টেন্ডার জমা দেয়াকে কেন্দ্র করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে সাংবাদিকসহ ৮ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজন গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল এবং অপর একজনকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধী অবস্থায় রয়েছে।
রবিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় নতুন একাডেমিক ভবনে টেন্ডারকে কেন্দ্র করে প্রথম দফায় সংঘর্ষ বাধে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ ডায়েরি ও ক্যালেন্ডার মুদ্রণ, বাধাই এবং সরবরাহ- সংক্রান্ত দরপত্র জমা দেয়ার নির্ধারিত সময় ছিল গত রবিবার ১২টা পর্যন্ত। এ বিষয়ে সকাল ১০টার দিকে ময়মনসিংহ গ্রুপ হিসেবে পরিচিত তানভির রহমান, আনিসুর রহমান শিশির, জহির রায়হান আগুনের নেতৃত্বে একটি দরপত্র জমা দেওয়া হয়, তাদের সাথে বরিশাল গ্রুপের ইব্রাহিম ফরাজিও রুবেল শেখ যৌথভাবে একটি দরপত্র জমা দেন। দরপত্র জমা দিয়ে তাদের অনুসারীরা নতুন ভবনের সামনে মহড়া দিতে থাকে।
এরপর ১২টার দিকে সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামের অনুসারী জুয়েল রানা 'সরকার ট্রের্ডাসের’ নামে একটি দরপত্র জমা দিতে গেলে ময়মনসিংহ গ্রুপের কর্মী নাদিমের নেতৃত্বে সিরাজুল ইসলামের অনুসারীদের ওপর হামলা চালানো হয়। এ ঘটনার স্থিরচিত্র ধারল করতে গেলে অনলাইন পোর্টালের সাংবাদিক আব্দুল ওহাবকে মারধর করে নাদিমসহ আরও কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী। এক পর্যায়ে আব্দুল ওহাব মাটিতে পড়ে গেলে নাদিম ও তার সাথে থাকা ময়মনসিংহ গ্রুপের কর্মীরা তাকে লাথি ও ঘুষি মারতে থাকে। এতে সে অজ্ঞান হয়ে পড়লে তার সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। এ সময় তার হাতে থাকা দামি মোবাইল ফোনও কেড়ে নেয়া হয়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র কের ক্যাম্পাস উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করতে থাকে। এসময় শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপ-গ্রুপ পুরো ক্যাম্পাসে শোডাউন দিতে থাকে। এক পর্যায়ে বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে সাবেক সভাপতি শরিফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামের গ্রুপের কর্মীরা যৌথভাবে মহড়া দেন। এ সময় তাদের অনুসারী মোমেন, ফয়সাল, প্রীতিজ রাজ, পোগেজ স্কুলের ছাত্রলীগের সভাপতি নুহাস মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ময়মনয়সিংহ গ্রুপ আগুনের কর্মী শান্তকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় এলোপাতাড়ি কুপায়। আহত অবস্থায় তাকে ন্যাশনাল মেডিকেল নেয়া। পরে তার অবস্থা আরো গুরুতর হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এছাড়াও আহতদের নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ইমারজেন্সি বিভাগের সামনে আনিসুর রহমান শিশির ও জহির রায়হান আগুনের নেতৃত্বে সিরাজ গ্রুপের কর্মীদের উপর আরেক দফা অতর্কিত হামলা করে। এসময় সম্রাট, তৌকির, ফয়সালের আহত হয়। সম্রাটের অবস্থা গুরুতর হলে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, এখনো জবি শাখার ছাত্রলীগে কোন কমিটি দেয়া হয়নি। যারা ক্যাম্পাসে মারামারি করেছে তারা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির কেউ নয়। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেছি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, ক্যাম্পাসে মারামারি ঘটনা শুনেছি। এখনো কোন কোন ধরনের লিখিত অভিযোগ পায়নি। যদি কেউ অভিযোগ করে তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিব। তবে আপাতত ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/১৭ জুলাই, ২০১৭/মাহবুব