ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বেশকিছু রাস্তা থেকে সৃষ্ট ধুলাবালিতে অতিষ্ঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। এসব ধুলাবালি নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নেই তেমন কেনো উদ্যোগ। নিয়মিত পানি ছিটিয়ে না দেওয়ায় ধুলাবালির পরিমাণও বেড়েই চলেছে প্রতিনিয়ত।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘ক্যাম্পাসের রাস্তাগুলোতে প্রচণ্ড ধুলাবালির কারণে আমরা স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছি। এসব রাস্তায় স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করা আমাদের জন্য মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
চিকিৎসকরা বলছেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে আসা ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থীই এলার্জি ও অ্যাজমায় আক্রান্ত। একদিকে আবহাওয়ার পরিবর্তন আর অন্যদিকে ক্যাম্পাসের ধুলাবালি শিক্ষার্থীদের আরও বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর, স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবন থেকে বেগম খালেদা জিয়া হল অভিমুখের রাস্তা এবং শহীদ জিয়াউর রহমান হল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের অভিমুখের রাস্তা যেন ধুলার রাজ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণের কাজে ব্যবহৃত ভারী যানবাহন চলাচলের ফলে এসব রাস্তায় সৃষ্টি হয়েছে অনেক খানাখন্দ। আর এসব খানাখন্দ ইটের খোয়া আর বলি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। নিয়মিত পানি ছিটিয়ে না দেওয়ায় এসব জায়গা থেকেই সৃষ্টি হচ্ছে ধুলাবালি।
প্রচণ্ড ধুলাবালির কারণে ক্যাম্পাসে বের হলেই এলার্জির সমস্যা বেড়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম বিথির। যার ফলে তার শরীরে ছোপ ছোপ লাল দাগ দেখা দিচ্ছে। বিথি বলেন, ‘নিকাবের নিচে ২টি মাক্স ব্যবহার করেও ধুলাবালির কারণে প্রতিনিয়ত হাঁচি-কাশির জন্য নাক-গলা ব্যথাসহ ইনফেকশন হচ্ছে। প্রতিদিন ক্লাস থেকে এসে এলার্জিজনিত কারণে ঠিকমতো পড়তে পারছি না। এসব ধুলাবালি নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।’
চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী তীর্থ কান্তি প্রামাণিক বলেন, ক্যাম্পাসের রাস্তাগুলোতে প্রচণ্ড ধুলাবালির কারণে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করা আমাদের জন্য মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীরা মাস্ক পরে হাঁটলেও ধুলাবালি থেকে রক্ষা পাই না। বিশেষ করে মাদার বখ্শ হল থেকে চিকিৎসা কেন্দ্রে যাওয়ার রাস্তায় অনেক বেশি ধুলা। এসব ধুলাবালির জন্য আমরা স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে এসব ধুলাবালি নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান চিকিৎসক ডা. তবিবুর রহমান এস কে বলেন, ফাল্গুন-চৈত্র মাসে আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে অ্যাজমা ও এলার্জিজনিত সমস্যাগুলো এমনিতেই বৃদ্ধি পায়। এসবের পাশাপাশি বর্তমান সময়ে ক্যাম্পাসে ধুলাবালির কারণে শিক্ষার্থীরা এলার্জিজনিত রোগে আরও বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। বর্তমানে চিকিৎসা কেন্দ্রে আসা অন্তত ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী এলার্জি ও অ্যাজমায় আক্রান্ত।
প্রধান চিকিৎসক আরও বলেন, ক্যাম্পাসের রাস্তাগুলোতে ধুলাবালির কারণে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির মাত্রা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। এসব স্থানে দিনে অন্তত দুইবার পানি ছিটিয়ে দিলে ধুলাবালির সমস্যাটি নিরসন হবে এবং শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকিও কমবে।
ধুলাবালি নিরসনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, 'ক্যাম্পাসের রাস্তাগুলোতে ধুলাবালির সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। খুব দ্রুতই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ