পেশাদার ফুটবলে কমিটমেন্ট মুখ্য বিষয়। ক্লাব বা খেলোয়াড়দের তা রক্ষা করতে হয়। ঘরোয়া ফুটবলে স্থানীয় খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স বা আচরণে অসন্তুষ্ট হয়ে অনেকে বলেন, এরা পেশাদার ফুটবলের জন্য যোগ্য নন। ২০০৭ সালে বাংলাদেশে পেশাদার ফুটবলের আবির্ভাব ঘটলেও অনেক খেলোয়াড়ের ভিতরে সেই মানসিকতা গড়ে ওঠেনি। এ ক্ষেত্রে খেলোয়াড়দের যেমন কমিটমেন্টের অভাব রয়েছে, তেমন ক্লাবগুলোও অনেক সময় তা মেনে চলে না। হয়তো নানান প্রতিকূলতায় তা সম্ভব হয়ে ওঠে না। প্রশ্ন হচ্ছে-বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে যেসব বিদেশি খেলোয়াড় খেলেন কিংবা কোচের দায়িত্ব পালন করেন, তারা কি কমিটমেন্ট রক্ষা করেন? বলা হয়, এ ক্ষেত্রে বিদেশিদের কাছে অনেক কিছু শেখার আছে। পেশাদারিতে তাঁরা অভ্যস্ত।
বাস্তবে বিদেশি খেলোয়াড় ও কোচদের কর্মকা মানার মতো নয়। অবশ্য তা সবার ক্ষেত্রে নয়। পেশাদার ফুটবলে চুক্তি মোতাবেক পারিশ্রমিক পরিশোধ করাটা বাধ্যতামূলক। ফুটবলার বা কোচের বেলায় একই নিয়ম। লক্ষ করলে দেখা যাবে আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা ফিফা প্রায়ই বাফুফে বা ক্লাবগুলোকে নোটিস পাঠাচ্ছে। বিদেশি ফুটবলারদের যথাসময়ে অর্থ শোধ না করায় নোটিস পাঠিয়ে সময় ঠিক করে লেখা হচ্ছে এতদিনের মধ্যে বকেয়া শোধ না করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে ফিফা। আর তাদের আইন মানেই নিষিদ্ধ। হতে পারে নির্ধারিত সময়ে কোনো খেলোয়াড়ের বকেয়া পরিশোধ করা হয়নি। কেউ তো আর ইচ্ছা করে টাকা বাকি রাখে না। নানান প্রতিকূলতায় নির্দিষ্ট সময়ে বকেয়া পরিশোধ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। বকেয়া প্রাপ্ত খেলোয়াড়ের সঙ্গে ক্লাব ঠিকই যোগাযোগ রাখছে। বলাও হচ্ছে সাময়িক সংকট কেটে গেলে পাওনা বুঝিয়ে দেবে। বাংলাদেশের কোনো ক্লাবই কি আছে বিদেশি ফুটবলার ও কোচের অর্থ বকেয়া রেখেছে? হয়তো ঠিক সময়ে দিতে পারে না এই যা।
পেশাদার ফুটবল মাঠে গড়ানোর পর থেকেই দেখা যাচ্ছে মৌসুম শেষ হতেই বিদেশি ফুটবলার ও কোচেরা তাঁদের দেশে ফিরে অর্থ পরিশোধে তাগাদা দিতে থাকেন। এমনকি ক্লাবের সঙ্গে চূড়ান্ত আলাপ না করেই ফিফার কাছে নালিশ করে বসেন। এখনো সেই কালচার চলছে। পেশাদার লিগের এমন কোনো ক্লাব নেই যে এ যন্ত্রণার শিকার হয়নি। চুক্তিতেই লেখা থাকে কয়েক কিস্তিতে পারিশ্রমিক পরিশোধ করা হবে। বিদেশিরা না মেনেই বাঁকা পথে যাচ্ছেন। বকেয়া টাকা তো পাচ্ছেনই, অযথা জরিমানাও আদায় করছেন।
ইয়ংমেন্স ফকিরেরপুলকে নিয়ে কি কা টাই না হলো! তাদের দলে খেলা এক উজবেক ফুটবলার ফিফার কাছে নালিশ করায় তারা নিষিদ্ধ হওয়ায় শঙ্কা ছিল। শেষ পর্যন্ত বকেয়ার পুরো অর্থ দেওয়া হলেও অযথা ক্লাবটিকে হয়রানি করা হলো। মোহামেডানের অভিজ্ঞ সংগঠক ফজলুর রহমান বাবুল যা জানালেন তা আরও ভয়ংকর। তিনি বলেন, ‘পাঁচ-ছয় বছর আগে উজবেকিস্তানের ফুটবলার মাইলাম মোহামেডানে খেলতে আসেন। পারফরম্যান্স ভালো না হওয়ায় আমরা তাঁকে কয়েকটি ম্যাচে নামিয়ে দেশে পাঠিয়ে দিই। তাঁর সঙ্গে সমঝোতা করেই টাকা পরিশোধ করা হয়েছিল। অথচ এ খেলোয়াড়ই ফিফার কাছে নালিশ করেছেন আমরা তাঁকে কোনো অর্থই দিইনি। বাফুফের কাছে চিঠি পাঠিয়ে ফিফা বলেছে মোহামেডান তাঁর বকেয়া পরিশোধ না করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে। এমনিতেই ক্লাব অর্থসংকটে, তার ওপর আবার ফিফার এ চিঠি পেয়ে তো ঘুম হারাম।’ ফজলুর রহমান বাবুলের কথা সত্য হয়ে থাকলে তো অন্যান্য ক্লাবের জন্য ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আসা যাক ব্রাজিলিয়ান কোচ সার্জিও ফারিয়াসের প্রসঙ্গে। উঁচুমানের কোচ তাঁর বায়োডাটাই বলে দেয়। ফারিয়াস বসুন্ধরা কিংসের কোচ হচ্ছেন তা নিশ্চিত। সময়স্বল্পতার কারণে তিনি কিংসের টিম ম্যানেজমেন্টকে জানিয়েছিলেন, ‘টিকিট পাঠিয়ে দাও আমি কাতারে এসে তোমাদের দলের দায়িত্ব নেব।’ ফারিয়াসের কাছে কিংস প্লেনের টিকিটও পাঠিয়ে দেয়। দোহায় এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে ফারিয়াস কিংসের হেড কোচের দায়িত্ব পালন করবেন। ৯ আগস্টই তাঁর কাতার পৌঁছানোর কথা। অথচ সেই ফারিয়াস করলেন কি, ইরাকের ডুহক ক্লাবের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলেন! প্রফেশনাল ফুটবলে যেখানে অর্থ বেশি পাবেন সেখাইে যাবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ফারিয়াস যা করলেন তাকে কী বলা যায়? বিদেশিরা যা খুশি করবেন তা কি ফিফার কাছে অন্যায় নয়? সত্যি বলতে কি বাংলাদেশের ফুটবলে এমন নাটক কখনো ঘটেনি। ব্রাজিলিয়ান কোচ হিসেবে ফারিয়াসের কাজটা কি ক্রাইমের মধ্যে পড়ে না?