আলোচিত পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ অব্যাহতি দেওয়া হয়। কিন্তু অব্যাহতি পাওয়ার পর পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের অবস্থান নিয়ে ধোয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি কোথায় আছেন, সে খোঁজ দিতে পারেননি তার বাবা। খবর বিডি নিউজের।
গতকাল সরকার বাবুলের অব্যাহতির প্রজ্ঞাপন জারি করার পর থেকে মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি তার বাবা আবদুল ওয়াদুদ। বাবুল আক্তারের বাবা জানিয়েছেন, “ওর যে বোন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থাকে- লাভলী, সে ফোনে বলেছিল, বাবুল শ্বশুরবাড়িতে আছে।” কিন্তু মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের পর বাবুল ঢাকার বনশ্রীর শ্বশুরবাড়ি থেকে বেরিয়ে যান বলে স্বজনরা জানিয়েছিলেন।
এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে পদোন্নতি পাওয়ার পর এসপি বাবুল আক্তারকে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়। কয়েক দিনের মাথায় ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হন তার স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। আলোচিত এ খুনের তিন মাস পূর্ণ হলেও এখনো পুলিশ নিশ্চিত করছে না, কী কারণে খুন হয়েছেন মিতু। জানাতে পারছে না খুনের হোতা, নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী কে বা কারা। পুলিশ কিলার ভাড়া করা কামরুল ইসলাম ওরফে মুছা সিকদারকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে এ কথা বলেই থেমে আছে। যদিও পুলিশের দাবি, মুছাকে গ্রেফতার করা গেলেই উন্মোচিত হবে হত্যারহস্য। কিন্তু মুছার পরিবার বলছে, মুছাকে পুলিশই আটকে রেখেছে। অথচ এ কথা পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করছে না। এ অবস্থায় রহস্য উন্মোচন হওয়ার বদলে কেবলই জট পাকাচ্ছে। এ ঘটনার পর পুলিশ সাতজনকে গ্রেফতার করে। এ ছাড়া ৫ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন রাশেদ ও নবী। কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া মুছা ও কালু এখনো পুলিশি খাতায় পলাতক। এ ঘটনার পর ২৪ জুন রাতে বাবুল আক্তারকে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের ভূঁইয়াপাড়ায় শ্বশুরের বাড়ি থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। টানা ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে আবার শ্বশুরের বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। এর পর থেকে প্রায় দেড় মাস বাবুল অফিসে যাননি। ৩ আগস্ট পুলিশ সদর দফতরে গেলেও তিনি কাজে যোগ দেননি বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন। স্ত্রী হত্যা মামলার বাদী বাবুল দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় এসে তার শ্বশুরবাড়িতে ওঠেন। বর্তমানে তিনি সেখানেই আছেন। পদোন্নতি পেয়ে এসপি হয়ে বাবুল চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পুলিশ সদর দপ্তরে বদলি হয়ে আসার পর গত ৫ জুন সকালে বন্দরনগরীর ওআর নিজাম রোডে সন্তানের সামনে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে।
স্ত্রী খুন হওয়ার পর দুই সন্তানকে নিয়ে বনশ্রীতে শ্বশুর বাড়িতেই থাকতেন বাবুল। সেখান থেকে গত ২৪ জুন মধ্যরাতে তাকে ডিবি কার্যালয়ে তুলে নিয়ে ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের সময়ই তাকে পদত্যাগপত্র দিতে বাধ্য করা হয়েছিল বলে গুঞ্জন রয়েছে।
এদিকে, মিতু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মো. কামরুজ্জামান এখন ঢাকায়। বাবুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সে রকম কোনো তথ্য তার কাছে নেই। তিনি বলেন, যেহেতু আমি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, তিনি গ্রেফতার হলে আমার জানার কথা।
বিডি-প্রতিদিন/ ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/ আফরোজ