প্রকতিতে যখন বসন্তের আমেজ লাগতে শুরু করেছে, এমনই সময় সরস্বতী পূজা উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও মুখর হল উৎসবের আমেজে। রবিবার ঢাবিতে বিপুল আয়োজনে পালিত হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় এই উৎসব। পূজা উপলক্ষ্যে বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে। সব ধর্মাবলম্বী মানুষের অংশগ্রহণে পূজা পরিণত হয় সর্বজনীন উৎসবে।
সনাতন ধর্ম মতে, দেবী সরস্বতী সত্য, ন্যায় ও জ্ঞানালোকের প্রতীক। বিদ্যা, বাণী ও সুরের অধিষ্ঠাত্রী। মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে সাদা রাজহাঁসে চেপে পৃথিবীতে আসেন দেবী সরস্বতী। এদিন সকাল থেকেই হলের পূজা মণ্ডপে শুরু হয় দেবীর উদ্দেশ্যে অঞ্জলি প্রদান। চলে বিকাল পর্যন্ত। হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা দেবীকে অর্চনা প্রদান করে দেবীর কাছে বিদ্যা, বুদ্ধি ও জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করেন।
সকালে পুজার মুল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ হলে। হলের খেলার মাঠে বিভিন্ন বিভাগের পক্ষ থেকে ৬৯ টি মণ্ডপ স্থাপন করা হয়। অপরুপ সাজে সজ্জিত এসব মণ্ডপ সনাতন ধর্র্মের প্রাচীন ঐতিহ্যকে প্রতিফলিত করে। বিদ্যার দেবীর সরস্বতীর উদ্দেশ্যে অঞ্জলি প্রদান করতে সকাল থেকে মণ্ডপের সামনে ভিড় জমাতে থাকে সনাতন ধর্মালম্বী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, সকালে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিকে সাথে নিয়ে পুজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন)অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সদস্য অধ্যাপক নিজামুল হক ভূইয়া, জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক অসীম কুমার সরকার প্রমুখ।
পরিদর্শন শেষে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশটি একটি অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক দেশ হবে। এখানে সকল ধর্মের মানুষ তার নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে। সকল ধর্মের মানুষ একসঙ্গে শান্তিতে বসবাস করবে। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমাদের দেশটি অনেক ত্যাগের বিনিময়ে সৃষ্টি হয়েছিল। আজকে স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর আমরা যখন বিশ্বাস করি ‘ধর্ম যার যার কিন্তু উৎসব সবার. ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার’ তখন কিন্তু আমরা দেখি সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাষ্প ছড়াতে অনেকে তৎপর।
মন্ত্রী এসময় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে যেন কোনো অপশক্তি বাধা দিতে না পারে সেজন্য সবাইকে সচেষ্ট হওয়ার আহবান জানান। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান অঞ্জলি দিতে আসা শিক্ষার্থীদেও সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
জগন্নাথ হল ছাড়াও রোকেয়া হল, শামসুন নাহার হল, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল ও কুয়েত মৈত্রী হলে পুজা উদযাপনের ব্যবস্থা করা হয়। আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে দেখা যায়, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মের লোকজনও এসেছেন পূজা উদযাপন দেখতে। বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষের সরব উপস্থিতিতে সরস্বতী পূজা এক সার্বজনীন উৎসবের রূপ লাভ করে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ তাফসীর