ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসানের সঙ্গে মঈন নামে এক ঠিকাদারের ‘অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত’ অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। ‘সাথী খাতুন’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে ২ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের চারটি কল রেকর্ড সংবলিত একটি অডিও ক্লিপ পাওয়া যায়। এতে অর্থ লেনদেনের বিষয়ে কথা বলতে শোনা গেছে। এ ঘটনায় থানায় জিডি করেছেন রেজিস্ট্রার। অডিও ফাঁসের ঘটনায় তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
গত ১৯ মার্চের প্রজ্ঞাপনে কমিটিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হলেও এখনো তা জমা হয়নি। তদন্ত কমিটিতে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও উপ-রেজিস্ট্রার আলীবদ্দীন খানকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে রহস্যজনকভাবে কালক্ষেপণ করার অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তা ব্যক্তিদের কাছের হওয়ায় অভিযোগ থেকে পার পেয়ে যাবেন, এমন আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।
ফাঁস হওয়া অডিও’র প্রথম অংশে ওই ঠিকাদারের বলতে শোনা যায়, আমি মঈন (ইসিএল থেকে)। স্যার আজকে ওটা জমা দিয়ে দিলাম কালকে ওই টাকাটা ক্যাশ হবে। টাকাটা কোথায়, কখন প্লেস করবো আমাকে বললে আমি সেইভাবে প্রিপারেশন নিয়ে নিতাম। এসময় আলী হাসান ৩টার সময় কুষ্টিয়া থেকে টাকা দিতে বলে। ঠিকাদার ৩টায় সময় পাবে না বলে সাড়ে চারটায় ব্যাংক থেকে টাকা দেওয়ার কথা রেজিস্ট্রারকে জানায়। এসময় ঠিকাদার টোটাল টাকাটাই পাবেন কিন্তু রেজিস্ট্রারের ৪ লাখ টাকা সাড়ে চারটা থেকে সাড়ে ৫টার মধ্যে পাবেন বলে জানান। এসময় রেজিস্ট্রার বলেন, ‘ফোনে এগুলো বলার দরকার নাই’। পরে আবারো রেজিস্ট্রার ফোনে এসব কথা বলা যাবে না বলার জন্য ঠিকাদারকে সতর্ক করেন।
দ্বিতীয় অংশে ঠিকাদার রেজিস্ট্রারকে বলেন, ওটা (টাকা) ৪টার দিকে মনে হয় পাবেন। তখন তিনি আবারও অর্থ লেনদেনের বিষয়টি ফোনে না বলার ব্যাপারে সতর্ক করেন। তৃতীয় অংশে রেজিস্ট্রার টাকার বিষয়ে কাজ হয়েছে কিনা ঠিকাদারকে জিজ্ঞাসা করেন। তখন ঠিকাদার এখনো ব্যাংকে আছেন, কাজ শেষ হলেই তাকে জানাবেন বলে ওই অডিও ক্লিপে বলতে শোনা যায়। একইসাথে ঢাকার কনফারমেশনের জন্য ওই ঠিকাদার ব্যাংকে বসে আছেন বলে জানায়।
কথোপকথনের শেষ অংশে রেজিস্ট্রার ঠিকাদারের কাছে টাকার অবস্থা এবং আর কতক্ষণ লাগবে তা জানতে চান। এসময় ঠিকাদার আর আধা ঘণ্টার মতো লাগবে বলে রেজিস্ট্রারকে কোথাও বসে চা খেয়ে একটু অপেক্ষা করতে বলেন। ঠিকাদারকে ঢাকা থেকে ক্লিয়ারেন্স নিতে একটু সময় লেগেছে, আধা ঘণ্টার মধ্যে হয়ে যাবে বলে রেজিস্ট্রারকে ওই জায়গায় বসার কথা বলেন। তখন ব্যাংক বন্ধ হওয়ার সময় হয়ে যাচ্ছে বলে রেজিস্ট্রার ঠিকাদারকে তাগিদ দিতে শোনা যায় অডিওতে।
এসময় ঠিকাদার বলেন, আর বইলেন না, ঢাকা থেকে ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়েছে। কিভাবে যে করাইছি আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। আপনারা চেক দিয়েছিলেন অনলাইনের চেক না, এটা হলো ম্যানুয়্যাল চেক। পরে রেজিস্ট্রার ঠিকাদারের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি অল্প একটু অপেক্ষা করেন, আসতেছি। ব্যাগে ভরতেছি (টাকা), প্লিজ একটু রাখেন।
এ ঘটনায় ইবি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন রেজিস্ট্রার। জিডির বিষয়টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আননূর যায়েদ বিপ্লব নিশ্চিত করেছেন। জিডিতে বলা হয়, ফেক আইডিটি থেকে রেজিস্ট্রারের কণ্ঠসদৃশ কথোপকথন ভাইরাল হয়েছে। বিষয়টি ইডিট করা।
এদিকে অডিও ফাঁসের পর সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকরা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সমিতি। সমিতির সভাপতি এটি এম এমদাদুল হক বলেন, এটি একটি লজ্জাজনক বিষয়। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে এর বিচার দাবি জানাই।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বলেন, ‘এটা সুপার ইডিটিং। কন্ট্রাক্টরদের সাথে অনেক সময় অনেক ধরনের কথা বলি। বিভিন্ন কথা কাটছাঁট করে ভাইরাল করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমি থানায় জিডি করেছি।’
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, তদন্ত চলমান রয়েছে। আশা করি ঈদের আগে প্রতিবেদন দিতে পারব।
বিডি প্রতিদিন/এমআই