চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে উঠে আসছে কোনো জাতীয় মানের সাতারু। বিগত সময়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থা আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক সুইমিং পুল নির্মাণ করলেও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে ছিল না কোন উদ্যোগ। ফলে সুইমিংপুল থাকলেও সুইমার সৃষ্টি হয়নি। তবে এবার সুইমার সৃষ্টিতে দেখা দিয়েছে আশার আলো। এবারের জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে সুইমিংয়ের ৯ জন প্রশিক্ষণার্থী। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাঁতারু তৈরিতে প্রশিক্ষণে আরো সুবিধা বাড়ানো দরকার। যদি অনান্য ইভেন্টের মতো এই সাতারকেও এগিয়ে নিতে হয় তাহলে সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলে চট্টগ্রাম থেকে আগামী জাতীয় সাতারু উঠে আসতে ভূমিকা রাখবে এই সুইমিংপুল।
সাবেক জাতীয় সাঁতারু মাহবুবুর রহমান সাগর বলেন, সুইমিংপুল তৈরি হয়েছে ৫ বছর হচ্ছে। কিন্তু এই ৫ বছরে জাতীয় পর্যায়ে সাতার প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার মতো খেলোয়াড় সৃষ্টি করতে পারিনি আমরা। এর মূল কারণ হচ্ছে বিগত সময়ে সুইমিং নিয়ে যারা কাজ করেছে তারা অভিজ্ঞ ছিল না, যারা অভিজ্ঞ তাদের কাজে লাগানো হয়নি। তারপরও আমরা যখন নানা বিষয়ে বলতাম তারা তখন সাঁতারু তৈরির চেয়ে বাণিজ্যিকভাবে সাতার প্রশিক্ষণে বেশি মনোযোগী ছিল। যার কারণে আমাদের আন্তর্জাতিক মানের সুইমিংপুল থাকার পরও সাঁতারু সৃষ্টি করতে পারেনি। তিনি বলেন, জাতীয় পর্যায়ে সাঁতারু তৈরির একটা টিম তৈরি করতে হবে। তাদের সেভাবে প্রশিক্ষণের জন্য সুযোগ দিতে। তাদের জন্য যে সুযোগ সুবিধা দরকার তা যদি দেওয়া হয় তাহলে আগামী চট্টগ্রাম থেকে জাতীয় পর্যায়ে সাতার প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য সাঁতারু তৈরি করতে পারবো। পাশাপাশি বর্তমান এ্যাডহক কমিটিতে যারা আছেন, তারাও যদি উপকমিটি গঠনে সাঁতারে যাদের অভিজ্ঞতা আছে, তাদের কাজে লাগান তা হলে ভবিষ্যতে সাঁতার প্রশিক্ষণার্থীরা উপকার পাবে।
সাঁতার ট্রেনার দ্বিনুল ইসলাম বলেন, প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্য থেকে প্রতিশ্রুতিশীল সাঁতারু পাওয়া গেলেও উদ্যোগের অভাব ছিল। সাঁতার শিখতে আসা শিশু-কিশোরদের প্রতি নজর দিয়ে তাদের গড়ে তুলতে পারলেই ভবিষ্যতে সুইমারের অভাব হবে না। ইতিমধ্যে জাতীয় জুনিয়র জাতীয় সাতার প্রতিযোগিতায় আমাদের ৯ জন অংশ নিয়েছে, তারা টিকছে। এটা অবশ্যই আমাদের জন্য আনন্দের।
জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা (সিজেকেএস) অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে নগরীর কাজীর দেউড়ি এম.এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন আউটার স্টেডিয়ামের দক্ষিণ পার্শে দুই একর ভূমির ওপর নির্মাণ করে সুইমিং পুল কাম কমপ্লেক্স। এটির নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ১১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। নির্মাণকাজ শেষে ২০১৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর পুলটি উদ্বোধন করা হয়। মূলত দক্ষ সাঁতারু তৈরি ও প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য সুইমিং পুলটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৫ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও এখান থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো কোনো সুইমারও সৃষ্টি হয়নি। এর মূল কারণ হিসেবে বিগত সময়ে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) কার্যকর উদ্যোগের অভাবকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও ওই সময়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শিশু-কিশোরদের সাঁতার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আয় করেছে সিজেকেএস। সাতার প্রশিক্ষণের জন্য ট্রেইনার রয়েছে নারী-পুরুষ মিলে ৫ জন। প্রতিদিন এই ট্রেনাররা পালা করে ৯টি ব্যাচে সাঁতারের প্রশিক্ষণ দেন শিশু-কিশোরদের। প্রতিজন থেকে মাসে সাঁতার প্রশিক্ষণের জন্য নেওয়া হয় ৩ হাজার টাকা। এক মাস ট্রেনিং দেওয়ার পর ভর্তি করা হয় নতুন প্রশিক্ষণার্থী।