চট্টগ্রাম নগরের আন্দরকিল্লা মোড়। এখানকার মোড়েই প্লাস্টিকের ওপর স্তুপাকারে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিক্রয় নিষিদ্ধ সাকার ফিশ। সবগুলো সাকার ফিশই জীবিত। সেগুলো রীতিমত বিক্রি করা হচ্ছে। বিক্রেতা এক যুবক। তবে সাকার ফিশগুলো বিক্রি করা হচ্ছে ট্যাংরা মাছ বলে। প্রতি কেজির দাম দেওয়া হয়েছে ১৫০ থেকে ১০০ টাকা। ওই বিক্রেতার কাছে মাছগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে সে কিছুই বলতে পারেনি। বললেন, ‘তাকে একজন বিক্রি করার জন্য দিয়েছেন’। সবাই মাছগুলো উৎসুখ হয়ে দেখছেন।
প্রসঙ্গত, সাকার ফিশের পুরো নাম সাকার মাউথ ক্যাটফিশ। এর বৈজ্ঞানিক নাম হিপোসটোমাস প্লেকোসটোমাস। মূলত এটি বিদেশী মাছ। মাছটি দেশীয় জীববৈচিত্র্য এবং জলাশয়ের জন্য চরম হুমকিস্বরূপ। বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রজাতির সাকার ফিশ ১৬-১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। মাছটি পানি ছাড়াই প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বাঁচতে পারে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, মনে হচ্ছে কোথাও এই মাছের চাষ হচ্ছে। সেখান থেকে এগুলো বিক্রি করার জন্য আনা হয়েছে। কিন্তু এক সঙ্গে এতগুলো জীবিত মাছ বাজারে বিক্রি করার জন্য আনাটা জলজ জীববৈচিত্রের জন্য ভয়াবহ হুমকি। কারণ এগুলো জলজ জীবের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই মৎস্য বিভাগের উচিত, এখনই মাছটির চাষ, প্রজনন, বিপনন ও পরিবহন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা উচিত। তিনি বলেন, এটি বিদেশী এবং এ্যাকুরিয়াম নির্ভর মাছ। এ্যাকুরিয়ামের ভেতরে জমা হওয়া শ্যাওলা নিজেই পরিস্কার করে। কিন্তু পর্যায়ক্রমে নানাভাবে এটি খাল-বিল-নদী-জলাশয়-ডোবা-ড্রেনে ছড়াচ্ছে। তবে এটির মোটেও খাবার উপযোগী মাছ নয় এবং অর্থনৈতিকভাবেও কোনো অবদান নেই। এর শরীরটা শক্ত, মাংসও নেই। এ মাছ যদি দেশের জলজ প্রাণী বিচরণ ও বিকাশের উৎসস্থানগুলোতে ছড়িয়ে যায় তাহলে সেটা মৎস্য সম্পদের জন্য বড় বিপর্যয় ডেকে আনবে। এ গবেষক বলেন, মাছটির তিনটি বৈশিষ্ট আছে- দ্রুত প্রজনন বৃদ্ধি, অক্সিজেন ছাড়াই বাঁচতে পারা এবং হালকা ও দূষিত পানিতেও বাঁচা। তাই যত দূষিত পানিই হোক সে বেঁচে যাচ্ছে। এখনই উচিত সরকারিভাবে প্রজ্ঞাপন জারি করে মাছটি নিষিদ্ধ করা। দ্রুত নিষিদ্ধের ব্যবস্থা না নিলে এটি দেশীয় মাছের জন্য বড় আতঙ্ক হবে।
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বলেন, বাজারে সাকার ফিশ পাওয়ার বিষয়টা অবাক হওয়ার মত। তবে এ ব্যাপারে আমাদের কাছে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। খবর পেলে অবশ্যই আমরা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করব। যেহেত মাছটি খাওয়ার উপযোগী নয় এবং ক্ষতিকর। তাই এটি চাষ, বিপনন, প্রজনন বা পরিবহন করতে দেওয়ার সুযোগ নেই।
জানা যায়, গত ৩ এপ্রিল উপমহাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র এবং বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীর মোহনা হতে মদুনাঘাট সেতু পর্যন্ত ৬টি স্পটে নৌ পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে সাড়ে ৪ হাজার মিটার ঘেরা জাল জব্দ করে। এ সময় কচুখাইন এলাকা থেকে জব্দকৃত ঘেরা জালে মিলেছে মাছ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকারক সাকার ফিশ। তবে ক্ষতিকর মাছটি কেবল এখানে নয়, হালদা নদীর শাখা খাল কাটাখালীসহ অনেক খালেই আছে। কিন্তু এটি সাধারণ মাছের জন্য হুমকি হওয়ায় এটি দেশের জলজ প্রাণির জন্য আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এএম