২৮ জানুয়ারি, ২০১৮ ২১:৪৭

প্রতিবাদ করে শিক্ষিকার রোষানলে দুই জাবি শিক্ষার্থী!

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

প্রতিবাদ করে শিক্ষিকার রোষানলে দুই জাবি শিক্ষার্থী!

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বটতলায় অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিংয়ের প্রতিবাদ করে এক শিক্ষিকার রোষানলে পড়েছেন দুই শিক্ষার্থী। গত শুক্রবার ঘটে যাওয়া ওই ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের জন্য ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাহরিন ইসলাম খান তৎপর হয়ে উঠেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। 

অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষার্থী দুইজনকে বহিষ্কারের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চাপ প্রয়োগ করছে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। এছাড়া তড়িঘড়ি করে প্রতিবেদন তৈরি করতে তৎপর হওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের বিরুদ্ধে। 

সর্বশেষ, এ ঘটনায় বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষকরা। আজ রবিবার বিভাগের একাডেমিক সভায় দুই শিক্ষার্থীকে অবিলম্বে বহিষ্কারের দাবিতে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। 

এদিকে শিক্ষকদের ব্যক্তিগত ঘটনায় বিভাগের শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়ার এরূপ ঘটনাকে ‘অশিক্ষকসুলভ’ বলে মন্তব্য করে সমালোচনা করেছেন ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি ইমরান নাদিম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের একাধিক শিক্ষক জানান, রবিবার সকালে নাহরিন ইসলামের জোরাজুরিতে কয়েকজন শিক্ষকের অমত থাকা সত্ত্বেও বিভাগের সকল ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখে তিনি বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে উপাচার্যের কাছে গিয়ে আগামীকালের মধ্যে দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের আল্টিমেটামও দিয়ে আসেন। 

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় খাবার দোকান সংলগ্ন রাস্তাটির মেরামতের কাজ চলছে। ফলে রাস্তার পাশের খাবার দোকানের সামনে দিয়েই চলাচল করছে রিকশা ও পথচারীরা। গত শুক্রবার দুপুরে বটতলায় খাবার খেতে গিয়ে সেই সংকীর্ণ রাস্তার উপরেই নিজের প্রাইভেটকার রাখেন নাহরিন ইসলাম খান। এতে করে শিক্ষার্থীদের চলাচলে সমস্যা তৈরি হয়। সেখানকার দায়িত্বরত গার্ড তখন গাড়িচালককে গাড়িটি অন্যত্র সরিয়ে নিতে বলে। নাহরিন ইসলাম খান গাড়ি সরাতে অস্বীকৃতি জানান। এ সময় আইন ও বিচার বিচার বিভাগের ৪৩তম আবর্তনের শিক্ষার্থী আরমানুল ইসলাম খান এবং অর্থনীতি বিভাগের ৪০তম আবর্তনের শিক্ষার্থী নুরুদ্দিন মোহাম্মদ সানাউলসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী সেখানে উপস্থিত হয়ে গাড়ি সরিয়ে নেয়ার অনুরোধ জানালে তিনি আরমানের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। 

এরই এক পর্যায়ে নাহরিন ইসলাম খান আরমানকে মারতে উদ্যত হন এবং শিক্ষার্থীদেরকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। উপস্থিত শিক্ষার্থীরা নাহরীন ইসলাম খানকে কোন বিভাগের শিক্ষক জানতে চাইলে তিনি পরিচয় না দিয়ে বলেন, “আমি ১৩ বছর ধরে শিক্ষকতা করি... কোন বিভাগের শিক্ষক তা আমি দেখাচ্ছি।” পরে সহকারী প্রক্টর মেহেদী ইকবাল, প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহিন ও শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি জুয়েল রানা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শিক্ষিকাকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যান। 

এ ঘটনার জেরে সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর দুই শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করে নাহরিন ইসলাম মৌখিক লাঞ্ছনার অভিযোগ দেন। তারা হলেন- ৪৩ তম আবর্তনের আইন ও বিচার বিভাগের আরমানুল ইসলাম ও ৪০তম আবর্তনের অর্থনীতি বিভাগের নুরুদ্দিন মোহাম্মদ সানাউল। পরে আরমানুল ইসলাম খান প্রক্টরের বরাবরে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগে অশোভন আচরণ, শারীরিক লাঞ্ছনা ও হুমকির বিচার চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু অভিযোগের পরে ব্যবস্থা নেয়ার স্বাভাবিক নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে না গিয়ে নাহরিন ইসলাম ওই দুই শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের জন্য তৎপর হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

এদিকে তড়িঘড়ি করে প্রতিবেদন তৈরি করতে তৎপর হওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের বিরুদ্ধেও। ঘটনার তৃতীয়দিন রবিবার বেলা ১২টায় আরমানুল ইসলামকে দেয়া কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়। কিন্তু মাত্র ২ ঘণ্টা পরেই প্রক্টরের অফিস থেকে ফোন দিয়ে তাকে আজকের মধ্যেই অভিযোগের জবাব দিতে বলে। 

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা বলেন, “সানাউলের ছাত্রত্ব শেষ হওয়ায় তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া যায়নি, তবে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তার বক্তব্য নেয়া হয়েছে। আর আরমান আজ বিকেলে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়েছে। আমরা এখন এ প্রতিবেদন উপাচার্যের কাছে পাঠাবো, বাকি সিদ্ধান্ত উনি নেবেন।”

এদিকে, প্রতিবাদ করায় শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তৎপর হওয়াকে নেতিবাচক দৃষ্টিতেই নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা বলেন, “আবাসিক ক্যাম্পাস হওয়ায় আমাদের ছাত্র-শিক্ষকদেরকে সবসময় পাশাপাশিই বাস করতে হয়। দিনশেষে এখানে সকলেরই পারস্পরিক সহমর্মিতা ও বোঝাপড়া থাকা উচিৎ। এ ধরণের তুচ্ছ বিষয় নিয়ে বড় কোনো ইস্যু তৈরি হওয়াটা মোটেও প্রত্যাশিত নয়।”

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নিজের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ অস্বীকার করে শিক্ষিকা নাহরিন ইসলাম খান বলেন, “আমি অল্প সময়ের জন্য গাড়িটি সেখানে রেখেছিলাম। শিক্ষার্থীদের সাথে খারাপ আচরণ করিনি। বরং তারাই আমাকে অকথ্য ভাষায় লাঞ্ছিত করে। তারা যে খারাপ আচরণ করেছে তা আমার শিক্ষকতা জীবনে আগে কখনোই ঘটেনি। এজন্যই আমি তাদের বিচার দাবি করেছি।”

বিডি-প্রতিদিন/২৮ জানুয়ারি, ২০১৮/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর