বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য একজন শিক্ষার্থীর প্রয়োজন গবেষণা কাজে অংশগ্রহণ করা। সেই সাথে নিজের কৌতূহলকে কাজে লাগিয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হয়। তবে এক্ষেত্রে সকল হতাশা কাটিয়ে সাহসের সঙ্গে লেগে থাকলেই বিদেশে উচ্চশিক্ষার পথ সুগম হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এডুমেক্স আন্তর্জাতিক এডুকেশন সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
মঙ্গলবার দুপুর ২টা চবির ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের মিলনায়তনে বিদেশি উচ্চশিক্ষা বিষয় এডুমেক্স কনসালটেন্সির উদ্যোগে আয়োজিত হয় সেমিনারটি।
সেমিনারে কী-নোট স্পিকার হিসেবে বক্তব্য রাখেন এরাসমুন্ডাস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ড. আশিকুর রহমান, সেশন চেয়ার হিসেবে বক্তব্য রাখেন ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহাদাত হোছাইন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শহীদুল হক।
ড. আশিকুর রহমান বলেন, উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার জন্য আমাদের বিভিন্ন দেশের দামি স্কলারশিপগুলোর দিকে নজর রাখতে হবে। তাছাড়া কিছু বিষয় আপনাকে মাথায় রেখে চলতে হবে, প্রথমত, আপনার একাডেমিক রেজাল্ট। এটা যতবেশি সম্ভব ভালো করতে হবে। কারণ যত ভালো রেজাল্ট তত বেশি স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এরপরে রয়েছে আপনার সিভি। এটা যত বেশি রিসার্চ বেইজড তবে ততবেশি ভালো। এরপর রয়েছে, মোটিভেশান লেটার, রেফারেন্স লেটার এবং সর্বশেষ আপনার ভাষাগত দক্ষতা প্রয়োজন। তবে আমাদের মধ্যে প্রচুর ভয় ও হতাশা কাজ করে। তাছাড়া পারিবারিক চাপও অনেক বেশি আমাদের ওপর প্রভাব ফেলে। এসব বিষয়গুলো বাদ দিতে হবে। এগুলো নিজের মধ্যে রাখলে কেউ সামনে এগিয়ে যেতে পারে না। স্কলারশিপের জন্য আমাদের কৌতূহল নিয়ে কাজ করতে হবে। নিজের মধ্যে সাহস রেখে কাজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী তাদের গ্রাজুয়েশন বা পিএইচডি ডিগ্রির জন্য বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যায়। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক একটা বিষয় কাজ করে। ইউরোপে এরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপে মাসিক ১৪০০ টাকা করে দেওয়া হয়। তাছাড়া শুধু ইউরোপে ১০ হাজারের বেশি ধরনের স্কলারশিপ দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানের বক্তা এমআইএউ’র সহকারী অধ্যাপক মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, মানুষকে কোনো বিষয়ে উপলব্ধি করানোর যে দক্ষতা একজন শিক্ষার্থী হিসেবে সেটা আমাদের খুবই প্রয়োজন। আপনি যতবেশি সামাজিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হবেন, ততই আপনার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। উচ্চশিক্ষা অর্জনে আপনার বৈশ্বিক ক্যারিয়ার সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। একবিংশ শতাব্দীর এই যুগে আপনার দক্ষতা আপনাকে সবার সামনে সুন্দর একটি অবস্থানে তুলে ধরবে।
আমেরিকার ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সাবেক ফ্যাকাল্টি মোহাম্মদ রাশেদ উজ্জামান বলেন, অধিকাংশ শিক্ষার্থী ইউটিউব দেখে বিদেশে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়। তবে সেটা আদতে কোনো সমস্যা সমাধানের মাধ্যম নয়। আপনাকে অভিজ্ঞদের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিতে হবে, যারা বাস্তবিকভাবে পূর্বে এসব বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। বাংলাদেশে থেকে যদি চিন্তা করো, তুমি বিদেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে যাবে, তবে তোমাকে নিজের দক্ষতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে আগে আমাদের বাধাগুলো খুঁজে বের করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথমত, কম্পিউটার ভিত্তিক দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এরপরই আমাদের ইংরেজি ভাষার দক্ষতা বাড়ানো প্রয়োজন।
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শহীদুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লে অন্তত একবার হলেও বাইরের দেশে যাওয়া প্রয়োজন। কারণ তুমি কঠোর পরিশ্রম করতে শিখবে, নিজেকে একজন নমনীয় নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে। ইংরেজি এবং রিসার্চ স্কিল থাকলেই একজন শিক্ষার্থী দাবি করতে পারবে যে সে একজন গ্লোবাল নাগরিক। একজন শিক্ষার্থীকে তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম বর্ষ থেকেই গবেষণা কাজের সাথে যুক্ত থাকতে হবে। আশা করি তোমরা চেষ্টা করলেই পারবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই