দেশে প্রথমবারের মতো টিকিটের সাথে খাবার সরবরাহের সুবিধা নিয়ে ট্রেন সেবা চালু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চালু হওয়া এ ট্রেনের খাবার সরবরাহের অজুহাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছে সাধারণ যাত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা। যাত্রা শুরুর প্রথমদিনেই ঢাকা ও চট্টগ্রামে উভয়পথে ট্রেনটি ১৪শ' ৯২টি টিকেটের মধ্যে সর্বমোট ৩১৪ টিকিট। এতে চট্টগ্রামে ১৮৭টি ও ঢাকায় ১২৭টি টিকেট বিক্রি হয়েছে। যা মোট টিকিটের ২১ শতাংশ। রবিবার চট্টগ্রামে সরেজমিনে এসব চিত্র দেখা যায়। কাউন্টারেরই আছে শত শত টিকেট।
ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওযা ট্রেনে ১৯৫ টাকার খাবার মেন্যুতে দুটি খেজুর, একটি করে আপেল, জুস ও কেক সরবরাহ করা হয়। চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনে রোজার ইফতারি হিসাবে যাত্রীদের দেয়া হয়েছে ২টি পেঁয়াজু, বেগুনি ১টি, খেজুর ২টি, জিলাপী ১টি, জুসপ্যাক ও আপেল একটি করে। এতে ট্রেনটির বিষয়ে অনেক যাত্রীই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
তবে এ ট্রেন নিয়ে যাত্রীদের সেবার মান বৃদ্ধি বিষয়ে রেলমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা ও নজরদারি থাকলেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ‘কৌশলী’ ভূমিকার কারণে খাবারসহ টিকেটের দামের বিষয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে রেল অঙ্গনসহ যাত্রীদের মাঝেই। এ বিষয়ে রেলের মহাপরিচালক (ডিজি) আমজাদ হোসেনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
গতকাল রবিবার প্রথম দিনে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটিতে ১২৭টি টিকিট থেকে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৯০ টাকা আয় করেছে রেলওয়ে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যাওয়া ট্রেনটিতে ১৮৭টি টিকিট বিক্রি করেছে সর্বমোট ১ লাখ ৫০ হাজার ৬১১ টাকা। স্বাভাবিক নিয়মে ট্রেনটিতে ৭৪৬ টিকিটে ৫ লাখ ৬৮ হাজার ৬০০ টাকা বিক্রির কথা ছিল। মূলত বিরতিহীন ট্রেনের নামে অতিরিক্ত ভাড়ার পাশাপাশি খাবার সরবরাহের জন্য যাত্রীপ্রতি ১৯৫ টাকা আরোপ করায় ট্রেনটির প্রতি যাত্রীদের আগ্রহ কম বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের চট্টগ্রাম থেকে ভ্রমণ করা যাত্রী এমদাদুল হক চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, বিরতিহীন ট্রেন হিসেবে প্রথম ভ্রমণ করছি। তবে যে পরিমাণ ভাড়া আদায় করা হয়েছে সে হিসেবে সেবা পাওয়া যায়নি। খাবার মেন্যু বাবদ ১৯৫ টাকা ও সার্ভিস চার্জ নেয়া হলেও নামমাত্র ইফতারি সরবরাহ করা হয়েছে। এভাবে সেবা প্রদান করলে খাবার মেন্যুযুক্ত এ সার্ভিসে দ্বিতীয়বার ভ্রমণ করা অসম্ভব বলে জানিয়েছেন তিনি।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ট্রেনের টিকিটের জন্য যাত্রীদের আগ্রহ রয়েছে। তবে রোজায় ঈদের টিকিটের জন্য চাপ বেশি। ফলে রোজাকালীন সময়ে ট্রেন ভ্রমণ কম করায় সোনার বাংলা ট্রেনেও যাত্রী তুলনামূলক কম। বিরতিহীন ট্রেন হওয়ায় রোজার পর থেকে প্রচারণা বাড়ালে ট্রেনটির প্রতি যাত্রী আগ্রহ বাড়বে বলে মনে করছেন তিনি।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি গত ২৫ জুন শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সকাল সাড়ে এগারটায় আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। রবিবার সকাল ৭টায় ট্রেনটি প্রথমবারের মতো ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে যাত্রা শুরু করে। প্রতিটি টিকিটের সাথে ১৯৫ টাকার খাবার সংযুক্ত থাকায় প্রতিটি টিকিটের দাম এক তৃতীয়াংশ বেড়ে যায়। এ রুটে ট্রেনের টিকিটের চাহিদা থাকলেও শুধুমাত্র খাবার সংযুক্ত করায় সর্বমোট ১৪৯২ টিকিটের মধ্যে ৩১৪টি টিকিট বিক্রি হয়েছে।
রেলওয়ের তথ্যমতে, ইন্দোনেশিয়া থেকে নতুন কোচ আমদানির পর রেলের সবচেয়ে জনপ্রিয় রুট ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে যাত্রীদের দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী নতুন একটি ট্রেন সার্ভিস চালুর বিষয়টি সামনে চলে আসে। ঈদের আগেই ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বিরতিহীন সোনার বাংলা এক্সপ্রেস নামের একটি ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের প্রতিটি শোভন চেয়ার টিকিটের মূল্য ধরা হয়েছে ৩৪৫ টাকা। এর সাথে ৩৫ টাকা বিরতিহীন চার্জ (মূল ভাড়ার ১০ শতাংশ হারে), পরিবেশিত খাবারের মূল্য ১৯৫ টাকাসহ সর্বমোট ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ৬০০ টাকা। অন্যদিকে, এসি চেয়ার টিকিটের মূল ভাড়া ৫৭০ টাকার সাথে আনুষঙ্গিক খরচসহ মোট ভাড়া ১ হাজার এবং এসি সিট টিকেটের মূল ভাড়ার ৬৮৫ টাকাসহ সর্বমোট ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১০০ টাকা।
বিডি-প্রতিদিন/ ২৬ জুন, ২০১৬/ আফরোজ