জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন বিভাগে অনেক আসন ফাঁকা থাকলেও নতুন করে আর শিক্ষার্থী ভর্তি না করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর।
জানা যায়, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ছয়টি অনুষদে সর্বমোট এক হাজার ৯০ আসনের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। দুইবার মেধা তালিকা প্রকাশ ও কোটায় ভর্তির পরও প্রায় দুই শতাধিক আসন ফাঁকা আছে বলে নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘উপাচার্য মহোদয়ের বক্তব্যের সাথে আমিও সহমত। কারণ ৭ ফেব্রুয়ারি ক্লাস শুরুর পর প্রায় দেড় মাস চলে গেছে। অনেক বিভাগ তাদের মিডটার্ম পরীক্ষার রুটিন দিয়ে দিয়েছে। তাছাড়া সামনে আরেকটা সেশনের ভর্তির সময়ও চলে এসেছে। এমতাবস্থায় ভর্তি প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখলে একাডেমিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হবে।’
আসন ফাঁকা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করা সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক বলছেন নতুন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক আলোচনা- সমালোচনা হয়েছে।
ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থী আফজালুর রহমান আবির বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি চরম অন্যায়। আমি মোট চারটি ইউনিটে আবেদন করেছি ১৬০০ টাকা দিয়ে। ভর্তি কার্যক্রম চালু না রাখায় একটি ইউনিটে অপেক্ষমাণ তালিকার প্রথমে থেকেও ভর্তি হতে পারছি না। অথচ আসন খালি পড়ে আছে। আমাদের কষ্টের টাকার কি কোনো মূল্য নেই? অন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে এখনো ভর্তি নিচ্ছে, সেখানে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র দুইটি মেধা তালিকা দিয়েই সিট খালি রেখেই ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করে দিচ্ছে। যা কোনোভাবেই যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নয়।’
আরেক ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থী সুমন মণ্ডল জানান, ‘এটা চরম অন্যায় করা হচ্ছে আমাদের সাথে। প্রথমে গুচ্ছ কমিটি ১২০০ করে টাকা নিল, এরপর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট প্রতি চারশো করে ফি নিলো। তারা যদি সিট ফাঁকা রেখে দেয়, আমাদের সুযোগ না দেয় তাহলে টাকাগুলো ফিরিয়ে দিক।’
ভর্তিচ্ছু এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, এতে করে অনেক ছাত্র-ছাত্রী বিপদে পড়ে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষ সিট খালি থাকা সত্ত্বেও কেন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করাবেন না? মনগড়া সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আরেক বার ভাববার জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি, আপনাদের একটু কষ্ট হলেও খালি সিটগুলো পূরণ করে নেবেন। আমাদের সন্তানদের ভর্তির সুযোগ করে দেবেন।
তাজিম আহাম্মেদ ওয়ালিন নামে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সবকিছু ভালোভাবে সম্পন্ন করে এই জায়গায় এসে ভুল করবেন না। আপনাদের কাছে এটা একটা সিট মনে হলেও এগুলো একেকটা স্বপ্ন, একেকটা জীবন।’
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাডমিশন হেল্প লাইন নামে একটি ফেসবুক গ্রুপের পরিচালক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ‘বেশ কয়েকটি বিভাগ যেমন দর্শন, ফোকলোর, ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ, স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগে প্রায় অর্ধেকের মতো সিট খালি আছে। সমাধান একটি করা যেতে পারে, যারা আগে ভাইভা দিয়েছে তাদের ভর্তি নেওয়া এবং একটা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে একদিনেই সাবজেক্ট দেওয়া ও ভর্তি সম্পন্ন করা।’
বিডি প্রতিদিন/এমআই