করোনা মহামারি দেখা দেওয়ার পর একটি শয্যার জন্য দিকবিদিক ছোটাছুটি ছিল গতবছর। সরকারি হাসপাতালে কোনো শয্যাই ছিল না। বেসরকারি হাসপাতাল বন্ধ। স্বাস্থ্য সেবায় তৈরি হয় বিপর্যস্ত পরিবেশ। এমন সময় যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেয় চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল। দ্রুত প্রস্তুত করে পৃথক করোনা ইউনিট। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে চট্টগ্রামবাসী। এরপর স্থাপন করে পৃথক করোনা ইউনিট, করোনার নমুনা পরীক্ষার ল্যাব ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা। সে হাসপাতালে এখন যোগ হয়েছে কোভিড ইউনিটের অধীনে করোনা পজেটিভ গাইনি রোগীদের পৃথক অবস্ এন্ড গাইনী কর্নার।
জানা যায়, হাসপাতালের নতুন ভবনের চতুর্থ তলায় ১০টি শয্যা নিয়ে চালু করা হয় করোনা প্রসূতি কর্নার। সেখানে একজন প্রসূতি বিশেষজ্ঞের নেতৃত্বে আছেন পাঁচজন মেডিকেল অফিসার, পাঁচজন নার্স ও তিনজন আয়া। এ ইউনিটে করোনা আক্রান্ত প্রসূতি রোগীদের নরমাল ডেলিভারি, সিজারসহ সকল চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে। তাছাড়া বর্তমানে শিশু হাসপাতালে আছে ১৮২ শয্যার করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ড এবং ২০ শয্যার আইসিইউ ওয়ার্ড।
মা ও শিশু হাসপাতালের করোনা ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব মো. রেজাউল করিম আজাদ বলেন, গত এক মাস ধরেই হাসপাতালে করোনা পজেটিভ প্রসূতি রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। প্রতিদিনই রোগী আসছে। কিন্তু তাদের জন্য কোথাও কোনো পৃথক চিকিৎসা-ব্যবস্থা নেই। তবুও এ হাসপাতালে প্রসূতি রোগী ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ১৭ জন করোনা পজেটিভ প্রসূতি রোগীর চিকিৎসা দেয়া হয়। এর মধ্যে পাঁচটির অপারেশন হয়। সামগ্রিক চিন্তায় নতুন করে প্রসূতি কর্নার চালু করা হয়। ইতোমধ্যে সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) এস এম মোরশেদ হোসেন বলেন, করোনা চিকিৎসার শুরু থেকেই মা ও শিশু হাসপাতাল নতুন নতুন সংযোজন করে চলেছে। এবার যুক্ত হল প্রসূতি কর্নার। করোনা চিকিৎসায় চট্টগ্রামের নানা শ্রেণী পেশার মানুষের ঐকান্তিক সহযোগিতায় এসব করা সম্ভব হয়েছে।
হাসপাতালের আজীবন সদস্য ফোরামের সদস্য সচিব মাহমুদুর রহমান শাওন বলেন, গত ২০ দিন ধরে মায়ের জন্য রাতদিন হাসপাতালেই আছি। নিজ চোখেই দেখলাম, প্রসূতি রোগীর চাপ, কষ্ট ও দুর্ভোগ। দেখেছি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা মায়ের মৃত্যু। এমন কঠিন মুহূর্তে মা ও শিশু হাসপাতালের করোনা ম্যানেজমেন্ট কমিটি প্রসূতি কর্নার চালু করে মানবিক দৃষ্টান্তই স্থাপন করল। এখন চিকিৎসা পাবেন প্রসূতি রোগীরা।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার