জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে ছাত্রলীগ নেতা কর্মীদের হাতে হলের প্রভোস্ট লাঞ্ছিত হয়েছে। শুক্রবার রাত সাড় নয়টায় ওই আবাসিক হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ওবায়দুর রহমান হলের গণরুমে নতুন শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিতে গেলে এ ঘটনা ঘটে। এসময় প্রথম বর্ষের নবাগত ছাত্ররা ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ৪৪তম ব্যাচের (২য় বর্ষ) জুনিয়র ছাত্রলীগ কর্মীরা ৪৫তম ব্যাচের (১ম বর্ষ) নবীন শিক্ষার্থীদের নিয়ে গণরুমে বসেন। এ সময় হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ওবায়দুর রহমান নবীন শিক্ষার্থীদের খোঁজ-খবর নিতে হলের গণরুমে প্রবেশ করেন। এসময় হল প্রভোস্টকে গণরুমে প্রবেশ করতে দেখে জুনিয়র ছাত্রলীগ কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। পরে ওই জুনিয়র কর্মীরা বিষয়টি সিনিয়র ছাত্রলীগ নেতাদের জানালে তারা এসে হল প্রভোস্টের উপর চড়াও হন। পরে প্রভোস্ট অধ্যাপক ওবায়দুর রহমান গণরুম থেকে বেরিয়ে আসলে শাখা ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মহিতোষ রায় টিটু, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক বশিরুল হক, সহ-সম্পাদক ইকরাম উদ্দিন অমি, ছাত্রলীগ কর্মী শামীম শিকদার (৪০তম ব্যাচ), আসাদ রিমন (৪০তম ব্যাচ), রবিউল ইসলাম (৪২তম ব্যাচ), আজিম হোসেন রতন, (৪২তম ব্যাচ) অনিক আদনান সৌম্য (৪২তম ব্যাচ)-সহ ছাত্রলীগের ৩০-৩৫ নেতাকর্মী তাকে ঘিরে ধরেন। এ সময় শাখা ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মহিতোষ রায় টিটোসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতা ওই হল প্রভোস্টকে ‘তুই’ সম্বোধন করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং মারতে উদ্যত হন। এসময় প্রথম বর্ষের নবাগত শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পরেন। পরে সাধারণ শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের মধ্যস্থতায় প্রভোস্ট হল ত্যাগ করেন।
ওই প্রভোস্টের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাদের পূর্বের ঝামেলা থেকেই এমনটি হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রলীগ কর্মী। এ ঘটনার একটি অডিও রেকর্ড বাংলাদেশ প্রতিদিনের হাতে এসেছে। রেকর্ডে হল প্রভোস্টকে উদ্দেশ্য করে উত্তেজিত ছাত্রলীগ নেতাদের গালিগালাজ করতে শোনা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও মীর মশাররফ হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তাইমুর রহমান রাসেল এবং অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মহিতোষ রায় টিটোকে পাওয়া যায়নি। এছাড়া মীর মশাররফ হোসেন হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ওবায়দুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা বলেন, প্রভোস্টের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ছাত্রলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মহিতোষ রায় টিটো শহীদ রফিক জব্বার হলের আবাসিক ছাত্র হলেও অবৈধভাবে মীর মশাররফ হোসেন হলে অবস্থান করেন। তার বিরুদ্ধে এর আগে ক্যাম্পাসে সাংবাদিক নির্যাতন, রিক্সা চালক ও সাধারন ছাত্রদের মারধর, মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের আবাসিক হলে গভীর রাতে এক ছাত্রীর সঙ্গে রাত্রি যাপনের সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে শাখা ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক ওই নেতা। ২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি সোমবার গভীররাতে মীর মোশারফ হোসেন হলে ১১০/বি নং কক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীসহ তাকে উদ্ধার করা হয়।
বিডি-প্রতিদিন/ ১২ মার্চ, ২০১৬/ রশিদা