পরিবেশ ও নদী দূষণ বন্ধের দাবিতে পঞ্চগড়ে মানববন্ধন করেছে বসুন্ধরা শুভসংঘের সদস্যরা। রবিবার সকালে জেলা শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে অংশ নেন সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্য, শিক্ষার্থী, স্থানীয় পরিবেশকর্মী ও সচেতন নাগরিকরা।
‘পরিবেশ দূষণ আর না, নদী দূষণ আর না' এমন নানা লেখা সম্বলিত ফেস্টুন হাতে ছিল অনেকের। মানববন্ধনে তারা নদী রক্ষা, বন সংরক্ষণ এবং পরিবেশ সচেতনতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পঞ্চগড় জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া, মহানন্দা, চাওয়াইসহ প্রায় ৫০টি ছোট-বড় নদী এখন দখল ও দূষণের কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। সুযোগ পেলেই ড্রেজার মেশিন দিয়ে তোলা হচ্ছে পাথর।
নদীগুলোতে একদিকে চলছে অবৈধ দখল, অন্যদিকে ফেলা হচ্ছে প্লাস্টিক ও কারখানার বর্জ্য। শুষ্ক মৌসুমে আবাদ করা হচ্ছে ধান। সেখানে ব্যবহার করা হচ্ছে সার কীটনাশক। এতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে এবং জলে বসবাসকারী প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে।
তারা আরো অভিযোগ করেন, প্রতি বছর নির্বিচারে গাছপালা কেটে ফেলা হচ্ছে। উজাড় হচ্ছে বনভূমি।
এভাবে বৃক্ষ নিধনের কারণে জেলায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। বর্ষাকালেও মিলছে না বৃষ্টির দেখা। আবার শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। কৃষিজমি ও পানির উপর নির্ভরশীল মানুষজনকে পড়তে হচ্ছে সংকটে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার এখনও সীমিত। সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি কিংবা অন্যান্য টেকসই জ্বালানি ব্যবহারে গুরুত্ব দিলে পরিবেশ দূষণ অনেকাংশে কমানো যেত।
এ সময় বক্তারা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাদের দাবি, ইতোমধ্যে ঋতুচক্রে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। শীত, গ্রীষ্ম ও বর্ষার স্বাভাবিক ধারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে, খাদ্য উৎপাদন হুমকির মুখে পড়ছে। তাই পরিবেশ রক্ষায় এখনই কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে।
মানববন্ধনে জাতীয় পরিবেশ পদক জয়ী পঞ্চগড়ের পরিবেশ কর্মী মাহমুদুল ইসলাম উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, নদী, বন আর প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা ছাড়া আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। স্থানীয় জনগণের পাশাপাশি সরকার ও নীতিনির্ধারকদেরও এই বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
মানববন্ধনে বসুন্ধরা শুভসংঘ পঞ্চগড় জেলা শাখার সভাপতি নাসিম আব্দুল্লাহ নয়ন, সহসভাপতি সুমন ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক নাঈম হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ সরকার, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইমামুল মুরছালিন, নারী বিষয়ক সম্পাদক উম্মে নাহার ই জান্নাত, স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক সামিরা তাসনিম, কর্ম ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক নিশাত সালসাবিল রিফা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক ফাতেমাতুজ্জহরা মাফি, নারী ও শিশু বিষয়ক সম্পাদক আফরাদি আক্তার, সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, মিলি আক্তারসহ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বসুন্ধরা শুভসংঘের সদস্যরা নিজেরা পরিবেশ ও নদী দূষণ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি অন্যদের সচেতন করার অঙ্গীকার করেন।
বিডি প্রতিদিন/নাজিম