জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছেন তিন শিক্ষার্থী। শনিবার বিকেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে তারা অনশন শুরু করেন।
অনশনকারী তিন শিক্ষার্থী হলেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪০ তম ব্যাচের পূজা বিশ্বাস, ইংরেজি বিভাগের ৪২ তম ব্যাচের সর্দার জাহিদ এবং একই বিভাগ ও ব্যাচের তাহমিনা জাহান তুলি।
জানা যায়, শনিবার বেলা ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ৪২তম ব্যাচের ছাত্র সর্দার জাহিদ একাই অনশনে বসেন। পরে বিকাল ৪টার দিকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪০তম ব্যাচের ছাত্রী পূজা বিশ্বাস তার সঙ্গে যোগ দেন। সর্বশেষ রাত ১২ টায় যোগ দেন তাহমিনা জাহান তুলি। জাহিদ ও পূজা মামলার আসামি হলেও তুলি মামলার আসামি নন।
তাহমিনা জাহান তুলি বলেন, আমি মামলার আসামি নই। কিন্তু প্রশাসনের দায়ের করা মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ ও তা প্রত্যাহারের দাবিতে অনশনকারীদের সম্মতি জানাতে আমি অনশন শুরু করি।
সর্দার জাহিদ বলেন, সামনে আমার ফাইনাল পরীক্ষা কিন্তু মামলার কারণে হয়রানির শিকার হচ্ছি। ফলে স্বাভাবিকভাবে পড়াশুনায় মনোযোগ দিতে পারছি না। সামাজিক এবং পারিবারিকভাবে হেনস্থার শিকার হচ্ছি। তাই অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আমরণ অনশনে যেতে বাধ্য হয়েছি।
পূজা বিশ্বাস বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়ের করা হয়রানিমূলক ও মিথ্যা মামলায় সামাজিক এবং পারিবারিকভাবে আমাদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে। তাই হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম এসে মামলা প্রত্যাহার করার ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত তারা আমরণ অনশন চালিয়ে যাবেন বলে জানান।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তপন কুমার সাহা বলেন, বিষয়টি মাননীয় উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যসহ প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্তাব্যক্তিরা জানেন। তারা অনশন প্রত্যাহার করতে বলেছেন।
মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, আমরাতো মামলা প্রত্যাহার করতে পারব না। সেটা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের বিষয়। আমরা বিষয়টি তাদের জানিয়েছি। আমরা এখানে আমাদের দায়িত্ব পালন করছি।
উপ- উপাচার্য অধ্যাপক আমির হোসেন বলেন, বিষয়টি আমরা শুনছি। আমরা এটি নিয়ে বসব এবং কি করা যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্তু নেব।
ক্যাম্পাস খোলার পর শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে গত ৯ জুলাই মানববন্ধন ও ১১ জুলাই মৌন মিছিল এবং ১৩ জুলাই বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, গত ২৬ মে ভোরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সিঅ্যান্ডবি এলাকায় বাসচাপায় নাজমুল হাসান রানা ও মেহেদী হাসান আরাফাত নামের দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ এবং নিরাপদ সড়কসহ সাত দফা দাবিতে পরদিন ২৭ মে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। বিকালে পুলিশ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। পরে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনে গিয়ে ভাঙচুর চালায়। এ সময় কয়েকজন শিক্ষক লাঞ্ছিত হন বলে অভিযোগ উঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওইদিন রাতে উপাচার্যের বাসভবনে অনুষ্ঠিত জরুরি সিন্ডিকেটে ৩১ শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাতনামা অন্তত ৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। মধ্যরাতে উপাচার্যের বাসভবন থেকে ৪২ শিক্ষার্থীকে আটক করে নিয়ে যায় আশুলিয়া পুলিশ। পরে প্রশাসনের মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়।
বিডি প্রতিদিন/১৬ জুলাই ২০১৭/হিমেল