শনিবার, ২২ জুন, ২০১৩ ০০:০০ টা
ডিজিটাল ক্যাম্পাস

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

রাস্তার দুপাশে সারি সারি সবুজ বৃক্ষ দাঁড়িয়ে আছে। লেকের দুদিকে কাচের মতো স্বচ্ছ জলে ফুটেছে সাদা শাপলা। এরই মধ্যে বয়ে গেছে পিচঢালা একটি পথ। এ পথেই রংতুলির অাঁচড়ে অঙ্কিত হয়েছে এক ইতিহাসের পথ, বিশ্বের দীর্ঘতম পথচিত্র। এটি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথ। বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথের এক কিলোমিটার পুরোটাই ছায়াঘেরা। ১৯৮৭ সালের ২৫ আগস্ট ৩২০ একর জমির ওপর বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনটি বিভাগ পদার্থ, রসায়ন ও অর্থনীতি নিয়ে ১৯৯১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি এর শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে এর বিভাগ সংখ্যা ২৫টি। শিক্ষার্থীর সংখ্যা আট হাজার। এক কিলোমিটার প্রবেশপথ পেরিয়েই গোলচত্বর। এর পশ্চিমে প্রশাসনিক ভবন এবং পূর্বে রয়েছে শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের জন্য বসার জায়গা। এখান থেকেই চোখে পড়বে একাডেমিক ভবন 'এ', কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ধারণ ও লালন করছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে চতুর্থ তলায় মুক্তিযুদ্ধ কর্নারে থরে থরে সাজনো মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক অন্তত এক হাজার ৬০০ বই, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণ, দেয়াল ছবি। রয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক চলচ্চিত্র দেখার সুবিধা। ক্যাম্পাসে নির্মাণ করা হয়েছে সিলেটের প্রথম মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ভাস্কর্য 'চেতনা ৭১'। এটি একাডেমিক ভবন 'এ' এর উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। ১২ ফুট উচ্চতা এবং ৬ ফুট প্রস্থ এ ভাস্কর্যটির ডিজাইন করেছেন মোবারক হোসাইন। বিশ্ববিদ্যালয়টির সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে টিলার ওপর ভাষা শহীদদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনার। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি পেয়েছে অনেক আগেই। পুরো ক্যাম্পাসই ফ্রি ওয়াইফাই নেটওয়ার্কভুক্ত। শুধু ক্যাম্পাসের লাপটপের মধ্যেই এটি সীমাবদ্ধ নয়। আবাসিক হলগুলোতেও রয়েছে এ সুবিধা। শুধু হালের ফেসবুক নয়, ইন্টারনেটেই শিক্ষার্থীরা জেনে নিচ্ছে তাদের পরীক্ষার রুটিন, ক্লাস রুটিন, এসাইনমেন্ট, জার্নাল আরও কত কি। তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে চলছে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়। তথ্যপ্রযুক্তিতেও শাবি সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখেছে। সম্প্রতি শাবিপ্রবি তৈরি করেছে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম সার্চ ইঞ্জিন 'পিপীলিকা'। চালু করেছে বিভিন্ন অলিম্পিয়াড। বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, পদার্থ অলিম্পিয়াডের মতো প্রতিযোগিতা। বাংলাদেশে বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করতে জনপ্রিয় লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের 'বিজ্ঞানের জন্য ভালোবাসা' শীর্ষক বিজ্ঞান শিক্ষা কার্যক্রম এদেশে বিজ্ঞান শিক্ষাকে যেন আরেক ধাপ উঁচুতে নিয়ে গেছে। এর কাছেই ১২০০ দর্শনার্থী ধারণক্ষমতা বিশিষ্ট শাবিপ্রবির কেন্দ্রীয় মিলনায়তন যা সিলেট বিভাগের বৃহত্তম মিলনায়তন। শোভাবর্ধনের জন্য পুরো ক্যাম্পাসের রাস্তার পাশে লাগানো হয়েছে সারি সারি গাছ। এ ছাড়াও রয়েছে পাঁচটি একডেমিক ভবন, পাঁচটি আবাসিক হল, মেডিকেল সেন্টার, শারীরিক শিক্ষা ভবন ও খেলার মাঠ। বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে। ক্লাসরুম সংকট, পরিবহন সমস্যা। সবচেয়ে বড় আবাসিক সুবিধা অনেক সীমিত। আট হাজার শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র পাঁচটি আবাসিক হল যার আসন সংখ্যা মাত্র দুই হাজার। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই কোনো সীমানাপ্রাচীর। এসব সংকট কাটিয়ে খুব দ্রুত বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হবে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

*আসাদুজ্জামান নয়ন

 

 

সর্বশেষ খবর