শিরোনাম
১ মার্চ, ২০২১ ২১:০২

শান্তিপূর্ণ উচ্ছেদের পর লালদিয়ার চরের ৫২ একরে কাঁটাতার

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

শান্তিপূর্ণ উচ্ছেদের পর লালদিয়ার চরের ৫২ একরে কাঁটাতার

কর্ণফুলী নদী রক্ষায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে অবশেষে শান্তিপূর্ণভাবেই নগরের লালদিয়ার চরের বাসিন্দারা তাদের বসতবাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন। 

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের উচ্ছেদ অভিযানের মুখে নিজেরাই তাদের সেমিপাকা, কাঁচাপাকা বসতবাড়ি, ভাড়াঘর, দোকানপাট ভেঙে নিয়ে যান চরের বাসিন্দারা। ফলে উদ্ধার হওয়া ৫২ একর ভূমিতে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে অবৈধ দখলমুক্ত রাখার কাজ শুরু করেছে বন্দর।  
 
সোমবার সকাল থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষ ৬ জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ছয়টি জোনে ভাগ করে পতেঙ্গার লালদিয়ার চরের ৫২ একর জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে সকাল হতে না হতেই নিজেরাই নিজেদের মালামাল সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগে নেমে পড়েন এখানকার দীর্ঘদিনের বাসিন্দারা। এ সময় কেউ কেউ নামমাত্র মূল্যে বাড়ির অনেক জিনিসপত্র ও টিন, ইট, বাঁশ-কাঠ এসব স্পটে বিক্রি করে দেন। দীর্ঘ ৪৯ বছরের সম্পর্কচ্ছেদের কারণে এসময় নারী-শিশুদের কান্না ও আহাজারিতে হৃদয়বিদারক দৃশ্য নেমে আসে। 

লালদিয়াচর পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আলমগীর হাসান বলেন, লালদিয়ার চর ছেড়ে আমরা চলে যাচ্ছি। ১৪ হাজার মানুষকে পথে নামতে হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আমরা অহিংস আন্দোলন করেছি। মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে আমরা চলে যাচ্ছি। বন্দর চেয়ারম্যানের প্রতি আমাদের অনুরোধ, আমরা দেশের জন্য জমি ছেড়ে দিয়েছি। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আমরা পুনর্বাসন চাই, খাসজমি চাই।  

তিনি আরো বলেন, আমাদের নিষ্কণ্টক জায়গার পরিবর্তে ১৯৭২ সালে ৪০০ পরিবারকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে লালদিয়ার চরে জায়গা দেয়া হয়েছিল। নদী রক্ষার কথা বলে ৪৯ বছর পর আমাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। বর্তমান বিমানবাহিনীর ঘাঁটি জহুরুল হক তৈরির সময় আমাদের উচ্ছেদ করা হয়। ১৯৭২ সালে এ জায়গা দিয়েছে সরকারই। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের একটি দাবি, আমাদের পুনর্বাসন করা হোক। 
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় লালদিয়ার চরের বাসিন্দাদের উচ্ছেদের বিষয়টি। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও লালদিয়ার চর পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটিকে জানিয়ে সোমবার উচ্ছেদ শুরু হয়। 

এদিকে লালদিয়ার চর থেকে শান্তিপূর্ণভাবে বাসিন্দারা চলে যেতে থাকায় সেখানকার নতুন করে দখলে আসা ৫২ একরে কাঁটাতারের বেড়া দিচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। সকাল থেকে নিজ উদ্যোগে বাসিন্দারা বসতঘর ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেন। অনেকে আসবাবপত্র ও অন্যান্য মালামাল বিক্রি করে দেন নামমাত্র মূল্যে। কেউ কেউ রিকশা, ভ্যান ও ট্রাকের অভাবে মালপত্র নিয়ে অসহায় বসে আছেন রাস্তার ধারে। উচ্ছেদকালে বন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটসহ বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা লালদিয়ার চর এলাকায় ছিলেন। পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক র‌্যাব, পুলিশ, আনসার সদস্য ওই এলাকায় মোতায়েন ছিলেন। 

বন্দরের সদস্য (পরিকল্পনা ও প্রশাসন) মো. জাফর আলম বলেন, মসজিদ, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কবরস্থান এলাকা উচ্ছেদের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। উচ্চ আদালতের রায় ও নির্দেশনা অনুযায়ী ৫২ একর জায়গায় উচ্ছেদ অভিযানের আগে নোটিশ ইস্যু, মাইকিং করে লালদিয়ার চরের বাসিন্দাদের জানানো হয়েছে।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর