সম্প্রতি গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়েরকৃত মামলাকে কেন্দ্র করে মহল বিশেষের অশুভ তৎপরতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। আজ বুধবার ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে নিন্দাসহ এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
এতে বলা হয়, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রমের মাধ্যমে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন। কিন্তু তিনি আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন। সুতরাং ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে তা অবশ্যই বিচারিক প্রক্রিয়ায় আসতে হবে। এটিই সভ্য সমাজের রীতি। গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী কল্যাণ তহবিলের অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে প্রাপ্ত অভিযোগের বিষয়ে দুদক তদন্ত করে ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে ড. ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ড. ইউনূস দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিংয়ের সাথে জড়িত না হলে নিশ্চয়ই আইনী প্রক্রিয়ায় সেটি প্রমাণিত হবে। এ নিয়ে তথাকথিত কিছু কিছু সংগঠন বিবৃতির মাধ্যমে যে প্রতিবাদ করেছে তা আইনের শাসনের পরিপন্থী ও দুরভিসন্ধিমূলক বলে আমরা মনে করি। কেন না, তারা যে রাজনৈতিক দর্শনে বিশ্বাসী সেই রাজনৈতিক দলটি হত্যা-ক্যু ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আইনের শাসন আর গণতন্ত্রকে হত্যার মধ্যদিয়ে জন্ম নেয়। তারা মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত অর্জনকে পদদলিত করে এদেশকে দুর্নীতিবাজ ও লুটেরাদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিল। তাদের নেতার দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং বিচারের মাধ্যমে প্রমাণিত।’
বলা হয়েছে, ‘এই ষড়যন্ত্রের শিকড় যে আরো গভীরে প্রোথিত তা স্পষ্ট হয়েছে বিবৃতিদাতাদের প্রদত্ত তথ্যে। ১৯৭৮ সালে একজন অবৈধ সামরিক স্বৈরশাসকের প্রদত্ত রাষ্ট্রপতি পুরস্কারই প্রমাণ করে ড. ইউনূসের সাথে তাদের সম্পর্ক অনেক পুরনো। মূলত বাংলাদেশ বিরোধী প্রচার-প্রচারণা ও বিরাজনীতিকরণের ধারা প্রতিষ্ঠার অনুঘটকদের সাথে ড. ইউনূসের রয়েছে দীর্ঘদিনের সখ্যতা। এ কারণেই প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার প্রতিবাদ করতে গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির কথা তুলে এনে বস্তুত অর্থে তারা ঘোলাজলে মাছ শিকারের অপতৎপরতার বিষয়টিই স্বীকার করে নিলেন।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিএনপি-জামায়াতের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার অপকৌশল এবং ষড়যন্ত্রের কারণে ওয়ান-ইলেভেন সৃষ্টি এবং ধোঁয়াশাচ্ছন্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে অকার্যকর করে ভুঁইফোড় রাজনৈতিক দল গঠন করে এসব ব্যক্তিদের ক্ষমতার মসনদে বসানোর অশুভ তৎপরতা কারা চালিয়েছিল তা জাতি ভুলে যায়নি।’
আরও বলা হয়, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশি-বিদেশি এসব চক্র আবারও অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। আমরা এসকল চক্রান্তকারীদের ব্যাপারে দেশপ্রেমিক নাগরিকদের সজাগ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। নির্দোষ কোনো ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হয়, সে বিষয়ে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি। একইসঙ্গে ব্যক্তি পরিচয় বিবেচনায় না নিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় জিরো টলারেন্স নীতিতে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।’
বিডি-প্রতিদিন/শফিক