২০১০ সালে মুক্তি পেয়েছিল জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘ভালবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’ ছবিটি। পারিবারিক ও ত্রিভুজ প্রেমের গল্পের এ ছবিটিতে মুখ্য তিনটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন- শাকিব খান, অপু বিশ্বাস ও রোমানা। কিন্তু অন্তরালের কথা হলো- এ ছবিতে প্রথমে কিন্তু শাকিব, বিদ্যা সিনহা মিম ও রোমানাকেই কাস্ট করা হয়েছিল। সে হিসেবে প্রযোজক তাদের তিনজনকে সাইনিং মানি দিয়ে সাইনও করিয়েছিলেন। কিন্তু পরে শাকিবের ইচ্ছাতেই ছবিটি থেকে বিদ্যা সিনহা মিমকে বাদ দিয়ে অপু বিশ্বাসকে নিতে এ ছবির প্রযোজক মশিউর রহমান খোকন ও ইসরাইল হোসেনকে বাধ্য করেন শাকিব খান। কিন্তু প্রযোজক শাকিবকে বলেছিলেন বিদ্যা সিনহা মিমকে তো সাইনিং মানি দিয়ে সাইন করানো হয়ে গেছে, ওকে তো বাদ দেওয়া যাবে না। এমন কথায় প্রযোজককে শাকিব সাফ জানিয়ে দেন অপুকে এ ছবিতে নেওয়া না হলে তিনি এতে অভিনয় করবেন না। শাকিবের এমন জেদের কারণে বিপাকে পড়েন নির্মাতা। কারণ তখন শাকিব ছাড়া অন্য কোনো নায়কের ছবি তেমনভাবে চলছিল না। চলচ্চিত্র দুনিয়ার মানুষের কথায়- শাকিব তখন এ সুযোগে প্রায় স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছিলেন। অপু ছাড়া ছবি করবেন না (কারণ অপুকে ২০০৮ সালেই গোপনে বিয়ে করে রেখেছিলেন), দেরি করে সেটে আসা, শুটিং ফাঁসানো, ছবির মাঝপথে এসে বাড়তি টাকা দাবি করা এমন ভূরি ভূরি অভিযোগ শাকিবের বিরুদ্ধে করেছেন ভুক্তভোগী অনেক নির্মাতা। যাই হোক, শাকিবের স্বেচ্ছাচারিতার মুখে প্রযোজক বাধ্য হয়েছিলেন বিদ্যাকে বাদ দিয়ে এ ছবিতে অপুকে নিতে। এ প্রসঙ্গে বিদ্যা সিনহা মিম বলেছিলেন, ‘প্রযোজক ছবিটিতে আমাকে সাইন করান, সাইনিং মানিও দেন। এরপর মহরত ও শুটিং শুরু হবে। আমার কস্টিউমও প্রায় তৈরি হয়ে গেছে। এমন সময় হঠাৎ প্রযোজক এসে বেশ লজ্জিতভাবে আমাকে জানান, শাকিবের কারণে ছবিটি থেকে আমাকে বাদ দিয়ে অপু বিশ্বাসকে নিতে হচ্ছে। এতে আমার মন খারাপ হলেও আমি আর কথা বাড়াইনি, সাইনিংয়ের টাকাটা নিজ থেকেই প্রযোজককে দিয়ে দিয়েছিলাম।’ এদিকে ২০১৭ সালে শাকিবের সন্তানসহ অপু বিশ্বাস প্রকাশ্যে আসায় অপুর সঙ্গে শাকিবের সম্পর্কের অবনতি ঘটলে তখন সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে শাকিব বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিলেন- ‘হ্যাঁ, ২০১০ সালে যখন এ ছবিটি নির্মাণ হতে যাচ্ছিল তখন অপুর হাতে তেমন কোনো ছবির কাজ ছিল না। আর তখনই অপু বগুড়ায় বাড়ি নির্মাণ করছিল, টাকার অভাবে নির্মাণকাজ আটকে গেলে সে আমাকে এসে অনুরোধ করে এ ছবিটি থেকে বিদ্যাকে বাদ দিয়ে যাতে তাকে নেওয়া হয়। আমিও তাঁর কথামতো প্রযোজককে ডেকে বিদ্যাকে বাদ দিয়ে অপুকে নিতে বাধ্য করেছিলাম।’
২০০৬ সালে শাকিব-অপু প্রথমবার জুটি বাঁধেন এফ আই মানিক পরিচালিত ও ডিপজল প্রযোজিত ‘কোটি টাকার কাবিন’ ছবিতে। প্রথম ছবিতে কাজ করতে গিয়েই দুজনের মধ্যে অন্যরকম সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর ২০০৮ সালে গোপনে তারা বিয়ে করেন। ২০১৬ সালে তাদের সন্তান আব্রাহাম খান জয়ের জন্ম হয়। তা-ও গোপনে। অপুর কথায় এর কারণ নাকি শাকিব তখন চাননি তাদের বিয়ের কথা ফাঁস এবং সন্তানের জন্ম হোক। শাকিবের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই নাকি অপু সন্তান জয়কে পৃথিবীর আলো দেখান। শাকিব যখন অপুকে স্ত্রী হিসেবে প্রকাশ্যে স্বীকৃতি এবং সন্তানের কথাও প্রকাশ্যে আনতে দিচ্ছিলেন না তখনই অপু বাধ্য হয়ে নিউজ টোয়েন্টিফোরে সন্তানসহ লাইভে হাজির হয়ে শাকিবের সঙ্গে তাঁর গোপন বিয়ে ও সন্তানের কথা ফাঁস করে দেন। আর এতে অপুর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে শাকিব তাঁকে তালাক দেন। এদিকে ২০০৬ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটার আগ পর্যন্ত অপুকে না নিলে শাকিব নাকি সেই ছবি করবেন না বলে প্রযোজককে সাফ জানিয়ে দিতেন। এভাবে একসময় চাষী নজরুল ইসলামের ‘দেবদাস’ ছবি থেকেও পার্বতী চরিত্রে পূর্ণিমাকে বাদ দিয়ে অপুকে নিতে বাধ্য হন নির্মাতা।