অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার সকাল থেকে দফায় দফায় ক্যাম্পাসে দুই গ্রপের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধু হলের দুটি কক্ষ ভাঙচুর করে প্রতিপক্ষের কর্মীরা।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি শাহেদ সিদ্দিকী শান্ত ও সম্পাদক ওয়ালী উল্লাহ গ্রুপের সাথে সহ-সভাপতি আরাফাত গ্রুপের মধ্যে ক্যম্পাসে অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এরই জের ধরে আজ ভোরে আরাফাত গ্রুপের লোকজন শান্ত গ্রুপের এক কর্মীকে মারধোর করে।
পরে সকাল দশটার দিকে উভয় গ্রুপ ক্যাম্পাসে আসলে দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপ এবং সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় ক্যাম্পাসে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে, সাধারণ শিক্ষার্থীরা দিগবিদিক ছোটাছুটি করে নিরাপদে আশ্রয় নেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ক্যাম্পাস থমথমে পরিবেশ বিরাজ করায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ইট পাটকেল নিক্ষেপের সময় বেশ কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হয়।
পাবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আরাফাত হোসেন বলেন, বর্তমান ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদক একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে বিভিন্ন অপকর্ম করেন, তার প্রতিবাদ করলেই তারা আমাদের উপর চড়াও হয়। আমার রুমে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। সব সময় ওরা যা করবে সেটাই মেনে নিতে হবে। সভাপতি শান্ত নিজেই কতিপয় শিক্ষার্থীদের দিয়ে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক দ্রব্য বিক্রি করায় এবং সে নিজেও সেবন করে। ক্যাম্পাসে মাদক দ্রব্যর বিরুদ্ধে কথা বলার জন্যেই আজকে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সাধারণ সম্পাদক ওলি উল্লাহ’র ছাত্রত্ব নেই, তবুও সে পদ ধরে রাখবে। তারা সংগঠনের নাম ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ঠিকাদারী কাজ করে থাকেন। যেটা আমরা সমর্থন করি না।
এ বিষয়ে কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, ছাত্র নেতাদের জন্য আমরা ক্যম্পাসে নিরাপদে চলতে পারবো না, এটা কেমন কথা। জীবনের ভয়ে ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে বের হয়ে আসতে হয়। ঠিক মতো ক্লাস পরীক্ষা হবে না, এটা কেমন কথা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যায় ছাত্রলীগের সভাপতি শাহেদ সিদ্দিকী শান্ত মাদকের কথা অস্বীকার করে বলেন, বিরোধিতা করার জন্যেই তারা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছেন। আমরা সব সময় ক্যাম্পাসে শান্তি শৃংখলার পক্ষে। আজকের এই ঘটনার জন্য আরাফাত নিজেই দায়ী, কেননা সে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহির থেকে ক্যাডার ভাড়া করে এনে শিক্ষার্থীদের মারপিট করেছে। ক্যাম্পাসে বহিরাগত আসবে কেন? আমরা আরাফাতের এই কর্মকান্ডের জন্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট সঠিক বিচার দাবি করি।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি আওয়াল কবির জয় বলেন, ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সকাল থেকে কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটলেও কোন ধরনের অপ্রিতিকর ঘটনা না ঘটে সেদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তৎপর রয়েছে। আমরা উভয় গ্রুপের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হলে দোষী ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/১৭ জুলাই ২০১৭/হিমেল