডারেরও একটি অমূল্য সম্পদ। এই গ্রন্থে দ্বিপদী ছন্দবদ্ধ কবিতার সংখ্যা ২৫ হাজার। যা ছয় খন্ডে বিভক্ত। মসনবিতে পাঠকপ্রিয় সৃষ্টিকর্তার প্রেমের অপার রহস্য উদঘাটনে তৃপ্তি লাভ করতে পারবেন। মসনবি কেবল ধর্মতত্ত্বের ওপর নয়, সাধারণ দর্শনের একটি আদর্শ গ্রন্থ হিসেবেও পরিচিত। মসনবিকে বলা হয়, একটি ধর্মীয় নীতিশাস্ত্র গ্রন্থ।

 

ইবনে বতুতা

ইবনে বতুতা ছিলেন বিশ্বসেরা পর্যটক। তিনি ১৩০৪ সালে মরক্কোর তানজিয়ারে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন একজন কাজী। ইবনে বতুতা সারা জীবন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে  বেড়িয়েছেন। ২১ বছর বয়স থেকে শুরু করে জীবনের পরবর্তী ৩০ বছরে তিনি প্রায় এক লাখ ২০ হাজার মাইল পথ পরিভ্রমণ করেন।

তিনিই একমাত্র পর্যটক, যিনি তাঁর সময়ে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব ভ্রমণ করেন এবং সেসব দেশের সুলতানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রায় ৪০টি দেশ ভ্রমণ শেষে মরক্কোতে ফেরার পর দেশটির সুলতান আবু ইনান ফারিস তাঁর ভ্রমণকাহিনির বর্ণনা লিপিবদ্ধ করার জন্য একজন সচিব নিয়োগ করেন। এই ভ্রমণকাহিনির নাম ‘রিহলা’। এটিকে চৌদ্দ শতকের পূর্ব, মধ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম সাম্রাজ্যের ইতিহাসের অন্যতম দলিল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

 

 

ফরিদউদ্দিন আত্তার

ফরিদউদ্দিন আত্তার। পুরো নাম আবু হামিদ বিন আবু বকর ইব্রাহিম। লেখালেখি করতেন ফরিদউদ্দিন নামে। তাঁর লেখনী এতটাই হৃদয়গ্রাহী ছিল যে, পাঠকরা তাঁকে সুগন্ধির সঙ্গে তুলনা করতেন। তাঁর নামের সঙ্গেই জুড়ে দেওয়া হয় আত্তার বা সুগন্ধি ব্যবসায় শব্দটি। হয়ে ওঠেন তাঁর সময়ের অন্যতম প্রধান মুসলিম কবি হিসেবে। তাঁর কবিতা পড়ে মানুষের মন স্রষ্টার প্রতি আকৃষ্ট হতো।

হদয় ছুঁয়ে যাওয়ার আবেগ তাঁর কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য। এই ফারসি কবি কিন্তু সুফিবাদের ছোঁয়া রাখতেন তাঁর কবিতায়। শুধু তাই নয়, কবিতার আড়ালে সুফিবাদের যে প্রেমময় দিক উঠে আসত তা পরবর্তী সময়ে স্থায়ী ভিত্তি লাভ করে।

ফরিদউদ্দিন আত্তার অন্তত ৩০টি বই লিখে গেছেন। তাঁর একটি বিখ্যাত বই হচ্ছে ‘মানতিকে তাইয়ার’ বা ‘পাখির সমাবেশ’। তিনি গবেষণার মাধ্যমে যে জ্ঞান অর্জন করেন তা কবিতা আকারে লিখে গেছেন।

 

 

বুল্লে শাহ

বুল্লে শাহ একজন প্রখ্যাত সুফি কবি। তাঁর জন্ম ১৬৮০ খ্রিস্টাব্দে। এই পাঞ্জাবি কবি, সুফি, দার্শনিকের পুরো নাম সৈয়দ আবদুল্লাহ শাহ কাদরি। তাঁর বাবা শাহ মুহাম্মদ দরবেশ। তাঁর বাবা পেশায় শিক্ষক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি ধর্ম প্রচারক হিসেবেও একটি মসজিদে কাজ করতেন। বুল্লে শাহের পূর্ব পুরুষগণ বুখারা থেকে এসেছিলেন।

ধারণা করা হয়, তাঁর পূর্ব পুরুষগণ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বংশধর। তিনি মাত্র ছয় বছর বয়সে তাঁর পরিবারের সঙ্গে মালাকওয়ালে চলে আসেন। এখানেই তিনি মাওলানা মইনুদ্দিনের কাছে শিক্ষা লাভ করেন। তাঁর সাহিত্যপ্রতিভা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। তাঁর কবিতাগুলো মুখে মুখে পাঠ হতো। কবিতার ধরনের দিক থেকে বুল্লে শাহের ধরন ছিল কাফি।

এটি পাঞ্জাবি ঘরানার রাগ, সিন্ধি এবং সিরাকি কবিতা শুধু সুফি এবং সিন্ধি এবং পাঞ্জাবিদের দ্বারাই ব্যবহৃত হতো না, বরং শিখ গুরুরাও তা ব্যবহার করতেন।

 

 

নিজামি গজনবি

ফারসি কবি ও বিশ্বসেরা সাহিত্যিকের একজন নিজামি গজনবি। তাঁর আসল নাম জামাল আল-দিন আবু মুহাম্মদ ইলিয়াস ইবনে ইউসুফ ইবনে জাক্কি। এই মুসলিম কবির কবিতায় স্রষ্টা প্রেমের অনবদ্য পঙ্ক্তি পাঠকদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

 

তাঁর কাব্যিক ধরনও নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে প্রশংসা কুড়িয়েছে। বর্তমান আজারবাইজানে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মসনবি ধরন কবিতায় তিনি গুরু বলে স্বীকৃত। তাঁর সেরা কীর্তি ‘খামসা’।

এটি মূলত পাঁচটি দীর্ঘ কবিতার সংকলন। তাঁর জীবনের বড় একটি সময় তিনি এই কবিতার পেছনে ব্যয় করেন। এ কবিতাগুলোকে বিশ্বসাহিত্যে ‘পাঁচ রত্ন’ বলা হয়।

 

 

হাফিজ

হাফিজ শিরাজি একজন ইরানি কবি। তাঁকে অনেকে চেনেন বুলবুল-ই-শিরাজ নামে। শিরাজ ছিল পারস্যের তীর্থভূমি। এখানেই তিনি জন্মগ্রহণ করেন। এই শহরের মানুষ তাঁর কাব্য প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বলত, ‘লিসান-উল-গায়েব’, ‘তর্জমান-উল-আসরার’।

হাফিজ তাঁর জীবদ্দশায় কবিতাসমূহ সংগ্রহ করে যাননি। তাঁর বন্ধু গুল-আন্দামই সর্বপ্রথম তাঁর মৃত্যুর পর ‘দিওয়ান’ আকারে হাফিজের সব কবিতা সংগ্রহ ও একত্রিত করেন।

হাফিজের প্রায় সব কবিতা ‘শাখ-ই-নবাৎ’ নামক কোনো ইরানি সুন্দরীর স্তবগানে মুখরিত। এটি হয়তো ছদ্মনাম। সেই তরুণীর আসল নাম হাফিজ গোপন করে গেছেন।

 

 

ফেরদৌসি

শাহনামা লিখে সাহিত্যের ইতিহাসে অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে রয়েছেন কবি ফেরদৌসি। তিনি ছিলেন পারস্যের একজন বিখ্যাত কবি। তাঁর রচিত ‘শাহনামা’ একই সঙ্গে ইরান ও সারা বিশ্বের ফারসি ভাষাভাষী মানুষের জাতীয় মহাকাব্য।

শাহনামা প্রাচীন ইরানের ইতিহাস, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি নিয়ে বিভিন্ন কাব্যগাথা। এতে আছে ৯৯০টি অধ্যায় ও ৬২টি কাহিনি। পুরো মহাকাব্যে ৬০ হাজার বার আছে অন্ত্যমিল।

মনে করা হয়, শাহনামার আগেও ফেরদৌসি কিছু কবিতা লিখেছিলেন কিন্তু সেগুলো খুঁজে পাওয়া যায়নি। তিনি দীর্ঘ ৩৩ বছর ইরানের বিভিন্ন শাসক ও বাদশাহদের কাহিনি তুলে ধরেন শাহনামাতে।

 

 

ইবনুল আরাবি

১১৬৫ সালে বর্তমান স্পেনে জন্মগ্রহণ করেন ইবনুল আরাবি। তখন ইসলামের স্বর্ণযুগ। সুফিবাদ ও আধ্যাত্মিকতায় ইবনুল আরাবির নাম সে সময় সম্মানের সঙ্গে উচ্চারিত হতো।

এই সুফি সাধক তাঁর দার্শনিক লেখনীর মাধ্যমে পাঠকদের মনে আলোড়ন তুলতে পেরেছিলেন। সুফিতত্ত্বে তাঁর অনবদ্য অবদানের কারণে তিনি প্রশংসিত হন। তাঁর লেখার মূল ভিত্তি ছিল আধ্যাত্মিকতা।

আধ্যাত্মিক আলোচনা ও স্রষ্টার নিকটবর্তী হওয়ার আকুল কাব্যিক বর্ণনা রয়েছে। সুফি সাধকদের কাছে তাঁর লেখা অনুপ্রেরণা জোগায়।

তিনি দামেসকে মৃত্যুবরণ করায় তাকে অনেকে ডাকেন ‘দামেস্কি’ বলেও।

 

 

সাইদ নুরসি

সাইদ নুরসিকে অনেকে চেনেন বদিউজ্জামান নামে। এই প্রখ্যাত লেখক রিসালায়ে নূর নামক কোরআনের ব্যাখ্যা রচনা করেন। এর আকার ছয় হাজার পৃষ্ঠারও বেশি। আধুনিক বিজ্ঞান ও যুক্তিকে ভবিষ্যতের পথ বিবেচনা করে তিনি সাধারণ বিদ্যালয়ে ধর্মীয় জ্ঞান ও ধর্মীয় বিদ্যালয়ে আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষাদানের পক্ষপাতী ছিলেন। যে কারণে তাঁকে এখনো শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়।

বর্তমানে ইসলাম নিয়ে উচ্চশিক্ষার যে ধারা চালু রয়েছে এর নেপথ্যে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। সাইদ নুরসি উসমানীয় সাম্রাজ্যের অন্তর্গত পূর্ব আনাতোলিয়ার বিতলিস ভিলায়েত প্রদেশের নুরস নামক কুর্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি ধর্মীয় বিতর্কে পারদর্শিতা দেখান। ইসলামী জ্ঞানের ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনের পর তাঁকে বদিউজ্জামান নাম প্রদান করা হয়, যার অর্থ ‘সময়ের অদ্বিতীয় ও সবচেয়ে উচ্চ ব্যক্তি’।

 

 

ওয়ারিস শাহ

ওয়ারিস শাহ পাঞ্জাবি সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য বিশ্বব্যাপী খ্যাতি লাভ করেন। তিনি পাঞ্জাবের জানদিয়ালা শের খান (বর্তমানে পাকিস্তানে) নামক এলাকায় একটি বিশিষ্ট মুসলিম সৈয়দ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং সৈয়দ মোহাম্মদ আল-মাক্কির শিষ্য ছিলেন। তাঁর বাবার নাম ছিল গুলশের শাহ। যুবক অবস্থায় তাঁর পিতা-মাতা মারা যান।

ওয়ারিস শাহ প্রধানত হির রাঞ্জা নামক কবিতার লেখক হিসেবে পরিচিত, যার পঙ্ক্তিগুলো পাঞ্জাবি সাহিত্যের গুপ্তধন হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। তাঁর রচিত অনেক পঙ্ক্তি রয়েছে যা পাঞ্জাবে ব্যাপকভাবে সমাদৃত ও ব্যবহৃত হয়।

ওয়ারিস শাহর জীবনী নিয়ে পাঞ্জাবি ভাষায় একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। ১৯৬৪ সালে ওয়ারিস শাহ নামে একটি পাকিস্তানি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। ভারতেও ২০০৬ সালে তাঁর জীবনী নিয়ে ওয়ারিস শাহ : ইশ্ক দ্য ওয়ারিস নামে আরেকটি ছবি নির্মিত হয়।

 

 

মুহাম্মাদ-ই ওয়ালাদ

মুহাম্মাদ-ই ওয়ালাদ সবচেয়ে বেশি পরিচিত সুলতান ওয়ালাদ নামে। তিনি ছিলেন জালাল-আল-দিন রুমির বড় সন্তান। তাঁর বাবার মতোই তিনিও ফারসি সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তাঁর সাহিত্যকর্মও ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয় বিশ্বজুড়ে। মসনবি আঙ্গিকে লেখা তাঁর কবিতার বইগুলো দারুণ জনপ্রিয়তা লাভ করে। ‘ইবদিতা-নামা’ বইটি ছিল সে ধারার শ্রেষ্ঠ।

তাঁর কাব্যিক ছোঁয়ার কারণে একে অনেকে ‘ওয়ালাদ-নামা’ বলেও ডেকে থাকেন। এই বইয়ে স্রষ্টা প্রেমের আবেগঘন পঙ্ক্তি যে কাউকে মুগ্ধ করবে। ১২৯১ সালে বইটি রচিত হয়। এ ছাড়া ‘রাবাব-নামা’ বইটিও ফারসি সাহিত্যে অনন্য। এই মসনবি মাত্র পাঁচ মাসে রচিত হয়েছিল। এ ছাড়া রয়েছে ‘ইনথা-নামা’। এটিও একটি জোড় মসনবি।

এখানে রয়েছে আট হাজার ৩০০ লাইন। কাব্যিক লাইনগুলো প্রেমময়। তাঁর বিখ্যাত আরেকটি গ্রন্থ ‘দিওয়ান-ই ওয়ালাদ।’

সর্বশেষ খবর