রিক্রুটিং এজেন্সি খোকন ট্রাভেলস এজেন্সির মালিক লায়ন আমির গণি খোকনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মকবুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি ২৫ জনকে বিদেশ পাঠানোর জন্য ২২ লাখ টাকা তুলে দেন আমির গণি খোকনের কাছে। টাকা হাতে পেয়েই বিদেশ পাঠানোর নানা টালবাহানা করে শেষে গা ঢাকা দেন তিনি। এদিকে বিদেশ গমনেচ্ছু ওই ২৫ ব্যক্তির টাকা উদ্ধারে নেমে প্রাণও হারাতে হলো মকবুল হোসেনকে।
শুক্রবার রাতে খোকন ট্রাভেলস এজেন্সির অফিসেই মকবুলের মৃত্যু হয়। শনিবার সকালে অফিসটির একটি কক্ষ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এটা হত্যা না স্বাভাবিক মৃত্যু তা নিয়েও রহস্যের ধুম্রজাল তৈরি হয়েছে। মকবুলের মত্যু নিয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
২৫ ব্যক্তিদের বিদেশ পাঠাতে না ফেরে তাদের টাকা ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মকবুল। কিন্তু বারবার অফিস পরিবর্তন করে তাকে নাজেহাল করে ছাড়েন খোকন। কখনো গুলশান, কখনো বনানী, কখনো বাড্ডা। মকবুল খবর পেয়ে গেলেই সবকিছু গুটিয়ে নতুন জায়গায় অফিস খুলতেন খোকন।
গত মাসে মকবুল খবর পান, খোকন গুলশানের ১৩৬/৩৭ নং রোডের ৫/এ নং বাসার ৪র্থ তলায় খোকন ট্রাভেলসের অফিস নিয়েছেন। মকবুল ওই অফিসে যান। স্টাফদের কাছ থেকে নম্বর যোগাড় করেন। খোকনের সঙ্গে কথা বলেন। খোকন অফিসে এসে টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলেন। মকবুল হোসেন সেদিন থেকে ওই অফিসেই অবস্থান নেন। অফিসের একটি কক্ষে অবস্থান করছিলেন তিনি। কিন্তু সেখান থেকে আর টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরা হয়নি। যেই ২৫ ব্যক্তির কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিলেন, তাদেরও টাকা ফেরত দিতে পারেননি।
সংসারের একমাত্র অবলম্বনকে চিরতরে হারিয়ে মকবুলের পরিবারে যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। মকবুলের বড় ছেলে লিবিয়ায় গিয়ে নিখোঁজ। তার অন্য সন্তান সাইদুল ইসলাম নবীন স্নাতক তৃতীয় বর্ষে পড়ছে। এই অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে সে। একদিকে বাবাকে হারানোর শোক, অন্যদিকে বিদেশ গমনেচ্ছু ওই ২৫ ব্যক্তির অর্থ পরিশোধের দায়।
সাইদুল ইসলাম নবীন বলেন, বাবার সঙ্গে খোকনের নিয়মিত কথাও হতো। কিন্তু বাবা অফিসে থাকাকালে তিনি প্রতিশ্রুতি দিলেও দেখা করেননি। এরই মধ্যে গত শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তার বাবার মোবাইল থেকে অফিসের পিয়ন নূরুল আকতার রনি ফোন করে মৃত্যুর খবর দেন।
তিনি আরও জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন তার বাবা বিছানার ওপর। এছাড়া শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার মতো কালো কালো দাগও ছিল। পরে পুলিশকে ফোন করলে লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল মকবুলের মরদেহ দাফন করা হয়েছে। সাইদুল ইসলাম নবীনের দাবি, তার বাবার মোবাইল ফোনের কললিস্ট ডিলিট করা পেয়েছেন তারা। তিনি সব ডকুমেন্ট তার কাছেই রাখতেন। সেগুলোও পাওয়া যায়নি। এছাড়া সঙ্গে একটি ডায়েরি রাখতেন। ডায়েরিতে সবকিছু লিখে রাখতেন। সেটাও তারা পাননি। অপমৃত্যুর মামলা হলেও তার বাবাকে খুন করা হয়েছে বলে দাবি নবীনের।
বিডি প্রতিদিন/৭ নভেম্বর, ২০১৬/ফারজানা