স্থানীয় ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলন করছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে কিছু দাবিও তুলে ধরেছে।
এবার সেই আন্দোলন প্রসঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেছেন, ‘গতকাল ক্যাম্পাসে আন্দোলন চলাকালে কিছু অবিবেচক ঘটনা ঘটেছে। যা শিক্ষার্থী সুলভ ছিল না। তারা অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন। এরা দুষ্কৃতকারী হবেন বলে আমরা ধারণা করছি। এদের জন্যই মূলত আন্দোলন ভিন্ন দিকে গড়ায়।’
সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের কনফারেন্স কক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
উপাচার্য বলেন, ‘প্রথম দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছিলেন। পরে এর নিয়ন্ত্রণ বহিরাগত দুষ্কৃতিকারীরা নেয়। ফলে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে এবং সহিংসতায় রূপ নেয়। তারা ঘটনাকে পুঁজি করে বড় কিছু করতে চেয়েছিলেন। তবে কিছু সংবেদনশীল শিক্ষার্থী বিষয়টি প্রশমনে কাজ করেছেন।’
উপাচার্য বলেন, ‘প্রথম দিকে সবাই সচেষ্ট থাকলে এত বড় ঘটনা ঘটত না। এখানে আমরা কাউকে দোষারোপ করতে চাই না। এই ধরনের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের আমরা বোঝাতে চেষ্টা করি। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে যখন ব্যর্থ হয়ে যাই, যখন বহিরাগতদের উসকানি থাকে, তখন নিয়ন্ত্রণের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের প্রয়োজন পড়ে। তারা কতটুকু কীভাবে দায়িত্ব পালন করেছে, এই বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না। আমার মনে হয় যে প্রথম দিকে সবাই একটু সচেষ্ট থাকলে এত বড় ঘটনা ঘটত না। এটা খুব দুঃখজনক। আমার নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে, এটা খুব ন্যক্কারজনক।’
উপাচার্য বলেন, ‘সার্বিক ঘটনা খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংঘর্ষের সার্বিক ঘটনা তদন্ত করবে। কতজন আহত হলো, গুলি কেন করা হলো, কারও কোনো অবহেলা ছিল কি না। তা দেখে সাত দিনের মধ্যে জানাবে। এ ব্যাপারে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষতে উপাচার্য বলেন, ‘গতকাল শিক্ষার্থীরা বেশ কিছু দাবি করেছেন। যেখানে বহিরাগত ক্যাম্পাসে অবাধ বিচরণ, আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা, ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাহিরের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয় ছিল। আমরা ইতোমধ্যে সেসব বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করেছি। ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের দৌরাত্ম কমাতে ব্যবস্থা নিয়েছি। সন্ধ্যার পর তারা ক্যাম্পাসে থাকতে পারবে না। তাছাড়া ক্যাম্পাসের প্রবেশ পথেও কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গুরুতর আহত শিক্ষার্থীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাহিরের অবস্থান করা শিক্ষার্থীদেরও সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তাছাড়া পূর্ণাঙ্গ আবাসিকতা নিয়েও কাজ করছি।’
স্থানীয়দের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্থানীয়রা আমাদের প্রতিপক্ষ না। তাদের সাথে একটা ভালো সম্পর্ক থাক সেটাই কাম্য। সেজন্য। আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের মেস মালিক ও রাজনীতিবিদদের সঙ্গে বসব।’ ‘এছাড়া সংঘর্ষের জেরে দুই দিন ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু আগামীকাল থেকে সেটা যথারীতি চলবে।’
এদিকে স্থানীয়দের সাথে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৩০০ জনকে আসামি করে নগরীর মতিহার থানায় মামলা করেছে পুলিশ। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘সরকারি কাজে বাধার দেওয়ার কারণে পুলিশ বাদী হয়ে এ মামলা করেছে। এতে ২৫০-৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।’
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল