মরতে হলে এক সাথে মরব, তবুও কোটা ব্যবস্থার সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। প্রয়োজনে আমরা সবাই শহীদ হব তবু কোটা ব্যবস্থার সংস্কার চাই। সোমবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মাইকে এধরণের ঘোষণা দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কার দাবিতে এবং ঢাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আজ ভোর ৬টায় রাস্তায় নামেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থী। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (দুপুর ১২টা) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে পাঁচ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। এ ঘটনায় মহাসড়কের দুই পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। এর ফলে ভোগান্তিতে পড়ে চলাচলকারী যাত্রীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনকারীরা ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘পিতা তুমি ফিরে এসো, বৈষম্য দূর করো’, ‘মরতে হলে একসঙ্গে মরবো, তবুও দাবি আদায় করে ছাড়বো’ সহ নানা স্লোগান দিচ্ছেন।
এদিকে রবিবার রাতে কেন্দ্র ঘোষিত অনির্দিষ্টকালের ক্লাস বর্জনের কর্মসূচিও চলছে রাবিতে। সোমবার সকালে কোন বিভাগেই ক্লাস অনুষ্ঠিত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
কোটা সংষ্কার আন্দোলনের রাবি শাখার আহ্বায়ক মাসুদ মুন্নাফ জানিয়েছিলেন, ‘সারাদেশে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই অনির্দিষ্টকালের ক্লাস বর্জনের নীরব কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।’
ক্লাস বর্জনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘কোটা সংস্কার দাবিতে সারাদেশের মতো রাবিতেও ক্লাস বর্জন কর্মসূচি চলছে। কোন বিভাগের ক্লাস অনুষ্ঠিত না হলেও কিছু বিভাগে পূর্ব ঘোষিত পরীক্ষা চলছে।’
প্রক্টর বলেন, ‘সকালে তারা আবারো রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেছে। তারা আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির আশ্বাস দিয়েছে। আবার তারাই ঘোষণা দিয়েছে, তাদের মধ্যে কেউ যদি কোন ভায়োলেন্স সৃষ্টির চেষ্টা করে তবে তারাই তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেবে।’
এর আগে রবিবার দিবাগত রাত ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্ত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি আবাসিক হলগুলো প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকে গিয়ে শিক্ষার্থী ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক দেড় ঘণ্টাব্যাপী অবরোধ করে রাখে। এসময় শিক্ষার্থীরা রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে দেয়। পরে রাত আড়াইটার দিকে তারা মহাসড়কে অবরোধ তুলে নিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে যায়।
এরও আগে রবিবার বিকেল ৪টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মহাসড়কটি অবরুদ্ধ থাকে।
চলমান এ আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো ৫৬ শতাংশ কোটা থেকে ১০ শতাংশে কমিয়ে আনা, কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধায় নিয়োগ দেয়া, চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার নয়, কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা নয়, চাকরির ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন বয়সসীমা।
বিডি প্রতিদিন/৯ এপ্রিল ২০১৮/হিমেল