চট্টগ্রাম নগরের আকবর শাহ্ থানার বিশ্ব কলোনি এলাকায় টাকা চুরির অভিযোগে নিজের ছেলে মো. হাছানকে (১৪) শাসন করেন মা কুলসুম বেগম (৩৮)। কিন্তু মারধরের এক পর্যায়ে হাছান ছিটকে পড়ে খাটের লোহার অ্যাঙ্গেলের সঙ্গে লেগে মাথায় গুরুতর আঘাত পায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে নিস্তেজ হয়ে পড়ে হাছান পরে মারা যায়। গত সোমবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় হাছানের বাবা বেলাল হোসেন বাদী হয়ে মা কুলসুম বেগম ও মামা ফারুক ইসলামকে (২৪) আসামী করে আকবর শাহ্ থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশ কুলসুম ও ফারুককে তাদের বাসা থেকে গ্রেফতার করে।
নিহত কিশোরের মো. হাছান নগরের পাহাড়তলী থানার ওয়ার্লেস কলোনি এলাকার বাসিন্দা বেলাল হোসেনের (৪২) ছেলে। তাদের বাড়ি মাগুরা জেলায়।
হাছানের বাবা বেলালের দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী কুলসুম বেগম নগরের আকবর শাহ থানার বিশ্বকলোনি আল হেরা মসজিদ গলিতে আলাদা বাসায় বসবাস করেন। ভাই ফারুকও পাশাপাশি আরেক বাসায় থাকেন।
পুলিশ জানায়, গত মঙ্গলবার কুলসুম ও ফারুককে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। তারা হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে ঘটনা এবং ঘটনা পরবর্তী বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালত দুইজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ওয়ালী উদ্দিন বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে তথ্য পাই যে, হাছান বাসার চালের ভেন্টিলেটরে লোহার রডের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু আলামত দেখে সন্দেহ হয়। তখন আমরা কুলসুমকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে কুলসুম হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন। পরে কুলসুম ও তার ভাই ফারুককে গ্রেফতার করা হয়। গত মঙ্গলবার তাদের আদালতে হাজির করলে আদালত তাদের কারাগারে সোপর্দ করেন। তবে ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত নয়। মা ক্রোধের বসে শাসন করতে গিয়ে ঘটনাটি ঘটেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার হাছান কুলিং কর্নারে তার মামা নুরনবী ইসলাম সোহেলের মানিব্যাগ থেকে এক হাজার টাকা চুরি করে পালিয়ে মায়ের বাসায় চলে আসে। সোহেল বিষয়টি কুলসুমকে জানানোর পর তিনি ক্ষুব্ধ হন। গত সোমবার রাত ১১টার দিকে ছেলেকে শাসন করতে গিয়ে বেদম মারধর করেন। মারধরের একপর্যায়ে ছেলেকে ধাক্কা দিলে হাছান ছিটকে পড়ে খাটের লোহার অ্যাঙ্গেলের সঙ্গে লেগে মাথার পেছনে গুরুতর আঘাত পায়। এতে রক্তক্ষরণ হয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। ছেলের সাড়াশব্দ না পেয়ে কুলসুম ভয় পান। পরে তার ভাই ফারুককে ডেকে আনেন। তখন দু’জনে খুনের বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে আত্মহত্যা হিসেবে প্রচারের পরিকল্পনা করেন। দু’জন মিলে হাছানের মৃতদেহ বাসার ভেন্টিলেটরের লোহার রডের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখেন। রাত পৌনে ২টার দিকে তারা বাসার বাইরে এসে চিৎকার করে কান্না শুরু করেন। একজন প্রতিবেশি আসলে তাকে বাসার বাইরে রেখে দরজার ফাঁক দিয়ে ওড়না কেটে লাশ নিচে নামায়। একজন চিকিৎসককেও ডেকে আনা হয়। তিনি এসে হাছানকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/এএম
