দুর্নীতির অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আবারো নতুন কর্মসূচি দিয়েছে। আগামী ৩রা ডিসেম্বর উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের দুর্নীতির তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ করবে বলে জানিয়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’। এছাড়া তিন দফা দাবিতে আগামী বুধবার বিক্ষোভ মিছিল করবে বলেও জানিয়েছেন তারা।
সোমবার বেলা সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংগঠনটির নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’র সমন্বয়ক অধ্যাপক রায়হান রাইন তিন দফা দাবির বিষয়ে বলেন, ‘হামলার নির্দেশদাতা দুর্নীতিবাজ উপাচার্যকে অপসারণের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে এবং হামলাকারীদের বিচার করতে হবে। শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে হল ভ্যাকেন্টের অবৈধ সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে এবং দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত সাপেক্ষে রাষ্ট্রীয় আইনে বিচার ও তদন্ত প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’র সংগঠক ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাহাথির মুহাম্মদ। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আরোপিত অচলাবস্থা জারি করে রেখেছে অবাঞ্ছিত উপাচার্য ও তার প্রশাসন। গত ৫ নভেম্বর আমাদের যৌক্তিক আন্দোলনের উপর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একটি বিশেষ অংশকে লেলিয়ে দেয় এই অবাঞ্চিত উপাচার্য। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদেরকে নৃশংসভাবে পেটানো হয়। নিজের বাসার সামনে ঘটা এই ধরনের ন্যাক্কারজনক সন্ত্রাসকে গণঅভ্যূত্থান আখ্যায়িত করে উপাচার্য একধরনের উদগ্র পাশবিক উল্লাস প্রকাশ করেন এবং তিনি ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ জানান। উপাচার্যের দুর্নীতি, মামলাবাজি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিরোধী অবস্থানের কথা ইতিমধ্যে সর্বজনবিদিত।’
তিনি আরো বলেন, ‘ক্যাম্পাস বন্ধ রাখার মধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে নতুন শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসছাড়া করে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত হাস্যকর। আবাসিক হল বন্ধ রেখে ভর্তি প্রক্রিয়া কার্যক্রম চালু করলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের উপরে অশান্তি নেমে আসবে। নিজের গদি টিকিয়ে রাখতে নবীন শিক্ষার্থীদেরকে ভোগান্তিতে ফেলার কোনো অধিকার অনির্বাচিত উপাচার্যের নেই। সচল ক্যাম্পাসেই করতে হবে ভর্তি কার্যক্রম। সেই সঙ্গে গত ৫ নভেম্বরের হামলাকারীদের বিচার ও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
উল্লেখ্য, জাবিতে চলমান সাড়ে ১৪শ' কোটি টাকার অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প থেকে শাখা ছাত্রলীগকে ঈদ সেলামির নামে কোটি টাকা প্রদানের অভিযোগ উঠে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে। এতে দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে আন্দোলনকারীরা। সেখানে ৫ নভেম্বর আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর শাখা ছাত্রলীগ হামলা করলে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা। উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে জরুরী সিন্ডিকেট সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে প্রশাসন। তবে এই বন্ধের মধ্যেই উপাচার্যের অপসারণ ও ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে আন্দোলন চালিয়ে যান আন্দোলনকারীরা। আল্টিমেটাম দেন ২১ নভেম্বরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার জন্য। আল্টিমেটাম উপেক্ষা করায় আবারো আন্দোলন শুরু করেছেন তারা।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল