‘অন্য দেশকে দোষ দেওয়ার সঙ্গে দেশের ডিপ স্টেট নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। গত তিনটা নির্বাচন ডিপ স্টেট, আমলাতন্ত্র এবং রাজনীতিবিদরা নষ্ট করেছেন। তাই অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জগুলো আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমি মনে করি লুক ইস্ট পলিসি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।’ গোলটেবিল বৈঠকে এ মন্তব্য করেছেন বক্তারা।
গতকাল সেন্টার ফর পলিসি অ্যানালাইসিস অ্যান্ড অ্যাডভোকেসির (সিপিএএ) উদ্যোগে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। সিপিএএর প্রেসিডেন্ট সাবেক সচিব ড. মো. শরীফুল আলম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। গোলটেবিলে প্যানেলিস্ট হিসেবে অংশগ্রহণ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এম শাহীদুজ্জামান, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (সার্ক ও বিমসটেক) রাষ্ট্রদূত আবদুল মোতালেব সরকার, নেক্সাস ডিফেন্স অ্যান্ড জাস্টিসের প্রেসিডেন্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মাদ হাসান নাসির, নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের (এসআইপিজি) পরিচালক প্রফেসর তৌফিক এম হক, দৈনিক নয়া দিগন্তের নির্বাহী সম্পাদক মাসুমুর রহমান খলিলী, সাওয়াব ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এস এম রাশেদুজ্জামান, তরুণ সমাজচিন্তক আলী আহসান জুনায়েদ এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদী। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ক্লাইমেট চেঞ্জ বিশেষজ্ঞ ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহমদ বক্তব্য দেন। বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ভূরাজনীতিবিদ প্রফেসর দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর ইন্দো-সেন্টিক পররাষ্ট্রনীতির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছিল। এর ফলে আমরা বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছি। তাই এ প্যারাডাইম থেকে বেরিয়ে নতুন করে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। অন্য দেশকে দোষ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের ডিপ স্টেট নিয়ে ভাবতে হবে। গত তিন নির্বাচন ডিপ স্টেট, আমলাতন্ত্র এবং রাজনীতিবিদরা নষ্ট করেছেন।’ প্রফেসর এম শাহীদুজ্জামান বলেন, ‘দক্ষিণ-দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের পাশাপাশি আমাদের মিয়ানমারের সঙ্গে মানবিক করিডর নিয়ে আলোচনা করতে হবে। মানবিক করিডর নিয়ে সিভিল সোসাইটিতে বেশ বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। তাই এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার।’ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক রাষ্ট্রদূত আবদুল মোতালেব সরকার বলেন, ‘বিশ্বের ২৫ শতাংশ মানুষ দক্ষিণ এশিয়ায় বাস করে। আর যদি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে একীভূত করি তাহলে বিশ্বের ৩৪ শতাংশ মানুষ এ অঞ্চলে বাস করে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে অসংহত অঞ্চল।’ দৈনিক নয়া দিগন্তের নির্বাহী সম্পাদক মাসুমুর রহমান খলিলী বলেন, ‘চীন ও মার্কিন প্রশাসনের মধ্যে সমঝোতা না হলে বার্মা অ্যাক্ট বাস্তবায়ন করা অসম্ভব। মিয়ানমারকে ন্যূনতম গণতন্ত্রায়ণের পথে না নিলে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।’ ডিফেন্স নেক্সাস জাস্টিসের প্রেসিডেন্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ হাসান নাসির বলেন, ‘করিডর বিষয়ে আমরা যদি ভালোভাবে সিদ্ধান্ত না নিই তাহলে খুব বিপদে পড়ব। যারা করিডর নিয়ে কাজ করছেন তারা অনেকে বাংলাদেশের নাগরিকও নন। তাই জাতিসংঘ ও চীনের সহায়তা ছাড়া এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না।’ সভাপতির বক্তব্যে সিপিএএর প্রেসিডেন্ট ড. মো. শরীফুল আলম বলেন, ‘সিপিএএ একটি বুদ্ধিবৃত্তিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে। ফলে আমরা সবার মতামত ও পরিপ্রেক্ষিতকে গুরুত্ব দিয়ে থাকি।’