যুক্তরাজ্যের লন্ডনে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আগামী মঙ্গলবার দেশে ফিরছেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সাধারণ একটি ফ্লাইটে তিনি দেশে ফিরবেন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে আগে জানানো হলেও শেষ পর্যন্ত কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তিনি দেশে ফিরবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাঁর সোমবার দেশে ফেরার কথা থাকলেও গতকাল রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনের দেশে ফেরা এক দিন পিছিয়েছে। সোমবার রওনা হয়ে তিনি মঙ্গলবার দেশে পৌঁছাবেন। এর আগে শুক্রবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা যতদূর জানি ওনার সঙ্গে দুই বউমা (তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও আরাফাত রহমানের স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান) আসার কথা রয়েছে। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবন ফিরোজাকে প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বেগম খালেদা জিয়াকে দলের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির নেতারা তাঁকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানাবেন। বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেট দিয়ে বের হয়ে দুই পুত্রবধূকে নিয়ে গুলশানের বাসা ফিরোজায় আসবেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত সড়কের পাশে সুশৃঙ্খল ও সারিবদ্ধভাবে দল এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা দাঁড়িয়ে থেকে দলীয় প্রধানকে স্বাগত জানাবেন। গতকাল সন্ধ্যায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত যৌথসভায় এসব সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা দেওয়া হয়। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সফরসঙ্গী হিসেবে থাকছেন তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী, এপিএস মাসুদুর রহমান এবং দুই গৃহপরিচারিকা ফাতেমা বেগম ও রূপা হক। গুলশানের বাসায় পৌঁছানোর পর ডা. জুবাইদা রহমান তাঁর মাকে দেখতে ধানমন্ডি যাবেন।
বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো দুই কেবিন ক্রু : এদিকে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং আওয়ামী সম্পৃক্ততা পাওয়ায় গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে গত শুক্রবার রাতে আল কুবরুন নাহার কসমিক ও মো. কামরুল ইসলাম বিপোন নামে বিমানের দুই কেবিন ক্রুকে সরিয়ে দেওয়া হয়। জানা গেছে, আগে থেকেই সিদ্ধান্ত হয় ঢাকা থেকে শনিবার সকালে যে ফ্লাইটটি লন্ডনের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে ওই ফ্লাইটটি রবিবার সন্ধ্যায় হিথরো এয়ারপোর্ট থেকে খালেদা জিয়াকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা করার কথা ছিল।
ফখরুলের অনুরোধ : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ফেরার দিন দলের নেতা-কর্মীদের যানজট সৃষ্টি না করে এক হাতে জাতীয় পতাকা, অন্যহাতে দলীয় পতাকা নিয়ে রাস্তার দুই ধারে সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনা জানানোর নির্দেশনা দিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আসা বিমানের ফ্লাইট বিমানবন্দরে নামার আগে-পরে নিচের সড়ক এড়িয়ে এলিভেডেট এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের অনুরোধ করেছেন তিনি। গতকাল সন্ধ্যায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা নিয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে গুলশানে যৌথ সভা শেষে এই অনুরোধ জানান মির্জা ফখরুল।
সাধারণ নাগরিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, জনগণের কাছে আমাদের আহ্বান থাকবে এই ফ্লাইটটি আসার পরে বা আগে তারা যেন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যেটা আছে সেটা যেন ব্যবহার করার চেষ্টা করেন। অর্থাৎ তারা যেন বিমানবন্দর থেকে কাকলী পর্যন্ত এই জায়গাটা এড়িয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করেন। এটা আমাদের অনুরোধ থাকবে। আমরা আশা করি জনগণ আমাদের সহযোগিতা করবেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের বলব যেভাবে আলোচনা করেছি সেভাবে যেন সবাই কাজ করি। শৃঙ্খলা নিশ্চিত করি।
গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিশেষ করে সাংবাদিকদের বলব, আপনারা সবসময় সহযোগিতা করেন। কিন্তু আপনারা যে গাড়ি নিয়ে সামনে গিয়ে কভার করার চেষ্টা করেন তাতে করে হয় কী আমাদের লোকজন ম্যাডামের গাড়ির সামনে চলে আসে। এটা একটা বড় সমস্যা। তাই বারবার করে বলার চেষ্টা করছি, উনি আসবেন প্রায় ৭-৮ ঘণ্টা জার্নি করে। এরপর যদি বাসায় ফিরতেই চার-পাঁচ ঘণ্টা লাগে তাহলে তো এমনিতেই অসুস্থ হয়ে পড়বেন। তাই বিমানবন্দর থেকে দ্রুত যাতে তিনি বাসায় ফিরতে পারেন সেটা নিশ্চিত করতে হবে।