বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সম্ভাবনা সৌর ও বায়ুশক্তিতে। সৌরশক্তি থেকে ২০৪০ সালের মধ্যে প্রায় ১৭ হাজার মেগাওয়াট এবং বায়ুশক্তি থেকে ১৩ হাজার মেগাওয়াটের বেশি পাওয়া সম্ভব। তবে এ লক্ষ্য অর্জন করতে গেলে ২০২৫ থেকে ২০৪০ সালের মধ্যে ৩৫ থেকে ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ লাগবে। প্রথম দশকেই (২০২৫ থেকে ২০৩০) লাগবে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ বা প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলার। এ সময়ে সৌর ও বায়ু খাতে সবচেয়ে বেশি খরচ হবে। এ সময়ে ৩০ শতাংশ শক্তি নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদন করা গেলে দেশের শক্তি নিরাপত্তা, পরিবেশ ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে। গতকাল রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। ‘এনডিসি ৩.০ : বাংলাদেশ কি উচ্চাকাক্সক্ষা লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে?’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
এতে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র গবেষণা সহকারী হেলেন মাশিয়েত প্রিয়তি ও গবেষণা সহকারী মেহেদী হাসান শামীম। আলোচনায় অংশ নেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম, পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. রেজওয়ান খান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সাবেক মহাপরিচালক ড. মো. আসাদুজ্জামান, বাংলাদেশ ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক ইমরান করিম, বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের পরিচালক জারিফা খাতুন, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মির্জা শওকত আলী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশ মিশনের পরিবেশ ও জ্বালানিবিষয়ক প্রোগ্রাম ম্যানেজার তানজিনা দিলশাদ প্রমুখ।
সিপিডির হিসাবে, বাংলাদেশে ২০৩০ সালে বিদ্যুৎ চাহিদা হবে ২২ হাজার ৭০২ মেগাওয়াট, ২০৩৫ সালে ২৬ হাজার ২৭৭ মেগাওয়াট ও ২০৪০ সালে ২৯ হাজার ৭৬১ মেগাওয়াট। এ চাহিদা মেটাতে নবায়নযোগ্য শক্তি খাতের অবদান বাড়াতে ২০৩০ সালে ১৮ হাজার ১৬২, ২০৩৫ সালে ২৫ হাজার ৭৫১ এবং ২০৪০ সালে ৩৫ হাজার ৭১৩ মেগাওয়াট ক্যাপাসিটি স্থাপন করতে হবে। তারা আরও জানায়, জলবিদ্যুৎ সীমিত হলেও আঞ্চলিক সহযোগিতায় কিছুটা বাড়ানো সম্ভব। এজন্য ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির উৎস হতে পারে।
পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম বলেন, লোকবল কম হওয়ায় আমরা সঠিকভাবে সব কাজ পর্যবেক্ষণ করতে পারি না। এটা আমি অস্বীকার করছি না। সবকিছু যদি মন্ত্রণালয়কে মনিটরিং করতে হয়, তাহলে সেই কাজ ধীরগতিতে আগায়। সবাইকে যার যার কাজ মনিটরিং করতে হবে। ড. রেজোয়ান খান বলেন, বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় ২ কোটি বাসা-বাড়ি আছে। প্রতিটি বাড়িতে যদি দুটি সোলার লাগানো যায় ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। তবে পলিসি ঠিক না হলে কিছুই ফলপ্রসূ হবে না। ইমরান করিম বলেন, বর্তমানে মোট বিদ্যুতের মাত্র ২ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আসে। ২০৩০ সালের মধ্যে এ হার ৩০ শতাংশে নিতে হলে ১২ থেকে ১৪ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। তানজিনা দিলশাদ বলেন, প্রতি পাঁচ বছর পরপর আমরা এনডিসি আপডেট করছি। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে আবার এনডিসি আপডেট করতে হবে। ইইউর বাংলাদেশে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ আছে। সোলার পাওয়ারে ইউরোপকে আমরা অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছি।