উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবিতে চলমান আন্দোলনের ১৩তম দিনে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সোমবার সকাল পৌঁনে ১১টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের অবরোধের ফলে গুরুত্বপূর্ণ ওই মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারন যাত্রীরা। দ্রুত সময়ের মধ্যে উপাচার্য পদত্যাগ না করলে আরও কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষনার হুশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে কারোর কথায় কিংবা অন্যায় দাবির মুখে পদত্যাগের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। স্বার্থান্বেসী মহলের ইন্ধনে গুটি কয়েক শিক্ষার্থী আন্দোলনের নামে অরাজকতা করছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম ইমামুল হক।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার শিক্ষার্থী আন্দোলনের সূত্রপাত গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের এক অনুষ্ঠানে উপাচার্যের একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে। ওই মন্তব্যের প্রতিবাদ এবং তা প্রত্যাহারসহ ১০ দফা দাবীতে ২৭ মার্চ থেকে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের মুখে উপাচার্য তার একক ক্ষমতাবলে ২৮ মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম এবং আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা করেন। এতে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা ১০ দফা বাদ দিয়ে উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।
আন্দোলনের ১১তম দিনে বিভাগীয় প্রশাসনের মধ্যস্থতায় গত শনিবার বরিশাল সার্কিট হাউজে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দলের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন সদর আসনের এমপি ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী, সিটি মেয়র, প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা, শিক্ষক প্রতিনিধি এবং সুশীল সমাজ প্রতিনিধিরা। বৈঠকে শিক্ষার্থীদের দাবী অনুযায়ী, এই উপাচার্যকে আর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন করতে না দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেন তারা। এ লক্ষ্যে উপাচার্যকে পদত্যাগ কিংবা ছুটিতে পাঠানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি দেওয়ার কথা জানানো হয়েছিলো সভার পর।
কিন্তু ওইদিন সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ কিংবা তার ছুটিতে যাওয়ার লিখিত প্রমাণপত্র হাতে না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার ১৩তম দিন সকাল পৌনে ১১টায় বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কর্নকাঠী এলাকায় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে মহাসড়কে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মহাসড়ক অবরোধের ফলে দুর্ভোগে পড়েন সাধারন যাত্রীরা। সাধারণ যাত্রীরা তাদের দুর্ভোগে ফেলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে যৌক্তিক সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ভূক্তভোগী যাত্রীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ শিফাত ও মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, তারা জনদুর্ভোগ সৃস্টি করতে চাননি। কিন্তু শান্তিপূর্ন টানা আন্দোলনের পরও কর্তৃপক্ষ তাদের দাবির প্রতি কর্নপাত করছেন না। এ কারনে বাধ্য হয়ে তারা মহাসড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছেন। উপাচার্য দ্রুত পদত্যাগ না করলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুশিয়ারি দেন তারা।
আন্দোলনের কারনে যে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিলো বলে জানিয়েছেন মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ফয়সাল হোসেন।
এদিকে এই আন্দোলন সাধারণ শিক্ষার্থীদের নয় দাবি করে উপাচার্য ড. এসএম ইমামুল হক কারোর দাবীর মুখে পদত্যাগ না করার বিষয়ে অনড় রয়েছেন। উপাচার্য বলেন, তিনি দায়িত্বে থাকলে কারোর স্বার্থহানি হতে পারে। এ কারণে স্বার্থান্বেষী মহল কিছু শিক্ষার্থীকে পেছন থেকে ইন্ধন দিয়ে আন্দোলন করাচ্ছে। ওই মহল শিক্ষার্থীদের অর্থ দিয়ে সহায়তা করছে। কারা তাদের আন্দোলনে ইন্ধন দিচ্ছেন সেটা খোঁজ করলেই আসল রহস্য এবং ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচন হবে।
২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারি শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪টি বিভাগে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা