২৮ নভেম্বর, ২০২২ ১৬:৩৭

খেজুর গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত গাছিরা

জমির বেগ, ফেনী

খেজুর গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত গাছিরা

গাছিরা ব্যস্ত খেজুর গাছ পরিচর্যায়

কুয়াশা আর ভোরে লতা-পাতা ও ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দু জমে থাকাই জানান দিচ্ছে গ্রামীণ জনপদে শীতের আগমনী বার্তা। শীত মৌসুমকে কেন্দ্র করে ফেনীর বিভিন্ন গ্রামে খেজুর রস সংগ্রহের জন্য গাছ প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। তবে এবার শীতের প্রভাব কম থাকায় রস না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

কৃষি অফিস ও গাছিদের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, বাংলাদেশে আশ্বিন মাস থেকে রসের জন্য খেজুর গাছ প্রস্তুত করা শুরু হয়। শীত যত বেশি হয়, গাছ থেকে তত রস বেশি পাওয়া যায়। পৌষ ও মাঘ মাসে রস পাওয়া যায় সবচেয়ে বেশি।

সরেজমিন দেখা যায়, ফেনীর সোনাগাজী, ফুলগাজীসহ জেলার ৬ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের গাছিরা শীতের আমেজ শুরুর সাথে সাথে কোমরে দড়ি, দা বেঁধে খেজুর গাছ প্রস্তুত করছেন। আগে উপজেলার মাঠে মাঠে ফসলি জমিতে কিংবা জমির আইলে সারি সারি খেজুর গাছ দেখা গেলেও এখন আর সেই দৃশ্য নেই। গ্রামীণ জনপদের আসন্ন নবান্ন উৎসবের অপরিহার্য উপাদান খেজুরের রস আর গুড়। শীতের সকালে নানাভাবে খাওয়া হয় এ রস। শীত কিছুটা বাড়লেই শুরু হয় রস সংগ্রহ, তৈরি হয় খেজুরের গুড়। খেজুর গাছের ডালপালা ও গাছের উপরিভাগে ধারালো দা দিয়ে পরিষ্কার করতে দেখা গেছে।

সোনাগাজীর পারভেজ বলেন, শীতের মৌসুমে অভিজাত একটি খাবার হিসেবে পরিচিত খেজুরের রস। এ রস সংগ্রহের জন্য সোনাগাজীর গাছিরা গাছ প্রস্তুত করছে। গাছি আমিনুল ইসলাম বলেন, এ বছর শীতের মাত্রা খুবই কম। শীতের প্রভাব কম থাকায় রস তেমনটা না পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ফেনী শহরের বালিকা বিদ্যানিকেতনের স্কুল শিক্ষিকা পাপিয়া সুলতানা বলেন, শীতের সকালে ভাপা পিঠা, চিতল পিঠা, খেজুরের গুড়, খেজুরের রসের পায়েস সবার কাছে একটি মজাদার খাবার হিসেবে পরিচিত। শিক্ষিক মুক্তা বলেন, বর্তমান সময়ে এটি খুব অল্পসংখ্যক দেখা গেলেও চাহিদা রয়েছে অনেক। এ শীতের মৌসুমে খেজুরের রস দিয়ে পায়েস, ভাপা পিঠাসহ অনেক মজার মজার খাবার উপভোগ করেন মানুষজন। ব্যবসায়ী স্বপন বলেন, আমরা গাছতলায় গিয়ে খেজুরের রস সংগ্রহ করে থাকি। মাঝে মধ্যে স্থানীয়দের মাধ্যমে খেজুর রস সংগ্রহ করে থাকি। এবছর খেজুর রস তেমন একটা না পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জানা যায়, শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে রসের জন্য গাছিদের ফোন করে পিছে পিছে ঘুরতে হয়। একসময় গাছি নিজেই মাটির কলসি কাঁধে করে রস বিক্রি করার জন্য শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় আসতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে খেজুর গাছ কম থাকায় গাছিরা গাছ থেকে রস নামার আগেই গাছতলায় হাজির হয়ে যান ক্রেতারা। গাছি সামাদ বলেন, অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝি চলে এলেও শীতের তেমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। তারপরও রসের আশায় এখনও অনেকে গাছ প্রস্তুত করছেন। পৌষ ও মাঘ মাসে প্রচণ্ড শীত পড়বে। এই দুই মাসে প্রচুর পরিমাণ রস সংগ্রহ করতে পারবে এমন আশায় তারা গাছ তৈরি করছেন।

ফুলগাজীর আহাদ বলেন, আগে শীত মৌসুমে গ্রামে সকালের পরিবেশ নলেন গুড়-পাটালির ঘ্রাণে মৌ-মৌ করত। কিন্তু এখন আর সেসব দিন নেই। শীতের সময় শুধু গ্রামই নয়, শহরেও খেজুরের রস-গুড় দিয়ে তৈরি হয় হরেক রকমের পিঠা-পুলি, ক্ষীর ও পায়েস। ফলে চাহিদার চেয়ে এ সময় রস-গুড় উৎপাদন কম হওয়ায় দামও বেশি।

দাগনভূঞার কাইয়ুম জানান, এলাকায় বর্তমানে তেমন খেজুর গাছ নাই। ফুলগাজীর আবদুল হক বলেন, তার এলাকায় বর্তমানে ৩০ থেকে ৪০টির বেশি খেজুর গাছ নেই। তবে খেজুর রসের চাহিদা রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। গাছি নাজমুল জানান, গতবছর প্রতি কেজি খেজুরের রস বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা দরে। এ বছর খেজুরের রসের দাম আরও বাড়তে পারে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

সর্বশেষ খবর