সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দায়ীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে সমাবেশ পরবর্তী মিছিলে 'ছাত্রলীগের হামলা'র প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনসমূহ। মঙ্গলবার দুপুরে মধুর ক্যান্টিনের সামনে থেকে একটি মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে অপরাজেয় বাংলার সামনে এক সমাবেশে মিলিত হয় তারা।
এর আগে, গত সোমবার সন্ধ্যায় সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দায়ীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে শাহবাগে সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে টিএসসি আসার পথে 'ছাত্রলীগের হামলা'র শিকার হওয়ার অভিযোগ করে তারা। এতে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার দাবিও করে সংগঠনগুলো। তবে, শাহবাগ থানার পুলিশ জানায়, মিছিলের সময় মোটরসাইকেলকে সাইড দেওয়া নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে এমন ঘটনা ঘটে।
ঘটনার প্রতিবাদে মিছিল পরবর্তী সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রাগীব নাঈম বলেন, 'বাংলাদেশের রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক অবস্থা কোনোভাবেই ভালো না। বছরের পর বছর এদেশের মানুষের ওপর এদেশের সরকাররা অত্যাচার করে আসছে। সরকারের জনগণের দুর্বস্থা নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই। আমরা প্রগতিশীল সংগঠনগুলো তাদের কাছে গিয়ে তাদের কথা শোনার চেষ্টা করি, তাদের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করি। যখন সীতাকুণ্ড কন্টেইনার টার্মিনালের হতাহতদের ক্ষতিপূরন ও বিচার দাবিতে আমরা মিছিল করছি, তখন সরকার সমর্থিত ছাত্র সংগঠন হামলা চালিয়ে আমাদের কয়েকজনকে আহত করে। এ্যাম্বুলেন্স যাচ্ছিলো কিন্তু তারা এ্যাম্বুলেন্সের আগে যেতে চায়, একজন রোগীর জন্য তাদের সহানুভূতি নেই। আমাদের দোষ আমরা আপনাদের কথা বলি, আপনাদের পাশে দাঁড়াতে চাই। আমরা শিক্ষার্থী সমাজকে, সকল সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে এই সরকারের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়াবো। '
এসময় ছাত্রফ্রন্ট(মার্কসবাদী) এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জয়দীপ ভট্টাচার্য, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকারসহ অন্য বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্রদল ও ছাত্র অধিকারের বিবৃতি
এদিক, 'প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহের মিছিলে হামলার' প্রতিবাদে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ছাত্রদল ও ছাত্র অধিকার পরিষদ। মঙ্গলবার ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আকতার হোসেন ও সদস্য সচিব আমান উল্লাহ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মনে করে ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে কোনোভাবেই মনে হয় না যে ছাত্রলীগ একটি ছাত্র সংগঠন। বিগত কয়েক বছরে সাধারণ শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, বিরোধী মতের ছাত্রসংগঠন সহ সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মীরা পর্যন্ত ছাত্রলীগের হামলা-নির্যাতনের শিকার হয়েছে। সুতরাং এটা স্পষ্টই প্রতীয়মাণ যে ছাত্র সংগঠনের লেবাসে ছাত্রলীগ একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ সারাদেশের ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রলীগের এই অব্যাহত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দল-মত নির্বিশেষে সকলের ঐক্যবদ্ধ হওয়া সময়ের দাবি।
বিবৃতিতে হামলায় আহতদের সু চিকিৎসা ও হামলায় জড়িতদের গ্রেফতারপূর্বক কঠোর শাস্তির আওতায় আনার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানায় সংগঠনটি।
অন্যদিকে, ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আখতার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন এক বিবৃতিতে হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তারা বলেন, 'সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছে। হলে হলে শিক্ষার্থীদের উপর চালাচ্ছে নির্যাতন-নিপীড়ন। ভিন্নমত দমনে গুণ্ডা ভাড়া করে এনে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করছে। সীতাকুণ্ডের অগ্নিকাণ্ডের প্রতিবাদে আহূত মিছিলে হামলা করার মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগ প্রমাণ করেছে এই কাঠামোগত সহিংসতা মূলত বর্তমান সরকারেরই ব্যর্থতা। এমন ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অথর্ব ও নির্বিকার ভূমিকায় না থেকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করার জোর দাবিও জানান তারা।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল