বরিশালের উজিরপুর উপজেলার হারতা বাজারে গুলি করে ও বোমা ফাটিয়ে ১৬টি মাছের আড়ত থেকে প্রায় কোটি টাকা লুটের ঘটনা প্রতিরোধে স্থানীয় ক্যাম্প পুলিশের গাফিলতির প্রমান মিলেছে। গ্রামবাসীর দাবি, ডাকাতীর ঘটনায় পুলিশের অসাধু সদস্যদের যোগসাজেস ছিল। দুর্বৃত্তরা ডাকাতীর পর পুলিশকে ইশারা দিয়ে পালিয়ে গেছে। যদিও এমন অভিযোগ সত্য হলে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের আরও কঠোর শাস্তি পেতে হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার হারতা মাছ বাজারের বয়স প্রায় ১০০ বছর। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একদল দুর্বৃত্ত স্পীড বোটে এসে যেভাবে লুট ও ডাকাতি করেছে তা স্থানীয়দের কাছে ফিল্মি কায়দাকেও হার মানিয়েছে। ডাকাতরা ১৬টি মাছের আড়ত প্রায় কোটি টাকা লুট করে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায়। এর আগে তারা গুলি করে এবং বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় তারা বাজারের লোকজনকে এলোপাথারী মারধর করে। গুলি বোমার শব্দে আতংকিত হয়ে হৃদযন্ত্রের ক্রীড়া বন্ধ হয়ে বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সোহরাব হোসেন ওই রাতেই মারা যায়।
স্থানীয়দের দাবি মাত্র ৩০ গজ দূরে অবস্থান করেও পুলিশ ডাকাতি প্রতিরোধে কোন ভূমিকা নেয়নি। বরং ডাকাতি শেষে দুর্বৃত্তরা পুলিশকে ইশারা দিয়ে চলে গেছে বলে দাবি করেন তারা। এ ঘটনা তদন্ত করে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন হারতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হরেন রায়।
ডাকাতির পর স্থানীয়দের তোপের মুখে ওই রাতেই হারতা পুলিশ ক্যাম্পের ১৮ সদস্যের সবাইকে পুলিশ লাইন্সে ক্লোজড করা হয়েছে। সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই মোজফ্ফরকে। ওই রাতেই তাদের স্থলাভিসিক্ত করা হয়েছে আরআরএফ’র নতুন ১৮ সদস্যকে। হারতা ক্যাম্পের নতুন ইনচার্জ এসআই দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, ওই ঘটনার পর বাজারের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
বরিশাল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন, ডাকাতি প্রতিরোধে হারতা ক্যাম্প পুলিশের ব্যর্থতার প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে। ব্যাপক তদন্তের পর দোষীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ঘটনায় পুলিশের জড়িত থাকার প্রমান পাওয়া গেলে তাকেও ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে ডাকাতীর ঘটনায় হারতা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সোহরাব বেপারীর ছেলে দুলাল বেপারী বাদী হয়ে বুধবার অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। তবে এ ঘটনায় দুপুর পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, হারতা বাজারে ডাকাতির পর পালিয়ে যাওয়ার পথে বাবুগঞ্জের আগরপুর নদীতে সন্দেহভাজন যাত্রীবাহী একটি স্পীড বোট লক্ষ্য করে গুলি করে পুলিশ। এ সময় স্পীড বোটটি দ্রুত পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তবে ওই ঘটনায় কেউ হতাহত হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেননি উজিরপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইকবাল হোসেন।
হিজলা থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হারতা বাজারে ডাকাতির পর ওয়্যারলেস বার্তায় আশপাশের সব থানা পুলিশকে সতর্ক করা হয়। হিজলা থানা পুলিশও সতর্ক ছিল। রাত ১০টার দিকে হিজলা সংলগ্ন নদী দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র উচিয়ে চলে যায় দুটি স্পীড বোট। এ সময় হিজলা পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে এক রাউন্ড গুলি করলেও তাদের গতিরোধ করতে পারেনি তারা।
উজিরপুরের শিকারপুরের বাজারের একটি সূত্র জানিয়েছে, হারতা বাজারে ডাকাতির পর সন্ধ্যা নদী হয়ে দুটি স্পীড বোট দ্রুত গতিতে বাবুগঞ্জের দিকে চলে যেতে দেখেছে।
এর আগে গত ৮ নভেম্বর জেলার হিজলা উপজেলার মেঘনা তীরবর্তী হিজলা-গৌরবদী এলাকায় ৯টি মাছ ঘাটে একই কায়দায় ডাকাতি সংঘটিত হয়। স্পীড বোটগামী ডাকাত দল দেশীয় অস্ত্রের মুখে প্রায় ২০ লাখ টাকা লুট করে ফের স্পীড বোটে পালিয়ে যায়। ওই ঘটনায়ও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
বিডি প্রতিদিন/২৩ নভেম্বর ২০১৬/হিমেল