চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে দুই কয়েদির মধ্যে মারামারিতে নিহত সন্ত্রাসী অমিত কুমার মুহুরী (৩২) খুনের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে কোতোয়ালী থানায় চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার নাসির আহমেদ বাদি হয়ে এ মামলা করেন। মামলায় কারাগারে মারামারি করা অপর কয়েদি সেই রিপন নাথকেই (২৭) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় অমিতের অনুসারীরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের গ্রিল ও জানালা ভাঙচুর করে।
কারাগার সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ৩২ নম্বর সেলের একটি কক্ষে থাকতেন অমিত মুহুরী ও অপর দুই কয়েদী রিপন নাথ ও বেলাল। গত বুধবার রাত ১০টার দিকে কারাগারে কথা কাটাকাটির জের ধরে অমিত মুহুরিকে ইটের টুকরো দিয়ে আঘাত করে রিপন। তখন কারারক্ষীরা গুরুতর আহত অমিতকে উদ্ধার করে প্রথমে কারা হাসপাতাল এবং পরে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক খুরশীদ আনোয়ার চৌধুরী বলেন, ‘মাথায় গুরুতর জখম অবস্থায় অমিতকে হাসপাতালে আনা হয়। মাথার ক্ষত বন্ধ করতে ২৬টি সেলাই দেওয়া হয়। ভারি কোন বস্তু দিয়ে তার মাথায় আঘাত করা হয়েছে।’
চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার নাসির আহমেদ বলেন, ‘এ ঘটনায় রিপনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাছাড়া মারামারির কারণ এবং কারাকক্ষের ভেতরে ইট কিভাবে আসলো তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
জানা যায়, যুবলীগ কর্মী হিসেবে পরিচিত অমিতের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে রেলের দরপত্র নিয়ে জোড়া খুনসহ অন্তত ১৩টি মামলা আছে। হত্যা, পুলিশের ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগে আগেও তিনি একাধিকবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। সর্বশেষ ২০১৭ সালের আগস্টে চট্টগ্রাম নগরের এনায়েতবাজার এলাকায় বন্ধু ইমরানুল করিম ইমনকে খুন করে মরদেহ ড্রামে ভরে দীঘিতে ফেলে দেয় অমিত। ইমন হত্যা মামলায় পুলিশ ২০১৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর অমিতকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করে। তারপর থেকেই অমিত কারাগারে ছিলেন।
অন্যদিকে, রিপন নাথ সীতাকুণ্ড উপজেলার মৃত নারায়ণ চন্দ্র নাথের ছেলে। রিপন পাহাড়তলী থানার একটি অস্ত্র মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন।
তাছাড়া গত ৯ এপ্রিল পাহাড়তলীর সাগরিকা এলাকায় অর্গানিক জিন্স নামের একটি পোশাক কারখানায় ছুরি নিয়ে ঢুকে বেশকিছু কর্মীকে জিম্মি করার ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছিল। অশোভন আচরণের জন্য তাকে ওই কারখানা থেকে ছাঁটাই করা হয়।
এদিকে, কারাগারে শীর্ষ সন্ত্রাসী অমিত মুহুরী খুনের জেরে চমেক হাসপাতালে ভাঙচুর চালিয়েছে তার অনুসারীরা। গত বুধবার রাত ২টার দিকে হাসপাতালের ২৮ নম্বর নিউরোসার্জারি বিভাগে ভাঙচুর চালায়। হামলাকারীরা বিভাগের কলাপসিবল গেট ও জানালার কাঁচ ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ ধাওয়া দিলে তারা হাসপাতাল এলাকা ত্যাগ করে। এ সময় হাসপাতালে আতঙ্ক তৈরি হয়।
চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘প্রায় শতাধিক যুবক হাসপাতালে হামলা চালায়। এ সময় একটি কলাপসিবল গেট ও জানালার কাঁচ ভেঙে ফেলে হামলাকারীরা। পরে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তাদেরকে হাসপাতাল এলাকা থেকে বের করে দেয়।’
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন