দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে যাওয়া, শিল্প খাতে জ্বালানি সরবরাহে অনিশ্চয়তা, বিনিয়োগে স্থবিরতা, নানাবিধ দুর্নীতির কারণে দেশের অর্থনীতির গতি কমেছে। এডিপি বাস্তবায়ন পুরোটাই চলছে ঋণের ওপর, রাজস্ব আয় না বাড়িয়ে এভাবে চলতে থাকলে অর্থনীতিতে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসবে। গতকাল ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বেসরকারি খাতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিদ্যমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পর্যালোচনা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। এ সময় ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদের সভাপতিত্বে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) ড. মঞ্জুর হোসেন, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. এ কে এনামুল হক, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (গবেষণা), মুদ্রানীতি বিভাগ মাহমুদ সালাহউদ্দিন নাসের, পরিচালক (এসএমই ও স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্ট) নওশাদ মুস্তাফা, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের অর্থনৈতিক কর্মকর্তা মো. রাবিউল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, ২০২৫ অর্থবছরে বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা আনয়ন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে রপ্তানি ৩.০৯% কমেছে। অন্যদিকে আমদানি বেড়েছে ৪৬.৮%। সুদের হার বেড়েছে। ২০২৪ সালের জুনে ১১.৫২% থেকে বেড়ে ২০২৫ সালের মে মাসে ১২.১১% এসে পৌঁছেছে। কর আহরণের পরিমাণ বাড়াতে এনবিআরকে আরও উদ্যোগী হতে হবে, যদিও এ ধরনের কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না, বরং ব্যবসায়ীদের হয়রানি অনেক গুণে বেড়েছে। ড. মঞ্জুর হোসেন বলেন, অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কমে গেছে, এমতাবস্থায় বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। সরকার এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখছে, আমাদের সামগ্রিক প্রস্তুতির বিষয়ের ওপর নজর দিতে হবে। এলডিসি উত্তরণ নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা বিভিন্ন প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এটা শুধু সরকারের প্রস্তুতির বিষয় নয়, বেসরকারি খাতের প্রস্তুতি নিতে হবে। ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের এডিপি বাস্তবায়ন পুরোটাই চলছে ঋণের ওপর, যেটা কোনোভাবেই টেকসই প্রক্রিয়া নয়। তাই অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় ও কর আহরণ বাড়ানোর ওপর বেশি হারে মনোনিবেশ করতে হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ অন্যান্য অবকাঠামোর উন্নয়ন হলেও যোগাযোগ সংযোগসহ অন্যান্য সেবা প্রাপ্তিতে বেশ পিছিয়ে রয়েছি।
ড. এ কে এনামুল হক বলেন, সিলেটের সাদাপাথর কাণ্ডে ১০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এ টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন হয়নি। দুর্নীতি যে খুব একটা কমেছে তা বলা যাবে না, অর্থনীতিকে বাঁচাতে হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে এবং দুর্নীতির কারণে শুধু বদলি দিয়ে শাস্তি দিলে হবে না, মানুষের ভিতরকার পরিবর্তন প্রয়োজন। মাত্র ২৩ লাখ করদাতা নিয়ে দেশকে বেশি দূর নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, তাই করদাতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এনবিআরের মূল কাজ হলো করদাতা বাড়ানো, যদিও তারা হয়রানি করতে বেশি আগ্রহী। মাহমুদ সালাহউদ্দিন নাসের বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি এখন বেশ কঠোর বলে বেসরকারি খাতের অভিযোগ রয়েছে, তবে আমরা বেসরকারি খাতের সহনীয় পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছি। জ্বালানি স্বল্পতা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণেও বিনিয়োগ কাক্সিক্ষত মাত্রায় আসছে না, শুধু উচ্চ সুদহার এককভাবে দায়ী নয়।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল