রংপুর বিভাগের অনাবাদি জমি চাষযোগ্য করে আবাদ করলে প্রতিবছর ১৫ লাখ মেট্রিক টন বাড়তি খাদ্য শস্য উৎপাদন করা সম্ভব। রংপুর বিভাগে পৌনে তিন লাখ হেক্টর অনাবাদি জমি রয়েছ। এসব জমি অনাদর-অবহেলায় পড়ে রয়েছে। এসব জমিতে কোন ফসল হয় না। অফসলি ও অনাবাদি জমির অধিকাংশই নদী এলাকায়। এর ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ নদীতে জেগে ওঠা চর এবং নিচু এলাকা। তবে কৃষি বিভাগ বলছে চরাঞ্চলের জমিকে চাষযোগ্য করতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ওই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলের কৃষিতে বিপ্লব ঘটবে বলে মনে করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।
রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় মোট জমির পরিমাণ ১৮ লাখ ৩২ হাজার ৩৫৮ হেক্টর। আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ হচ্ছে ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৯১৪ হেক্টর। অনাবাদি জমি রয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৮২১ হেক্টর। এসব জমি থেকে প্রতি হেক্টরে গড়ে ৫/৬ মেট্রিক টন করে ফসল উৎপাদন হলে এক বছরে অতিরিক্ত আরো ১৫ লাখ মেট্রিন টন খাদ্য শস্য উৎপাদন করা সম্ভব। যা এ অঞ্চলের দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
জানা গেছে, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের ফলে গত ৪ দশক থেকে উত্তরাঞ্চলের ভূপ্রকৃতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তনের ফলে এ অঞ্চলের তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, করতোয়া, পদ্মাসহ শতাধিক নদী শুকনো মৌসুমে শুকিয়ে ক্ষীণধারায় প্রবাহিত হয় আবার বর্ষার সময় দুকূল ছাপিয়ে প্লাবিত হয়। ফলে প্রতি বছর পলি জমে এসব নদীর বুকে জেগে ওঠে অসংখ্য চর। জেগে ওঠা চরের জমি ২ থেকে ৩ বছরের মাথায় আবাদ করা যায়। কিন্তু বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও অনেক জমি চাষ যোগ্য হয়ে উঠছে না। চরাঞ্চল বাদেও খাল বিল, হাওর, বাওরের পাশের অনাদরে অবহেলায় পড়ে আছে হাজার হাজার হেক্টর জমি।
কৃষিবিদদের মতে অনাবাদি জমিগুলোকে ফসলিজমিতে রূপান্তর করতে পারলে বাড়তি খাদ্যশস্য উৎপাদনের পাশাপাশি এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। কৃষি বিভাগ এসব জমিকে দুভাগে ভাগ করেছে। চলতি পতিত ও স্থায়ী পতিত। চলতি পতিত বলতে তারা বুঝিয়েছে, নদী অঞ্চলের জেগে ওঠা চরকে। স্থায়ী পতিত বলতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পাশে, সরকারি রাস্তার ধারে এবং বাঁধের পাশের পতিত জমিকে বুঝিয়েছেন।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, চলতি পতিত যেসব জমি রয়েছে এগুলোকে চাষের আওতায় আনা সম্ভব। স্থায়ী পতিত জমিকে চাষের আওতায় আনা কঠিন। তবে তারা এসব অনাবাদি জমিতে স্থানীয় কৃষকদের স্বল্প মেয়াদী ফসল ফলানো পরার্মশ দিয়ে বলেন ভুট্টা, গম, কুমড়া, বাদাম,চিনা, কাউন বিভিন্ন প্রজাতির ডাল রোপণ করলে তারা লাভবান হতে পারবে। এসব জমিতে কুমড়া হেক্টরে ২০ টন, আলু হেক্টরে ২৫ টন, বাদমি, চিনা, কাউন হেক্টরে এক থেকে দেড় টন উৎপাদন করা সম্ভব। সবমিলিয়ে গড়ে প্রতি হেক্টরে ৫ থেকে ৬ টন ফসল আবাদ করা সম্ভব।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, এসব জমি চাষযোগ্য করতে পারলে প্রতি বছর কয়েক লাখ মেট্রিকটন বাড়তি ফসল উৎপাদন সম্ভব। চরাঞ্চল বাদে যেসব জমি পতিত অবস্থায় রয়েছে এসব জমি চাষযোগ্য করতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল