চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কেন্দ্রিয় মাঠের পাশে ছোট্ট আয়তনের একটি সেমিপাকা ভবন। সেখানে আছে ছোট ছোট সাতটি কক্ষ। এই সাতটি কক্ষে বসেই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চবির প্রকৌশল বিভাগ পরিচালিত হচ্ছে। ভেঙ্গে পড়ছে টিনশেড এ ভবনের পেলেস্তারা। ছিদ্র টিন দিয়ে পড়ে পানি। করুণ অবস্থা বাথরুমের। একই রুমে আড়াআড়ি করে বসে কাজ করতে হয় তিনজন প্রকৌশলীকে। ভবনের দরজা-জানালাও ভাঙ্গা। অথচ এই কক্ষ থেকেই এক হাজার ৭৫৩ দশমিক ৮৮ একর আয়তনের মধ্যে গড়ে ওঠা প্রায় অর্ধশত ভবনের রক্ষণাবেক্ষণ ও নির্মাণ কাজ পরিচালিত হচ্ছে।
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসেই চলছে প্রকৌশল বিভাগের কাজ। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই টিন শেডের জরাজীর্ণ ভবনই প্রকৌশলীদের ঠিকানা। চবি কর্তৃপক্ষ পাঁচতলা বিশিষ্ট নতুন ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিলেও গত সাত বছরেও কাজটি আলোর মুখ দেখছে না। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ জরাজীর্ণ ভবনেই থাকছে প্রকৌশল বিভাগ।
চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রকৌশল দপ্তরের ভবণ নির্মাণের কাজটি যখন দেওয়া হয় তখন আমি দায়িত্বে ছিলাম না। দায়িত্ব নেওয়ার পর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি যথাসময়ে কাজ সম্পন্ন করতে না পারায় তাকে কয়েক দফা চিঠি দিয়েছি। পরে প্রতিষ্ঠানটি কাজ শেষ করতে পারবে না মর্মে আমাদের চিঠি দিয়ে অব্যহতি নেয়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুসারে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে ভবন নিমার্ণের কাজ দেওয়া হয়। সে প্রতিষ্ঠানও নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেব।
চবি সূত্রে জানা যায়, প্রকৌশল দপ্তরের জন্য চবি কর্তৃপক্ষ নতুন ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে ২০১১ সালের ১০ জুলাই ৪৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৯০ টাকার দরপত্র আহবান করে। ‘মোহাম্মদ ইউনূছ এ্যান্ড ব্রাদার্স’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। চবির সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী কাজ পাওয়ার চার মাসের মধ্যে শেষ করার কথা। কিন্তু চার বছরেও নির্মাণ কাজ শেষ না করায় ঠিাকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে। পরে ২০১৬ সালের ১০ জুন ৩২ লাখ ৬৩ হাজার ৬৪৩ টাকায় ‘সোনিয়া এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ মাস সময় বেঁধে দিয়ে প্রকৌশল ভবন নির্মাণের চুক্তি করে। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানটিও চুক্তি বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এ নিয়ে চবি কর্তৃপক্ষ ক্ষোভও প্রকাশ করে। তাছাড়া ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত ৬ বার তাগদা পত্রও দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। কিন্তু এখনো কাজ বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে, দুই বছর আগে থেকেই নতুন ভবনে প্রকৌশল দপ্তরের কাজ পরিচালনা করার কথা ছিল। কিন্তু এখনো কাজই শুরু না করায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রকৌশল দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।
কর্মকর্তা-কর্মচারিদের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাই ভবন নির্মাণের কাজটি করছে। ফলে তারা তাদের মত করে কাজ সম্পন্ন করছে। গতিহীনভাবে কাজ চলায় যথা সময়ে কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
বিডি প্রতিদিন/৮ মার্চ, ২০১৮/ফারজানা