দু’দিন পরেই শুরু হতে যাচ্ছে বাংলা পঞ্জিকার নতুন বছর, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ। উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলা নববর্ষের আগমন উদযাপন করা হলেও করোনার প্রকোপে গত দুই বছরে ভাটা পড়েছিল তাতে। তবে এবছর করোনার সংক্রমণ কমে আসায় আবারও আগের মত নববর্ষ উদযাপন হতে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে চলছে বর্ষবরণের প্রধান অনুষঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি।
সোমবার দুপুরে সরেজমিনে চারুকলায় গিয়ে দেখা যায়, বাঁশ ও কাঠের সমন্বয়ে বড় আকারের মাছ ও ঘোড়া ও টেপাপুুতুলের কাঠামো তৈরি করেছেন মিস্ত্রি ও শিক্ষার্থীরা। এরপর এগুলো কাগজের আবরণ ও রং করা হবে। এছাড়াও তিনটি বৃত্তের সাথে পাখির প্রতিকৃতির সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে ‘ফুলপাখি’। এবারের শোভাযাত্রায় বড় ‘স্ট্রাকচার’ হিসেবে থাকবে এগুলো।
কথা হয় চারুকলার ২৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সীমান্ত ঘোষের সাথে। তিনি জানান, প্রস্তুতি খুব ভালোই চলছে। চারটা প্রতিকৃতি বানানোর কাজ চলছে, মাছ, ঘোড়া, টেপা-পুতুল এবং ফুল-পাখি। ফুল-পাখি নিয়ে এবারে নতুন একটা প্রতিকৃতি থাকছে। পহেলা বৈশাখ একটি অসাম্প্রদায়িক উৎসব। এখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই যে একসাথে সংস্কৃতি চর্চা করে তারই প্রতীক হিসেবে এই প্রতিকৃতি বার্তা বহন করছে।
এদিকে, জয়নুল গ্যালারিতে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে নানান রং ও থিমের মুখোশ, পাখির অরিগামি ও মাটির সরা। আরেকদিকে চলছে মুখোশ বানানোর কাজ।
গ্যালারিতে আঁকিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছোটো-বড় মুখোশ ৩০০ থেকে ১৭০০ টাকা। এছাড়াও মাটির সরা ১ হাজার, বিভিন্ন ধরনের পাখি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, ছোটো বাঘ ২০০ টাকা, ঝুলন্ত পাখি ৫০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে।
এ বছর শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘নির্মল কর, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে’। এ প্রসঙ্গে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, এটি একটি প্রার্থনা সঙ্গীতের একটি অংশ। এই গানটির এই লাইন থেকে 'তুমি' শব্দটা বাদ দিয়েছি। করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের স্বাভাবিক জীবনের যত নেতিবাচক পরিস্থিতি এসেছে সেখান থেকে যেন আমাদের মুক্তি মেলে। একইসঙ্গে আগামীর দিনগুলো যেন মঙ্গলময় হয়।
উল্লেখ্য, মেট্রোরেলের কাজ চলার কারণে চারুকলার সামনের রাস্তা সরু থাকায় এবছর মঙ্গল শোভাযাত্রা টিএসসি সড়কদ্বীপ থেকে বের হয়ে স্মৃতি চিরন্তন হয়ে পুনরায় টিএসসিতে এসে শেষ হবে। শোভাযাত্রায় জনসমাগম সীমিত রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সকলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে।
এছাড়াও পহেলা বৈশাখে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোন ধরনের মুখোশ পরা এবং ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে চারুকলা অনুষদ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুভুজিলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি করা যাবে না।
ক্যাম্পাসে নববর্ষের দিন সকল ধরনের অনুষ্ঠান বিকাল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে অপরাহ্ন ৫টা পর্যন্ত প্রবেশ করা যাবে। ৫টার পর কোনভাবেই প্রবেশ করা যাবে না, শুধু বের হওয়া যাবে। নববর্ষের আগের দিন ১৩ এপ্রিল বুধবার সন্ধ্যা ৭টার পর ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্য কোন গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে কোন ধরনের যানবাহন চালানো যাবে না এবং মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণ নিষেধ। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাসরত কোন ব্যক্তি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের জন্য শুধুমাত্র নীলক্ষেত মোড় সংলগ্ন গেইট ও পলাশী মোড় সংলগ্ন গেইট ব্যবহার করতে পারবেন।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত