দিনাজপুরের লিচু খ্যাত মাসিমপুর এলাকার শতবর্ষীয় কয়েক গাছে শত শত বাদুড়ের নিরাপদ আবাস। দিনাজপুর শহরে থেকে সিকদারহাট সড়কের পাশে লিচুখ্যাত মাসিমপুর কবরস্থান এলাকায় শতবর্ষীয় কয়েকটি গাছে এসব বাদুড়ের বসবাস। যেন এটা তাদের বসবাসের অভয়ারণ্য। গাছের ডালে ডালে, পাতায় পাতায় সর্বত্র বাদুড়ের নিরাপদ আবাস।
এখানে সকালে কিংবা বিকেল-সন্ধ্যায় দেখা যাবে শত শত বাদুড়। এই চিত্র প্রতিদিনের। ওই সময়ে গাছের আগায় মনে হবে গাছের পাতাই নেই, আছে শুধু বাদুড় আর বাদুড়। বাদুড় দিনে চলাফেরা করতে পারে না। বাদুড় রাতের আঁধারে চলে। তাই খাবারের সন্ধানে সন্ধ্যা হলেই এসব বাদুড় চলে যায় বিভিন্ন দুর-দুরান্তের এলাকায়। কিন্তু সকাল হওয়ার আগেই এসব গাছে আবার ফিরে আসে এসব বাদুড়। দিনের বেলায় এই এলাকার গাছের ছায়ায় উল্টো হয়ে ঝুলে থাকে। দিনের বেলায় মানুষসহ পৃথিবীর অধিকাংশ প্রাণীই জেগে থাকে। দিবাচর প্রাণীদের কোলাহলে বাদুড়ের পথচলার সেই বিশেষ শব্দ তরঙ্গ হারিয়ে যায়। তাই কোটি কোটি শব্দ তরঙ্গের ভিড়ে নিজের শব্দ তরঙ্গটি খুঁজে খুঁজে পায় না বলেই বাদুড় দিনের বেলা বাসা ছেড়ে বের হয় না।
বাদুড়ের এই অভয়ারণ্য এই দিনাজপুর সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের মাসিমপুর কবরস্থানের শতবর্ষীয় বট-পাকুড়সহ বিভিন্ন গাছে।
শহরের বিভিন্ন এলাকায় বৈদ্যুতিক তারে মাঝে মাঝে তাদের মরা বাদুড় ঝুলন্ত অবস্থায় দেখা যায়, কারণ তারের প্রস্থ কম হওয়ায় তাৎক্ষনিক তারা তারের সুস্পষ্ট ধারণা পায় না। বাদুড়ের বড় বড় দুটি চোখ থাকলেও সেগুলো দিয়ে তারা দেখতে পায় না। বাদুড়কে তাই দেখার কাজটা করতে হয় কান দিয়েই।
আজব প্রাণীদের মধ্যে বাদুড় একটা। ডানা আছে আকাশে উড়তেও পারে, তবু সে পাখি নয়, স্তন্যপায়ী প্রাণী! মুখটা শিয়ালের মতো, খরগোশের মতো বড় বড় দুটো কান, ছাতার মতো অদ্ভুত দুটি পাখা।
বাদুড় মূলত ফলভোজি। পেয়ারা, লিচু, জামরল ইত্যাদি ফলের ঠিকানা খুঁজে বের করতে তারা শব্দ তরঙ্গের সঙ্গে সঙ্গে নাকের গন্ধ শক্তির ওপরও নির্ভর করে।
কলেজ ছাত্র নাঈম ইসলাম, লিটনসহ অনেকেই জানান, এ এলাকায় অনেক বছর ধরে এত বাদুড় এক সঙ্গে বসবাস করছে। এলাকার মানুষ প্রকৃতির এই বাদুড়ের উপর বিরক্ত হয়না। বেশিরভাগ এরা দিনে শতবর্ষীয় গাছে উল্টো হয়ে ঝুলে থাকে। রাতে তারা বের হয় খাবার সন্ধানে। মানুষও এদের ক্ষতির কারন নয়। এ কারণে নিরাপদ আবাস মনে করেই দিনে-রাতে বাদুড়ের বসবাস।
স্থানীয় মৌ-খামারি মোসাদ্দেক হোসেনসহ কয়েকজন জানান, লিচুর জন্য বিখ্যাত দিনাজপুরের মাসিমপুর কবরাস্থানের বড় বড় বট-পাকুড়সহ কয়েক গাছে এইসব বাদুড়ের বসবাস। রাস্তার পাশ দিয়ে চলাচলে মানুষ এদের কোন বিরক্ত করেনা। নিরাপদে বসবাস করে। তবে ওইসব গাছের নিচ দিয়ে চলাচলের সময় অনেকেই তাদের কিচিরমিচির শব্দ শুনতে পাবে। ওইখানে কয়েকটি গাছ শতবর্ষীয়। এদের থাকার শব্দই মাঝে মাঝে জানান দেই। আমি ছোট বেলা থেকে এসব গাছে ওইসব বাদুড়কে দেখে আসছি।
বিডি প্রতিদিন/এএম