সরকারের নানা ধরনের উদ্যোগেও রপ্তানি বহুমুখীকরণ করা যাচ্ছে না। একক পণ্য, একক বাজার বা একক অঞ্চল নির্ভরতার কারণে দেশের পণ্য রপ্তানিতে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ ভাগের বেশি আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এভাবে একক পণ্য ও একক বাজারের ওপর নির্ভরতার কারণে হঠাৎ কোনো কারণে রপ্তানিতে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যেও দেখা যায় পোশাকের পর দ্বিতীয় পণ্যের মধ্যে বড় ধরনের তফাত রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে বের হওয়ার জন্য পণ্যের বহুমুখীকরণ জরুরি। কারণ এক পণ্যের ওপর নির্ভর করে যেসব দেশের এলডিসি উত্তরণ হয়েছে, পরে তারা ঝুঁকিতে পড়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ৩ হাজার ২৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে ৫০, যুক্তরাষ্ট্রে ১৯, যুক্তরাজ্যে ১১ শতাংশ তৈরি পোশাক যায়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি পণ্যের ওপর পূর্বের ১৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ২৬ শতাংশ করেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন এক নির্বাহী আদেশে প্রথমে শুল্ক ৩৭ শতাংশ ঘোষণা করেছিল। পরে সেটি স্থগিত করে আগের শুল্কের ওপর আরও ১০ শতাংশ শুল্কারোপ করে। এতে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি পণ্যের ওপর আগে যেখানে ১৬ শতাংশ শুল্ক দিতে হতো, এখন সেখানে তিন মাসের জন্য শুল্ক দিতে হচ্ছে ২৬ শতাংশ। এরপর থেকে আবারও আলোচনায় এসেছে একক পণ্য, একক বাজার বা একক অঞ্চল নির্ভরতার বাইরে পণ্য রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণের। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস জুলাই-মার্চে মোট ৩ হাজার ৭১৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে গত মার্চ মাসে তৈরি পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, চামড়াবিহীন জুতা, প্লাস্টিক, প্রকৌশল পণ্য এবং পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। অন্যদিকে কৃষিপণ্যের রপ্তানি কমেছে।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে দেশ থেকে ৩ হাজার ২৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি। মার্চে ৩৪৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ। এরপর দ্বিতীয় পণ্য হিসেবে চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি হয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। ৯ মাসে এই পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৮৫ কোটি ডলারের। শুধু মার্চে ৯ কোটি ৪৫ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। অর্থাৎ পোশাকের তুলনায় ২ হাজার ৯৪০ কোটি ডলার তফাৎ রয়েছে প্রথম আর দি¦তীয় পণ্য রপ্তানি পণ্যের মধ্যে। এ ছাড়া তৃতীয় সর্বোচ্চ ৮১ কোটি ডলারের কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি। তবে মার্চ মাসে কৃষিপণ্যের রপ্তানি কমেছে ২৫ দশমিক ৭২ শতাংশ। এক্সক্লুসিভ ক্যান প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসির বলেন, রপ্তানিতে বৈচিত্র্য বাড়ানোর জন্য বিদেশে বিভিন্ন প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। আমাদের নীতি ঠিক করতে হবে। করপোরেট ট্যাক্স হার কমাতে হবে। অন্যান্য দেশ কীভাবে রপ্তানি বাড়িয়েছে সে নীতি আমাদের অনুসরণ করতে হবে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, আমাদের রপ্তানি একটি পণ্যের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। আমাদের রপ্তানি বহুমুখীকরণ করা উচিত। এটি এখন সময়ের দাবি। শুধু কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের ওপর নির্ভর করে টিকে থাকা সম্ভব নয়। বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে উদ্ভাবনে যেতে হবে, নতুন বাজার খুঁজতে হবে। টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য আমাদের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে কাজে লাগাতে হবে। এজন্য আমাদের দুর্নীতি দূর করতে হবে এবং স্বচ্ছতা বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সমস্যা নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য সহযোগী অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনার পথ খোলা আছে। যেকোনো সমস্যা সমাধান করা হবে।