চট্টগ্রাম মহানগরের প্রথম শ্রেণীর ‘অভিজাত’ বেসরকারি হাসপাতাল সিএসসিআর। এই সেবাকেন্দ্রেই চিকিৎসক দম্পতির নবজাতককে মৃত ঘোষণা দিয়ে ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ দেন। মঙ্গলবার অবিশ্বাস্য এই ঘটনাটি ঘটেছে।
নবজাতকের মাতাপিতা দু’জনই সরকারি চিকিৎসক। পিতা ডা. নুরুল আজম কক্সবাজার জেলা সদর হাপাতালের মেডিক্যাল অফিসার এবং মা ডা. রিদওয়ানা কাউসার তুষার বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর ডেন্টাল সার্জন।
সিএসসিআরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. জামাল আহমেদ বলেন, বিষয়টি অবশ্যই দুঃখজনক। এ ব্যাপারে আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটিকে কালই প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার রাত একটায় সিএসসিআর হাসপাতালে চিকিৎসক দম্পতির এক সন্তান জন্মগ্রহণ করেছিল। জন্মের পর গাইনি বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন, ‘বাচ্চা শ্বাস নিচ্ছে। তাকে দ্রুত এনআইসিইউতে (নিউনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) নেওয়া হোক’। চিকিৎসকের নির্দেশে এনআইসিইউতে নেওয়ার দুই ঘণ্টা পর নবজাতকের মৃত্যু সনদ দিয়ে একটি প্যাকেটে ভরে বাচ্চাকে ৬১২ নং ক্যাবিনে দিয়ে যায়। সিএসসিআরের দায়িত্বরত ডাক্তারদের অবহেলায় ১০ ঘণ্টা বয়সী নবজাতককে মৃত্যু হয়েছে বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন বলে অভিযোগ অভিভাবকের। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কথায় আস্থা আনতে না পেরে চিকিৎসক মা নিজেই নবজাতকের ফুটফুটে চেহেরাটা এক পলক দেখতে অস্থির ছিলেন। পরে মায়ের ধারণাই সত্য হলো- প্যাকেট খুলে বাচ্চার মুখ দেখতেই হতবাক মা।
নবজাতকের মা ডা. রিদওয়ানা কাউসার তুষার বলেন, আমি দেখলাম- বাচ্চা নড়াচড়া করছে। কিন্তু ততক্ষণে শরীর বেশ ঠাণ্ডা হয়ে যায়। পরিবর্তন এসেছে গায়ের রংয়ে। বিষয়টি তাৎক্ষণিক হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসকদের বললেও তারা গুরুত্ব দেয়নি। বললেন, বাচ্চা নয়, গায়ের মাংস নড়াছড়া করছে। এই অবস্থায় আমি নিজেই বাচ্চাকে নিয়ে গেলাম চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালে। হাসপাতালের ওয়ার্মারে দেওয়ার পর শরীর স্বাভাবিক হলো। কিন্তু সেখানে বেড খালি না থাকায় আরেকটি হাসপাতালে বাচ্চাকে ভর্তি করি। আল্লাহর রহমতে বাচ্চা এখনো জীবিত।
তিনি বলেন, ট্যাপ দিয়ে মোড়ানো প্যাকেটটি আমাকে খুলতে বাধা দিলেন। কিন্তু আমি জোর করে প্যাকেট খুলে দেখি বাচ্চা নড়াচড়া করছে। আবারও এনআইসিইউতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য বললে সেখানে দায়িত্বরত ব্যক্তি বললেন, বাচ্চা মৃত। আমি বললাম, বাচ্চা জীবিত। তিনি বলেন, বাচ্চা নয়, শরীরের মাংস নড়ছে। আমি বললাম, পরীক্ষা করে দেখুন। কিন্তু তিনি পরীক্ষা করতে অস্বীকৃতি জানান। এনআইসিইউতে দায়িত্বরতদের অবহেলার কারণেই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এনআইসিইউতে নেওয়া হলেও সেখানে বাচ্চার কোন পরিচর্যা করা হয়নি। কারণ তার নাক-মুখও পরিস্কার করা হয়নি।
নবজাতকের পিতা ডা. নুরুল আজম বলেন, দুইঘণ্টা ধরে ব্যবস্থা না নেওয়ায় বাচ্চার অবস্থার অবনতি হয়েছে। যথা সময়ে যদি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হতো তাহলে এমন হতো না। আর তাদের অপারগতা থাকলে তা তো অবশ্যই আমাদের আগে জানাতে হবে।
তবে হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার তানভির জাফর দাবি করে বলেন, তারা নবজাতকটিকে মৃত ঘোষণা করেনি। হাসপাতালে ওয়ার্মার খালি না থাকায় আমরা আগেই বলেছিলাম পাশের হাসপাতালে নিয়ে যেতে।
বিডি-প্রতিদিন/০৪ অক্টোবর, ২০১৬/মাহবুব